দীর্ঘ জেরার পরে রাতেই ধৃত জেনাইটিস-মালিক, খুশি সুদীপ্ত

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে এ বার জেনাইটিস গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক শান্তনু ঘোষকে নিজেদের হেফাজতে নিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আজ, বুধবার তাঁকে আদালতে তোলার তোড়জোড় চলছে। ইডি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিট নাগাদ জেনাইটিস-প্রধানকে তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকে ইডি-র দফতরে। বেশি রাত পর্যন্ত জেরা করার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০৩:৪৯
Share:

ইডি-র দফতরে শান্তনু ঘোষ(বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে এ বার জেনাইটিস গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক শান্তনু ঘোষকে নিজেদের হেফাজতে নিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আজ, বুধবার তাঁকে আদালতে তোলার তোড়জোড় চলছে। ইডি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিট নাগাদ জেনাইটিস-প্রধানকে তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকে ইডি-র দফতরে। বেশি রাত পর্যন্ত জেরা করার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

একটি সূত্রের খবর, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন সিবিআই-কে পাঠানো চিঠিতে অভিযোগ করেন, সারদার ভরাডুবির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের মধ্যে শান্তনুও রয়েছেন। অভিযোগ, শান্তনুর সঙ্গে সুদীপ্তের কয়েকশো কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। একটি চুক্তি হয় মোটরবাইক কারখানা কেনার জন্য। একটি টিভি চ্যানেল কেনার ব্যাপারেও পৃথক চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সুদীপ্ত সেই সব চুক্তির ব্যাপারে যে-তথ্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে শান্তনুর বক্তব্য মিলছে না। গত সপ্তাহেই জেনাইটিস-প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। বড় ধরনের অসঙ্গতি থাকায় ইডি এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করে। এ দিন সকাল ৯টা থেকে রবীন্দ্র সদনের কাছে শান্তনুর অফিসে এবং বালিগঞ্জের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সিবিআই অফিসারদের জেরার পরে সুদীপ্ত এ দিন বলেন, “শান্তনুর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ায় আমি খুশি। আমি আরও অনেক লোকের নাম বলেছি।”

তদন্তে নেমে ইডি জেনেছে, হুগলিতে শান্তনুর গ্লোবাল অটোমোবাইল নামে মোটরবাইক তৈরির যে-সংস্থা ছিল, তা কিনতে চান সুদীপ্ত। তখন ওই সংস্থা লোকসানে চলছিল। তদন্তকারী অফিসারদের প্রশ্ন, লোকসানে চলা সংস্থাটি সুদীপ্ত কিনেছিলেন কেন? জেরার মুখে সুদীপ্ত সিবিআই-কে জানান, ওই সংস্থায় বছরে ৫৫ হাজার মোটরবাইক তৈরি হতে পারে বলে শান্তনু দাবি করেন। ওই সংস্থার জন্য ২০০ কোটি টাকা চান তিনি। পরে ১৪০ কোটি টাকায় রফা হয়। সুদীপ্তের বয়ান অনুযায়ী প্রথমে ২২ কোটি টাকা দেওয়ার পরে তিনি বাকি টাকা তিন বছরে শান্তনুকে দেবেন বলে জানান। চুক্তিপত্র তৈরির সময় সুদীপ্ত আড়াই কোটি টাকা দেন শান্তনুকে। ব্যাঙ্কের পাওনা ২৯ কোটি টাকাও মিটিয়ে দেন। পরে সেই চুক্তি বাতিল করতে চান সুদীপ্ত। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

মোটরবাইক কারখানা নিয়ে সুদীপ্তের মধ্যে দ্বিধা থাকলেও টিভি চ্যানেল কেনার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট উৎসাহী ছিলেন। তাই শান্তনুর মালিকানাধীন একটি টিভি চ্যানেল কেনার সময় শান্তনু যখন ২৪ কোটি টাকা দাবি করেন, তা নিয়ে আর দরদাম করেননি সুদীপ্ত। এমনকী এই চ্যানেলের জন্য ব্যাঙ্কের বকেয়া ছ’কোটি টাকাও মিটিয়ে দেন তিনি।

এ দিনই সারদা কমিশনে হাজির হয়ে সেবি-র প্রতিনিধিরা জানান, র্যামেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সংস্থা আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা তুলেছিল। কিন্তু সারদা সংস্থার লগ্নিকারীদের মতো তাদের আমানতকারীরাও এখনও টাকা ফেরত পাননি। বাজার থেকে টাকা তোলার ব্যাপরে ওই সংস্থা সেবি-র নির্দেশ মেনেছিল কি না, হলফনামা দিয়ে তা জানানোর জন্য সেবি-কে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

একই সঙ্গে এ দিন কমিশনে ডাকা হয়েছিল কোম্পানি অব রেজিস্ট্রার (আরওসি)-এর প্রতিনিধিকেও। ২০০৮ সালে চালু হওয়ার পর থেকে আরওসি-র শর্তাবলি সংস্থাটি মেনেছে কি না, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে আরওসি-কে। রাজ্য সরকারের যে-দফতর ওই সব কোম্পানির কাজকর্ম দেখে, সেই ফিনান্স (রেজিস্ট্রেশন)-কেও একই ব্যাপারে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে।

র‌্যামেল সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন ৩৩ জন আমানতকারী টাকা ফেরতের জন্য সারদা কমিশনে আবেদন জানিয়েছিলেন। কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন জানান, আমানতকারীর বক্তব্য শুনে আগেই র্যামেল সংস্থার কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছিল। টাকা ফেরতের কথা তুলতেই তাঁরা জানান, সম্পত্তি বিক্রি করে তাঁরা টাকা ফেরত দিতে চান। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা করা যাচ্ছে না। তার পরে সংস্থাটিকে আদালতের কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়। শ্যামলবাবু জানান, ১ জুলাইয়ের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে। ২ জুলাই ফের ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষ, সেবি, আরওসি এবং সরকারি প্রতিনিধিদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন