দোলার মিছিল-তদন্তে থানায় তলব বিডিওকেই

বাবুল সুপ্রিয়র পর এ বার বারাবনির বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাস। ১২ এপ্রিল রানিগঞ্জে রোড-শোয়ে তৃণমূল নেতা সেনাপতির মণ্ডলের সঙ্গে বচসায় জড়ান আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বাবুল। তার পরই তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর নামে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। থানায় ডেকে দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় তাঁকে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

বাবুল সুপ্রিয়র পর এ বার বারাবনির বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাস।

Advertisement

১২ এপ্রিল রানিগঞ্জে রোড-শোয়ে তৃণমূল নেতা সেনাপতির মণ্ডলের সঙ্গে বচসায় জড়ান আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বাবুল। তার পরই তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর নামে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। থানায় ডেকে দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় তাঁকে। আজ, মঙ্গলবার বাবুলের আত্মসমর্পণ করার কথা। এর মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, মোটরবাইক মিছিল নিয়ে বেরিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন। তার ভিত্তিতে অভিযোগ করেছিলেন বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাস। এ বার উজ্জ্বলবাবুকেও জেরা করতে চাইছে স্থানীয় পুলিশ! সোমবার নোটিস পাঠিয়ে বারাবনির থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) হারাধন গোস্বামী স্থানীয় বিডিও তথা এগ্জিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল বিশ্বাসকে ২৪ এপ্রিল, আগামী বৃহস্পতিবার থানায় তাঁর সামনে হাজির হতে বলেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্লকে নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করার দায়িত্ব যাঁর হাতে, পুলিশ তাঁকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাওয়ায় বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক কর্তারা স্তম্ভিত। জেলার এক প্রশাসনিক কর্তার প্রশ্ন, “এক জন এসআই কী ভাবে এক জন ম্যাজিস্ট্রেটকে জেরার জন্য ডেকে পাঠান?” ওই কর্তার বক্তব্য, “ব্লকস্তরে বিডিও-ই হচ্ছেন ভোট-পরিচালনার শীর্ষ অফিসার। তিনি যে রিপোর্ট কমিশনকে পাঠিয়েছেন, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, উল্টে এক জন এসআই তাঁকেই জেরা করতে চাইছেন!”

Advertisement

আসানসোলের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল অবশ্য বলেন, “এ ব্যাপারে কিছু জানি না। খোঁজ নিতে হবে।” সিইও দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, “বর্ধমানের জেলাশাসক রিপোর্ট পাঠালে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।”

নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, গত শনিবার, ১৯ এপ্রিল বারাবনির পাঁচগেছিয়া এলাকায় দোলাদেবীর সমর্থনে কয়েকশো মোটরবাইকের একটি মিছিল হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বর্ধমান জেলা প্রশাসন আগেই বাইক মিছিল নিষিদ্ধ করেছিল। তাই দোলা সেনের মিছিলে বাইক-বাহিনীর অভিযোগ হাতে পেয়ে বিডিওকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলে নির্বাচন কমিশন। সেই রিপোর্ট দেওয়ার পরেই বিপত্তি। কমিশন সূত্রে খবর, রিপোর্টে বিডিও লেখেন, মিছিলে অনেক বাইক ছিল এবং তার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। ফলে আচরণ বিধি ভঙ্গ হয়েছে। সেই রিপোর্ট দেখে বিডিওকে পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেয় কমিশন। সেই মতো উজ্জ্বলবাবু রবিবার বারাবনি থানায় এফআইআর দায়ের করেন, যার কেস নম্বর ৭৭/২০১৪। তার ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নম্বর ধারায় মামলাও হয়। সরকারি নির্দেশ অমান্য করার জন্য এই ধরনের মামলায় এক থেকে ছ’মাস পর্যন্ত জেল এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। সেই মামলার পর সোমবার বিডিওকে জেরার নোটিস ধরায় পুলিশ।

বিডিওকে কেন জেরা করতে চায় বারাবনি থানার পুলিশ? এর সরাসরি জবাব মেলেনি। থানার একটি সূত্র বলছে, তদন্তকারী অফিসার তদন্তের স্বার্থে যে কাউকে ডেকে পাঠাতে পারেন। এই কথা শোনার পরে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক আটকে রাখা নিয়ে রানিগঞ্জের বিডিও যখন অভিযোগ করেছিলেন, তখন কিন্তু তাঁকে ডেকে পাঠায়নি সংশ্লিষ্ট থানা। এমনকী, যে তৃণমূল নেতার অভিযোগে মামলা হয়, সেই সেনাপতি মণ্ডলকেও ডাকা হয়নি। ক্ষুব্ধ প্রশাসনিক কর্তাদের প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশে এফআইআরের পর বিডিওকে জেরার জন্য ডাকা হচ্ছে কেন? যাঁরা আচরণ বিধি ভাঙলেন, তাঁদেরই তো জেরার মুখে পড়ার কথা। কমিশনের এক কর্তা বলেন, “বিডিওর অভিযোগের পর যে মামলা হয়, তার ভিত্তিতে আচরণবিধি ভঙ্গকারী দোলা সেনকেই জেরার জন্য ডাকার কথা। পুলিশ অভিযোগকারীকে কেন ডেকেছে, তা স্পষ্ট নয়।”

এর সঙ্গে অনেকে হাবরা কাণ্ডেরও তুলনা করেছেন। সেখানে স্থানীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করায় পুলিশি তদন্তের মুখে পড়েন বিডিও দীনবন্ধু গায়েন। ভিএস সম্পতের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ ৬ এপ্রিল কলকাতায় এসে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককে এ নিয়ে কড়া কথা শুনিয়ে যান। পরের দিনই সরানো হয় ওই জেলাশাসক সঞ্জয় বনসলকে। এর পরেও বারাবনির ঘটনায় বিস্মিত প্রশাসনিক কর্তারা।

এই মামলায় দোলাদেবীকেও নোটিস পাঠানো হয়েছে। জবাবে তিনি জানিয়েছেন, বারাবনির ওই রাস্তা ছিল অপরিসর। সেখানে মিছিল শুরুর পর পথচলতি মানুষ জড়ো হন। বাইরের বাইকও সেই মিছিলে ঢুকে পড়ে। তিনি জানান, কমিশনের সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন এবং চলবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন