কোরপান শাহের বাড়িতে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে আসার সময়ে তাঁকে প্রণাম করছেন কোরপানের স্ত্রী। সোমবার সুব্রত জানার তোলা ছবি।
স্বামীর খুনের ইনসাফ চাইলে কোনও প্রলোভনের কাছে মাথা নত করবেন না। এনআরএস হাসপাতালে গণপিটুনিতে নিহত কোরপান আলি শাহের স্ত্রী আরজিনাকে এই ভাবেই সতর্ক করলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর রাজ্য সম্পাদক, সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। আরজিনা বললেন, “আমাকে টাকা দিয়ে কেনা যাবে না।”
শিয়ালদহ আদালতে কোরপান খুনের মামলা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সোমবার বিকেলে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় বাণীতবলা শাহপাড়ায় কোরপানের বাড়িতে আসেন প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তিবাবু। আরজিনাকে তিনি বলেন, “সরকারি আইনজীবীর ভূমিকা এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু মামলা যত গড়াবে, কী পরিস্থিতি হবে তা বলা যায় না। তাই তোমরাও এক জন সরকারি আইনজীবী দাও। আমরাই তাঁকে জোগাড় করে দেব, তাঁর পারিশ্রমিকও আমরা দেব। তোমরা শুধু ওকালতনামায় সই করবে। রাজি আছো?” আরজিনা বলেন, “স্বামীর খুনিদের শাস্তির জন্য যা করণীয় তা-ই করব।”
বাড়ির পাশে কুলগাছের নীচে তক্তপোষে কোরপানের স্ত্রী, দুই নাবালক ছেলে এবং খুড়তুতো ভাইয়ের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল। কান্তিবাবু বসেছিলেন চেয়ারে। সংগঠনের জেলা সম্পাদক অজয় দাস-সহ বেশ কিছু নেতা হাজির ছিলেন। ভিড় করে এসেছিলেন পাড়া-পড়শি। বিষমদে মৃত্যুর ক্ষেত্রে রাজ্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেও সরকারি হাসপাতালের হস্টেলে খুন হওয়া কোরপানের ক্ষেত্রে যে কিছুই করা হয়নি, আরজিনাকে তা মনে করিয়ে দিয়ে কান্তিবাবু জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে দরখাস্ত করে ক্ষতিপূরণ এবং খুনের বিচার চাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দরখাস্ত তাঁরাই করে দেবেন। আরজিনাকে শুধু নীচে সই করতে হবে। আরজিনা জানিয়ে দেন, তিনি রাজি।
রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর তরফে ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আরজিনাকে দেওয়া হয়েছে। তা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে সঞ্চয় করে রেখে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর পরামর্শ দেন প্রবীণ নেতা। কেননা, আরজিনার সংসার খরচ চালানোর জন্য মাসে আড়াই হাজার টাকা করে পাঠাবেন বলে বেঙ্গালুরু থেকে এক জন সম্মিলনীকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন। কিন্তু ডাক্তারির ছাত্রেরা জড়িত থাকায় পুলিশ গোড়া থেকেই ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ। গত ১৬ নভেম্বর কোরপানকে বেঁধে পিটিয়ে মারা হয়। অথচ পুলিশ এখনও পর্যন্ত দু’জন ক্যান্টিনকর্মী এবং ডাক্তারির তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে। রাজ্য জুড়ে হইচই হতে থাকায় পরে এন্টালি থানার হাত থেকে তদন্তভার সরিয়ে নিয়ে লালবাজার গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কান্তিবাবুর মতে, “প্রথম দিকে স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে রাজ্য সরকার তদন্তে গড়িমসি করছিল। পরে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এটা মন্দের ভাল, কারণ পুলিশের থেকে লালবাজারের গোয়েন্দারা বেশি দক্ষ।” তবে তাঁর আশঙ্কা, অভিযুক্তের তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের ছেলেদের নাম থাকায় পরে টাকা দিয়ে মামলা তোলানোর চেষ্টা হতে পারে। আরজিনাকে তিনি বলেন, “যারা অভিযুক্ত তাদের অনেকে বড়লোকের বাড়ির ছেলের। তাদের দেওয়া কোনও প্রলোভনে যদি তুমি সরে যাও, গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।” আরজিনা তাঁকে আশ্বস্ত করেন, কোনও লোভের কাছেই তিনি মাথা নোয়াবেন না। ন্যায়বিচার আদায়ের জন্য যা করার করবেন।