দিনভর লাঙল তুলে ধরারই মেজাজ নবান্নে

ঘড়ির কাঁটা আড়াইটের ঘর ছুঁয়েছে কি ছোঁয়নি। অর্থ দফতরের এক কর্মী ব্যাগপত্তর গুছিয়ে, নবান্নের ফটক পেরিয়ে হুড়মুড়িয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ডে। দাদা, এখনই বেরিয়ে যাচ্ছেন? কান এঁটো করা হাসি ছড়িয়ে পড়ল ওই কর্মীর মুখে। বললেন, “কাল (বুধবার) জামাইষষ্ঠী। সরকার হাফ-ছুটি দিয়েছে। আর আজ তো বেলা গড়াতেই কেকেআর-এর সংবর্ধনায় সরকারই ইডেনমুখো। সকলেই ছুটির মেজাজে। তাই বেরিয়ে পড়লাম। থেকে আর হবেটা কী!”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০২:৫৬
Share:

ঘড়ির কাঁটা আড়াইটের ঘর ছুঁয়েছে কি ছোঁয়নি। অর্থ দফতরের এক কর্মী ব্যাগপত্তর গুছিয়ে, নবান্নের ফটক পেরিয়ে হুড়মুড়িয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ডে।

Advertisement

দাদা, এখনই বেরিয়ে যাচ্ছেন?

কান এঁটো করা হাসি ছড়িয়ে পড়ল ওই কর্মীর মুখে। বললেন, “কাল (বুধবার) জামাইষষ্ঠী। সরকার হাফ-ছুটি দিয়েছে। আর আজ তো বেলা গড়াতেই কেকেআর-এর সংবর্ধনায় সরকারই ইডেনমুখো। সকলেই ছুটির মেজাজে। তাই বেরিয়ে পড়লাম। থেকে আর হবেটা কী!”

Advertisement

মঙ্গলবার গঙ্গার পূর্ব পাড়ের ইডেন গার্ডেন্সে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলার শাহরুখ খানের যুগলবন্দিতে সংবর্ধনা আর বিনোদনের জম্পেশ ককটেল চলছে, পশ্চিম পাড়ের নবান্নে তখন শিকেয় উঠেছে কর্মসংস্কৃতি। অনেক সরকারি কর্মী এ দিন হাজিরা খাতায় সই করেই সোজা চলে যান ইডেনে। যে-সব কর্মী অফিসে ছিলেন, তাঁরাও পুরোপুরি ছুটির মেজাজে। সরকারি উদ্যোগে ওই ক্রিকেটদলকে সংবর্ধনা দেওয়া উচিত কি না, ইডেনে ঢুকতে গিয়ে পুলিশের লাঠির ঘায়ে কত জন জখম হলেন তা-ই নিয়ে টিফিনের আগে পর্যন্ত চলল চায়ের কাপে তুফান। হাসিঠাট্টার ফোড়ন। তার পরে ব্যাগ গুছিয়ে গুটি গুটি পায়ে বাড়ির দিকে রওনা।

আড়াইটেতেই অর্থ দফতরের যে-কর্মীটি বাড়ি ফেরার পথ ধরেছিলেন, বেলা ৩টের পরে নবান্নের ক্যান্টিন দেখার পরে মালুম হল, ছুটির মেজাজ কথাটায় তিনি কিছুই বাড়িয়ে বলেননি। অন্যান্য দিন ক্যান্টিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরগরম থাকে। এ দিন দুপুর থেকেই সেই ক্যান্টিন কার্যত ভাঙা-হাট। ক্যান্টিনের এক কর্মীর কথায়, “আগে থেকেই জানতাম, আজ তেমন ভিড় হবে না। তাই খাবারও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম আনা হয়েছিল।”

আইপিএল জয়ী কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমকে এ দিন ইডেনে রাজ্য সরকার এবং সিএবি-র পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার অনুষ্ঠান শুরু হয় ১২টায়। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশেষ বিমানে সোমবার রাতেই কলকাতায় ফিরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এ দিন তিনি নবান্নমুখো হননি। বেলা দেড়টার পরে নবান্ন ছেড়ে যান মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার কিছু পরেই চাউর হয়ে যায়, জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে আজ, বুধবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেই আনন্দে ২টোর পর থেকে নবান্ন ছেড়ে দলে দলে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন বিভিন্ন দফতরের কর্মীরা। বিকেল ৪টের পরে নবান্ন কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়ে। পুলিশ ছাড়া আর বিশেষ কাউকে দেখা যায়নি। পরে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, আজ, বুধবার জামাইষষ্ঠীতে অর্ধদিবস ছুটি।

মঙ্গলবার শুরুতে কিন্তু অন্যান্য দিনের মতোই সরগরম ছিল নবান্ন। যে-সব অফিসারের ঘরে টিভি রয়েছে, তাঁদের ঘরে গিয়ে অনেকেই টিভি-র সামনে বসে পড়েন। অনেক কর্মী প্রেস কর্নারের টিভি-তে চোখ রাখেন। বিভিন্ন দফতরের ঘরে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে আলোচনা: শাহরুখ কখন আসছেন, কেকেআর কী কী উপহার পাচ্ছে, গত বারের মতো এ বারেও সোনার হার দেওয়া হবে কি না। এর মধ্যেই কৃষি দফতরের এক কর্মীর তির্যক মন্তব্য, “কর্মীদের ডিএ না-দিয়ে সরকার উৎসব করছে!”

নবান্নে পুলিশের মধ্যেও ব্যস্ততার লেশমাত্র ছিল না। এক পুলিশকর্মী বলেন, “আজ তো মুখ্যমন্ত্রী নেই। অন্য মন্ত্রীরাও কেউই আসেননি। পদস্থ আমলারা কেউ কেউ এলেও কিছু ক্ষণ থেকে বেশির ভাগই মাঠে চলে গিয়েছেন। তাই চাপ কম। আমরাও খানিকটা হাল্কা মেজাজে আর কি!” বেলা ১টা থেকে নবান্ন থানার টিভি-র সামনে তাবড় অফিসারদের ভিড়ে পুলিশকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ইডেনে হাজির থাকতে না-পারুন, পর্দায় শাহরুখ এবং কেকেআরের ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দেখতে তাঁরাও ব্যস্ত।

তবে নবান্নের অন্য সব জায়গায় পুলিশকর্মীরা ঢিলেঢালা মেজাজে থাকলেও ওই ভবনেরই ১৩ এবং ১৪তলায় মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের দফতরে তার রেশ পড়েনি। সেখানে ভিআইপি-রা না-থাকলেও নিরাপত্তা ছিল টানটান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন