দক্ষিণ কড়চা

নাটক মানেই কেবল, মঞ্চে ‘পারফরম্যান্স’ নয়। তার প্রস্তুতি মানেই কেবল নাটকের মহড়াও নয়। অভিনয়ের আগে প্রয়োজন যথাযথ মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতির। অভিনেতা-অভিনেত্রী মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ করলেই মঞ্চে জীবন্ত হয়ে ওঠে তাঁদের অভিনীত নাটক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:১০
Share:

মনের গভীরে মহড়া

Advertisement

নাটক মানেই কেবল, মঞ্চে ‘পারফরম্যান্স’ নয়। তার প্রস্তুতি মানেই কেবল নাটকের মহড়াও নয়। অভিনয়ের আগে প্রয়োজন যথাযথ মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতির। অভিনেতা-অভিনেত্রী মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ করলেই মঞ্চে জীবন্ত হয়ে ওঠে তাঁদের অভিনীত নাটক। অভিনেতারা ক্রমাগত অভিনয়ের মধ্যে দিয়েই এই মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতির কৌশল রপ্ত করেন। কিন্তু যাঁরা অভিনয় শিখতে চান তাঁদের অনেক সময়েই এই মনস্তত্ত্বের বিষয়ে তেমন ধারণা থাকে না। অভিনয় শেখার কর্মশালাতেও অভিনয় নিয়ে অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এই বৌদ্ধিক ও মনস্তাত্ত্বিক অনুশীলনের ব্যাপারে হয়তো ততটা সচেতন করা হয়না অনেকক্ষেত্রেই। এই কথা ভেবেই নাট্য সংস্থা ‘অস্ময়ু’ আয়োজন করেছিল একটি নাট্য কর্মশালার, যার মূল বিষয়বস্তু ছিল পারফর্মারের ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক আচরণ। নভেম্বরের শুরুতে কলকাতার গড়ফায় এই কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন একঝাঁক কলেজপড়ুয়া তরুণ-তরুণী। তাঁদের অনেকে নাটকে আগে কোনওদিন কোনও ধরনের নাটকেই অভিনয় করেননি। হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক কলেজের পড়ুয়ারা ছিলেন কর্মশালায়। ‘অস্ময়ু’র এই কর্মশালা পরিচালনা করেন সন্মিত্র ভৌমিক। আদতে উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটের বাসিন্দা সন্মিত্র সিকিমের গ্যাংটকে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার শাখায় প্রশিক্ষণ নেন। কর্মশালায় তুলে ধরা হয় নাটক অভিনয়ের বিভিন্ন দিক। তার মধ্যে ছিল কাউন্সেলিং, আলোর বিন্যাসের প্রশিক্ষণ, মঞ্চ ও মুখোশ তৈরি সবকিছুই। তবে অন্যতম আকর্ষণ ছিল অভিনয় শেখার পর্বটি। যেখানে কর্মশালায় যোগদানকারী সকলে ও প্রশিক্ষকেরা চলে গিয়েছিলেন যাদবপুর রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে বাস্তব জীবনযাত্রার ছবিটা পর্যবেক্ষণ করাও ছিল কর্মশালার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সব পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়েই গড়ে ওঠে নাট্য-মনস্তত্ত্ব, মত ‘অস্ময়ু’-র প্রশিক্ষকদের। সেই মনস্তত্ত্বই সাহায্য করবে ভবিষ্যৎ-অভিনেতাদের।

Advertisement

বাউল মনা

‘দেশ বিদেশের মানুষগো যাও এ বীরভূম ঘুরে’-প্রখ্যাত বাউল পূর্ণচন্দ্র দাসের গাওয়া জনপ্রিয় গানটির কথা মনে আছে। কিংবা স্বপ্না চক্রবর্তীর গাওয়া বিখ্যাত গান ‘ও ননদি আর দু মুঠো চাল ফেলে দে হাড়িতে’? এই সব প্রখ্যাত গানের স্রষ্টা বীরভূমের কবি-গীতিকার আশানন্দন চট্টরাজ। লোকসঙ্গীত থেকে বাউল, নাগরিক জীবন থেকে শ্রমজীবী মানুষের ভাললাগা অজস্র গান লিখে তিনি এখনও জনপ্রিয়। সত্যজিৎ রায়, লীলা মজুমদার-সহ বহু বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আশানন্দনের। হেতমপুরের প্রয়াত সেই বাউলমনা গ্রামীণ কবির কাজকে সম্মান জনাতে তাঁর নামেই শুরু হয়েছে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। আয়োজক পশ্চিমবঙ্গ লেখক শিল্পী সঙ্ঘ। রবিবার হেতমপুর রাজবাড়িতে আয়োজিত হয় অনুষ্ঠান ও কবি সম্মেলন।

নট সম্রাট

‘‘তখনকার দিনে যাত্রা ভদ্রসমাজের অপাঙক্তেয়৷ আমার নাম দিয়েছিল যাত্রায় ‘স্বপনবাবু’, ‘কুমার’ অনেক পরে এল৷ ’’— এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতি-যাত্রা ‘নটসম্রাট’ স্বপনকুমারের৷ বাংলা যাত্রার ইতিহাসে ১৯৬০-৮০ পর্বে যিনি নিজেই এনেছিলেন এক যুগান্তর৷ শহর-গ্রামের বিভাজন ভেঙে জনচারিতার বিপুল প্রসার, প্রচার ও বিজ্ঞাপনের অভিনব কৌশল— সব কিছুতেই পরিবর্তনের প্রবাহে জড়িয়ে আছে স্বপনকুমারের নাম৷ কিন্তু, তাঁর কোনও যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি৷ তাঁর ভাগ্নে, অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় স্বপনকুমারের কিছু প্রবন্ধ আর সাক্ষাৎকার নিয়ে থিমা থেকে ‘যাত্রায় স্বপনকুমার’ নামে একটি সংকলন করেছিলেন কিছু আগে৷ এ বার স্বপনকুমারের ৮৫ বছর পূর্তিতে সেই সংকলনকে পরিবর্ধিত করার কাজ করছেন সুরজিৎ৷

ব্রাহ্ম সম্মেলন

‘মানুষের ধর্ম’ নিয়ে সভা। সে সভায় রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন। আর এ সব নিয়েই ১২৫তম ব্রাহ্ম সম্মেলন হল শান্তিনিকেতনে। সম্মেলনের আয়োজক কমিটির পক্ষে সম্পাদক তপোব্রত ব্রহ্মচারী জানান, সম্মেলনের এ বারের থিম ছিল ‘মানুষের ধর্ম’। ‘রবীন্দ্রনাথের ওপর রামমোহনের প্রভাব’ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ছিল রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য। বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনের শিক্ষক সুমিত বসুর নৃত্য নির্দেশনায় নৃত্যনাট্য ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ মঞ্চস্থ হয় এ বারের অনুষ্ঠানে। ছিল রাগ-এর উৎস নিয়ে সঙ্গীতের অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথের জীবন কাল নিয়েও তথ্যচিত্র প্রদর্শন হয়েছে তিন দিনের ওই সম্মেলনে। ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সুজিতকুমার বসু।

রঙিন বাঁশি

নগরপ্রান্ত ছাড়িয়ে বাংলার গাঁ-গঞ্জ জন্মলগ্ন থেকেই ছুঁয়ে ছিলেন ওঁরা। সঙ্গীত চয়নে, সুরের বিস্তারে, যন্ত্রের ব্যবহারে। গানের দল ‘রঙিন’-এর প্রথম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানেও তার ব্যত্যয় হল না। গোরভাঙার গোলাম ফকিরের দলের বাঁশুরিয়া মোহন পাত্র আর ঢোলকিয়া সোনাতন দাসকে তাঁরা হাজির করলেন শনিবার সন্ধ্যায় শিশির মঞ্চের অনুষ্ঠানে। নদিয়ার আসাননগরের সোনাতন এমনিতে জেলা সদর আদালতে মাজন বিক্রি করেন। মোহনের বাড়িও বাঁকুড়ার প্রান্তিক এলাকায়, সারেঙ্গা ব্লকের সারসকোলে। সুদীপ, শঙ্খমালা, শ্রুতি, মধুমিতার চর্চিত গায়নের পাশে তাঁরা অন্য হিল্লোল তুলে দিয়ে গেলেন যেন। সাক্ষী রইলেন অনুষ্ঠানের আর দুই কুশীলব— কবি জয় গোস্বামী ও নাট্যকর্মী রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী।

ফুসমন্তর

ক্লাস ফাইভের পরীক্ষায় আঁকায় ফেল করায় বাড়িতে প্রচণ্ড বকাবকি আর কয়েক ঘা জুটেছিল। জেদ ধরে নিয়েছিল সেই ছোট্ট শিশু। মন দিয়ে আঁকা শিখে ক্লাসে প্রতি বার সর্বোচ্চ নম্বর পেতে আর অসুবিধে হয়নি তার। উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতার কলেজ আর ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসে সদ্য তরুণ ছেলেটার মাথায় প্রবল ভাবে ঢুকেও পড়ে ছবি আঁকা শেখার ভূতটা। তত দিনে বাবা অবসর নিয়েছেন। আঁকার সরঞ্জাম আর নানা বিদেশি বইয়ের প্রচুর দাম। ভরসা টিউশনের সামান্য টাকা। আঁকার কাজ থামেনি। আর সুযোগ পেলেই কলকাতার নামী শিল্পীদের প্রদর্শনীতে ঢুকে দু’চোখ ভরে নানা মাধ্যম আর ভাবনার ছবি দেখা। এ ভাবেই এক দিন অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে এক প্রদর্শনীতে চোখের সামনেই পেলেন স্বপ্নের শিল্পীকে— মকবুল ফিদা হুসেন! প্রশ্নটাও করে ফেললেন, ‘শিল্পী হতে গেলে কি কোনও প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা আবশ্যিক?’ সস্নেহে এল জবাব, ‘কাকে জিজ্ঞাসা করছো? আমারই কি আর এ সব আছে!’ আর থামতে হয়নি কোনও দিন। পুরোপুরি ছবি আঁকায় ডুব দিয়েছিলেন বর্তমানে মেদিনীপুর সদর ব্লকের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিকের পদে থাকা অপূর্ব চক্রবর্তী। ওই পরিচয়ের পরিবর্তে নিজেকে যিনি শিল্পী হিসেবে ভাবতেই বেশি ভালবাসেন। ১০টা-৫টা চাকরির পরে বাড়ি ফিরে রাত জেগে ছবি এঁকে যান। প্রাতিষ্ঠানিক তকমা ছাড়াই যাঁর আঁকা শেখা। প্রেরণা সেই হুসেন আর যোগেন চৌধুরী। মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনগরের দু’কামরার ভাড়াবাড়িতে শোবার খাট ছাড়া সবর্ত্র ছবি আর আঁকার নানা সরঞ্জাম। আঁকার পাশাপাশি রয়েছে কবিতা লেখা আর বেহালা বাজানোও। গত ২৮-২৯ নভেম্বর মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ লাউঞ্জে শেষ হল অপূর্ববাবুরর ছবির একক প্রদর্শনী। মেঘ তাঁর প্রিয় বিষয়। মোট ৭০টি ছবির ওই প্রদর্শনীর নাম ছিল তাই ‘মেঘবালিকা’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন