দুর্ঘটনা ঘটতে পারে আসিফের, আশঙ্কা স্ত্রীর

সারদা কাণ্ডে তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। অভিযোগ উঠেছে, সেই আসিফ খানকেই রাতে ঝাড়খণ্ড সীমানার কাছে ফাঁকা রাস্তায় পুলিশ ভ্যানে বসিয়ে রেখে ঘণ্টাদুয়েক বেপাত্তা ছিল পুলিশ। অভিযোগ করেছেন আসিফের স্ত্রী তবসসুম। আর এই ঘটনার মধ্যে তিনি স্বামী আসিফকে খুনের ছকই দেখছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর নামে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন এক সময় মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ এই নেতা।

Advertisement

সুশান্ত বণিক ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে আসিফ খানের স্ত্রী। শনিবার। ছবি:ওমপ্রকাশ সিংহ

সারদা কাণ্ডে তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। অভিযোগ উঠেছে, সেই আসিফ খানকেই রাতে ঝাড়খণ্ড সীমানার কাছে ফাঁকা রাস্তায় পুলিশ ভ্যানে বসিয়ে রেখে ঘণ্টাদুয়েক বেপাত্তা ছিল পুলিশ। অভিযোগ করেছেন আসিফের স্ত্রী তবসসুম। আর এই ঘটনার মধ্যে তিনি স্বামী আসিফকে খুনের ছকই দেখছেন তিনি।

Advertisement

ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর নামে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন এক সময় মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ এই নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডাকাতরানি বলেছেন। মুকুলের পরে সিবিআই ববি হাকিমকে ডাকবে এই ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন। শনিবার দাবি করেছেন, মুকুলপুত্র শুভ্রাংশুও ডাক পাবেন।

আসিফের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্য, সমানে প্রকাশ্যে এ সব কথা বলার ফলে শাসকদলের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছেন তিনি। এর আগে সারদা কাণ্ডে ধৃত তথা আর এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী কুণাল ঘোষও একাধিক বার প্রাণের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এ দিন একই পথে হাঁটলেন আসিফ-পত্নী তবসসুম মাগরাইয়াও। শুক্রবার রাতে আসিফকে রাস্তায় পুলিশ ভ্যানে বসিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যেখানে-সেখানে ওঁকে একা দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এই সব এলাকা ভাল নয়। যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” এক ধাপ এগিয়ে তাঁদের আইনজীবী লোকেশ শর্মা বলেন, “কোনও ভারী গাড়ি এসে ওঁকে মেরে দিতে পারে। তখন সেটাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেবে পুলিশ।” এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

শুধু ঝাড়খণ্ড সীমানাতেই নয়, তবসসুমদের অভিযোগ, শুক্রবার দুপুরেও কুলটির নিউ রোড এলাকায় নিয়ে গিয়েও আসিফকে কয়েক ঘণ্টা একই ভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখে পুলিশ। পরে তাঁকে আসানসোল দক্ষিণ থানায় ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল অবশ্য দাবি করেন, “তদন্তের জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই করা হচ্ছে। তার বেশি কিছু নয়।” এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষের দাবি, “আসিফ খানের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্তকে পুলিশ একা ছেড়ে দেবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

আসিফকে কোর্ট লকআপে রাখার ক্ষেত্রেও বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভিড় এড়াতে এ দিন সকাল পৌনে ৮টার আগেই আসিফকে আসানসোল এসিজেএম আদালতের কোর্ট লকআপে নিয়ে আসা হয়। গোটা চত্বরে পুলিশি কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আসিফের এক ভাই লকআপে খাবার দিতে গেলে এক পুলিশকর্মী তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। সেই সময়ে আসিফকে লকআপ থেকেই ‘বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, আমার কাউকে ভয় নেই’ বলে চিৎকার করতে শোনা যায়। পরে ওই পুলিশকর্মী ক্ষমা চেয়ে নেন। আসিফের অন্যতম আইনজীবী মুনির বেগের অভিযোগ, সকালে কোনও চালান ছাড়াই আসিফকে কোর্ট লকআপে ঢোকানো হয়েছে। তদন্তও সঠিক পদ্ধতিতে হচ্ছে না। যদিও সব অভিযোগই পুলিশ অস্বীকার করেছে।

সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মামলায় আসিফকে এ বার আসানসোলে আনা হয়েছে। তাঁর সওয়ালে লোকেশ শর্মা দাবি করেন, “আসিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের জন্য তিনি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু যিনি টাকা দিয়েছেন, তিনি কোথাও ফর্ম জমা দেননি!” তাঁর অভিযোগ, আসিফের সব অ্যাকাউন্ট পুলিশ ‘সিজ’ করে দিলেও তাঁকে কুলটি, নিমচা-সহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হচ্ছে। আসানসোল কোর্টের তৃতীয় দায়রা বিচারক সুপ্রিয়া খান ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আসিফকে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন