তাপস কাণ্ড

তদন্তে লঘু ধারা কেন, প্রশ্ন মামলাকারীর

প্রকাশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশের অভিযোগে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি, খোদ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। কিন্তু তদন্তে নামলেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ধারায় এফআইআর করেছে কি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৭
Share:

বুধবার ভবানী ভবনে বিপ্লবকুমার চৌধুরী।—নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশের অভিযোগে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি, খোদ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। কিন্তু তদন্তে নামলেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ধারায় এফআইআর করেছে কি?

Advertisement

এ বার সেই প্রশ্ন উঠল। বুধবার সিআইডি’র তদন্তকারীদের সামনে প্রশ্ন তুললেন সেই ব্যক্তিই, যিনি হাইকোর্টে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তাপস-মামলার আবেদনকারী ওই আইনজীবী বিপ্লবকুমার চৌধুরীর অভিযোগ, শাসকদলের সাংসদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ধারা প্রয়োগ না-করায় মামলাটি লঘু হয়ে পড়েছে। বিপ্লববাবু এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, সিআইডি ধারা না-বদলালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে নালিশ জানাবেন। আদালতের কাছে চাইবেন নিরপেক্ষ তদন্তের নিশ্চয়তা।

প্রথমে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ, পরে ডিভিশন বেঞ্চ ঘুরে তাপস-মামলা নিষ্পত্তির জন্য গিয়েছিল বিচারপতি নিশীথা মাত্রের বেঞ্চে। ওই এজলাসেই মামলার ফয়সালা হয়েছে। সাংসদের উস্কানিমূলক বক্তব্যকে আদালতগ্রাহ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করে ঘটনার সিআইডি-তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আবেদনকারীর আর্জি ছিল, তদন্ত চলুক হাইকোর্টের নজরদারিতে। বিচারপতি মাত্রে অবশ্য তা মানেননি। সিআইডি-র উপরে আস্থা রেখে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, তাদের তদন্ত হবে পক্ষপাতহীন। তদন্ত চলাকালীন কোনও পক্ষের কোনও বক্তব্য থাকলে তা-ও আদালতকে জানানোর কথা রায়ে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

Advertisement

আর সেই সূত্র ধরেই বিপ্লববাবু জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ তদন্ত না-হলে ফের হাইকোর্টের শরণাপন্ন হবেন তিনি। তাপস-কাণ্ডের তদন্তে বিপ্লববাবুর বয়ান নথিভুক্ত করার জন্য সিআইডি এ দিন তাঁকে ভবানী ভবনে ডেকে পাঠিয়েছিল। সিআইডি-র অফিস থেকে বেরিয়ে বিপ্লববাবু তদন্তের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর আক্ষেপ, “আমি হতাশ। যে ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে মামলা লঘু হয়ে যেতে পারে।” উপরন্তু মূল অভিযোগকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি এফআইআরের প্রতিলিপি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন বিপ্লববাবু।

তাপসের বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় মামলা হয়েছে?

সিআইডি সূত্রের খবর: শান্তিভঙ্গে প্ররোচনা (৫০৪ ধারা), জনসাধারণের শান্তিভঙ্গ ও বিদ্রোহের লক্ষ্যে মিথ্যে কথা ও গুজব প্রচার (৫০৫ ধারা), অপরাধ সংগঠনের হুমকি (৫০৬ ধারা) ও মহিলাদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্যের (৫০৯ ধারা) অভিযোগ আনা হয়েছে সাংসদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে শুধু ৫০৫ নম্বরটিই জামিন-অযোগ্য। বাকিগুলো জামিনযোগ্য, এবং তাতে দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন বছর জেল হতে পারে। বিপ্লববাবুর দাবি, “তাপস পাল যে সব মন্তব্য করেছেন, তাতে তাঁকে অস্ত্র-আইনে ও ধর্ষণের ষড়যন্ত্রেও অভিযুক্ত করা যায়। সিআইডি তা না-করায় মামলা লঘু হয়ে যাচ্ছে।” তদন্তকারীরা কী বলেন?

সিআইডির বক্তব্য, অফিসারেরা এ দিন ঘণ্টা দুয়েক বিপ্লববাবুর সঙ্গে কথা বলেন। বয়ান রেকর্ডও করা হয়। তদন্তকারীরা এর বেশি কিছু বলেননি। অন্য দিকে বিপ্লববাবু জানান, তিনি বেশ কিছু নথি দিয়েছেন সিআইডি’কে। তাপসের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং গোয়েন্দাদের দেখানো হয়েছে। একটি ক্লিপিং অসম্পূর্ণ থাকায় তিনি পরে সেটি সিআইডি-কে দেবেন। “আমি সিআইডি-কে মামলার ধারা বদলাতে বলেছি। বলেছি মামলা লঘু না-করতে। ওরা আমার কথা শুনলে ভাল। নচেৎ আমাকে হাইকোর্টেই নালিশ জানাতে হবে।” জানিয়েছেন বিপ্লববাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন