দক্ষিণের কড়চা

দেবদূত তারা ঠিকই, কিন্তু তাদের জীবনে কোনও রূপকথা নেই। চায়ের দোকানে, বিড়ির কারখানায়, খবরের কাগজ-বেচা সাইকেলে, গোরুর পালের সঙ্গে, ফুটপথে পালিশের বুরুশ হাতে তাদের আমরা দেখি রোজ। সেই শিশুদের জীবন লিনোকাটে ধরে রাখতে শুরু করেন চিত্তপ্রসাদ, ১৯৫১-র শেষের দিকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৫ ০১:১১
Share:

রূপকথা নেই

Advertisement

অপরূপ চিত্ত

দেবদূত তারা ঠিকই, কিন্তু তাদের জীবনে কোনও রূপকথা নেই। চায়ের দোকানে, বিড়ির কারখানায়, খবরের কাগজ-বেচা সাইকেলে, গোরুর পালের সঙ্গে, ফুটপথে পালিশের বুরুশ হাতে তাদের আমরা দেখি রোজ। সেই শিশুদের জীবন লিনোকাটে ধরে রাখতে শুরু করেন চিত্তপ্রসাদ, ১৯৫১-র শেষের দিকে। সে বছরই মে মাসের মধ্যে শেষ করেন ১২টি ছবি। তখন এর নাম দিয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়ান চাইল্ড ইন সার্চ অব হিউম্যান সোসাইটি’। পরের বছর এর সঙ্গে আরও কয়েকটি ছবি যোগ করে নাম দেন ‘এঞ্জেলস উইদাউট ফেয়ারি টেলস’। এই চিত্রমালার সতেরোটি ছবি প্রথম ছাপা হয় জার্মানির ‘টেগ বাক’ পত্রিকায়, ১৯৫২-র ডিসেম্বর সংখ্যায়। লিনোকাটে চিত্তপ্রসাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতির সূচনা তখনই।

Advertisement

১৯৬৯-এ আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ উপলক্ষে ড্যানিশ ইউনিসেফ -এর উদ্যোগে অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ‘এঞ্জেলস উইদাউট ফেয়ারি টেলস’। সে অ্যালবামে ছিল বাইশটি ছবি। এই সিরিজে আরও অনেক ছবি তৈরি করেছিলেন চিত্তপ্রসাদ, জানা যায় নানা সূত্রে। তবে সে সব ছবি হারিয়ে গিয়েছে আজ। আশার কথা, দুর্লভ অ্যালবাম পুনঃপ্রকাশিত হল বহরমপুরের শিল্পী কৃষ্ণজি সেনগুপ্তের ভাষ্য-সহ, কৃষ্ণনগরের ধ্রুবপদ প্রকাশনী থেকে, বাংলা-ইংরেজি দ্বিভাষিক সংস্করণে। নাম দেবশিশুদের অ-রূপকথা। চিত্তপ্রসাদের শতবর্ষে উল্লেখযোগ্য আয়োজন, কোন সন্দেহ নেই।

পরবের দেশে

নানা প্রয়োজনে নানা দেবতা। কৃষি দেবতারা হল শিব (বুড়হাবাবা), ডেনি ঠাকুরাইন, টুসু, রোহিন, করম ইত্যাদি। বনদেবতা বাঘুত বাঘ তাড়ায়, হাতিখেদা হাতির উপদ্রব থেকে রক্ষা করে। রয়েছে বড়াসিনি, চাপাইসিনি, তারা বন্যপ্রাণীর হাত থেকে বাঁচায়, আবার বনজ সম্পদও রক্ষা করে। প্রকৃতিকে শান্ত রাখতে রয়েছে শিমইল থান, গড়া থান, ঠাকুর থানের মতো গ্রাম্য দেবতারা। ব্রত পার্বণ অনুসারেও দেবতাদের নামকরণ করা হয়। পূর্বপুরুষ দেবতাও রয়েছে। এমনকী রয়েছে অপদেবতারাও। কুদরা যার ঘরে বাস করে, তাঁর নাকি ধনসম্পদের অভাব থাকে না। ‘গরবের দেশ পরবের দেশ’ পুরুলিয়ার লৌকিক দেবদেবীদের নিয়ে গভীর ও বিস্তৃত গবেষণা করেছে মানুভূম লোকসংস্কৃতি কেন্দ্রের মুখপত্র অনৃজু। সম্পাদক সুভাষ রায়। বিভিন্ন দেবদেবী সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনিগুলিও উদ্ধার করা হয়েছে, না হলে এগুলি হারিয়ে যেতে পারত। পুরুলিয়ায় জৈন প্রভাব ছিল। তারও খোঁজ দেওয়া হয়েছে। সন্ধান দেওয়া হয়েছে বহু মূর্তির, যা অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। রয়েছে দেবদেবীদের কয়েকটি আলোকচিত্রও। ইতিহাসবিদদের সংগ্রহে রাখার মতো বহু যত্নে তৈরি পত্রিকার এই সংখ্যাটি লৌকিক দেবদেবী, সংস্কৃতির ইতিহাস চর্চায় একটি মূল্যবান অবদান।

হনসু লা

কালাহারি হাইওয়ে ধরে কি শেষতক কুয়াশাঢাকা আটপৌরে গ্রামীণ আলপথে পৌঁছে যাওয়া যায়, যেখানে দু’ধারে শুধুই চুপ করে থাকে শীত-ভোরের তাল-সারি? সাদা-কালো ছবির সাবেক মস্তানিতে বর্ধমান থেকে প্রকাশিত ‘ভ্রমণ কথা’ সেই বিস্তারই দেখিয়েছে। বাংলা ভ্রমণ পত্রিকার ভিড়ে হারিয়ে না গিয়েও চমত্‌কার সব পরাবাস্তব ছবি আর আড়ে-বহরে পরিমিত লেখায় আফ্রিকা থেকে হিমালয় কিংবা শুশুনিয়া থেকে হনসু লা-র পথে খাঁটি এক ভ্রমণপিপাসুর মতো হেঁটে চলা। মফস্‌সলের এই পত্রিকা থেকে বড় প্রাপ্তি এই সাহসটুকুই।

ত্রিপুরার জন্য

অহর্নিশ ত্রিপুরার জন্য প্রকৃত প্রস্তাবে প্রতিবেশী রাজ্যের জন্যই নিবেদিত। তাতে রয়েছে ত্রিপুরার কবি কল্যাণব্রত চক্রবর্তী, শুভেশ চৌধুরী, রাতুল দেববর্মন, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, দিলীপ দাস, বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, দেবাশিস চক্রবর্তী, মণিকা দাস, খোকন সাহার কবিতা। ত্রিপুরায় থিয়েটারের পেশাদারিত্ব নিয়ে বিভু ভট্টাচার্যের নিবন্ধ। রয়েছে শুভেশ চৌধুরী, সন্তোষ রায়, বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, মাধব বণিকের কবিতার বই ও শ্যামল বৈদ্যর গল্পগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা। সমালোচকেরা সকলেই মহিলা। সেই সঙ্গে ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত ভাষাসাহিত্য, পূর্বমেঘ, অন্তঃকরণ, আকাশের ছাদ, উত্তর মেঘ পত্রিকা নিয়েও আলোচনা থাকায় অহর্নিশের এই প্রয়াসে ত্রিপুরার সাম্প্রতিক সাহিত্য ভাবনা সম্পর্কে পাঠককে একটি পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়। সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তী পত্রিকার গোড়াতেই জানিয়েছেন, ত্রিপুরার সাহিত্যচর্চা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উদাসীনতা দূর করতেই তাঁরা ৪৮ পৃষ্ঠার এই সংকলনটির পরিকল্পনা করেছেন। ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করতেও আগ্রহী অহর্নিশ।

মুখোমুখি

শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বত্রিশ ব্যক্তিত্বের সাক্ষাত্‌কার নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ধান্দালীবাড়ি থেকে প্রকাশিত হয়েছে ঋক্‌বেদ পত্রিকার সাক্ষাত্‌কার সংখ্যা। এমন বিষয় নিয়ে ছোট পত্রিকা করা সহজ নয়। সম্পাদক অখিলেশ সুরের দাবি, “বাংলা ছোটপত্রের ইতিহাসে এত কবি, গল্পকার, চিত্রশিল্পী, সম্পাদকের একত্র সাক্ষাত্‌কার প্রকাশ আগে হয়নি।” যার মধ্যে রয়েছেন শক্তিপদ রাজগুরু, সমরেশ মজুমদার, মহাশ্বেতা দেবী, মণীন্দ্র গুপ্ত, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রমুখ। এই কথা বলার প্রক্রিয়াটি কেমন? পবিত্র সরকার বলছেন, “আসলে সাক্ষাত্‌কার হয়তো নিজেরও মুখোমুখি হওয়ার একটা উপলক্ষ।”

সন্তানসম

বনগাঁ লোকালের কামরায় চোখ এড়াচ্ছে না পোস্টারটা। কালো কালিতে যেখানে সন্তান অপহরণের কষ্ট স্পষ্ট। খুদে অক্ষরে সন্তানের গায়ের রং, দৈর্ঘ্যও দেওয়া আছে— এক বিঘত, রং কালো। পয়লা মার্চ, বনগাঁ ও দমদম ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে কেউ বা কারা তাকে ‘কিডন্যাপ’ করেছে। হারানো সন্তানের খোঁজ দিতে পারলে ৫০০০ টাকা পুরস্কারের ইশারাও রয়েছে কালো হরফের আর্তিতে। কার সন্তান? বিশদে বলা নেই। রয়েছে শুধু যোগাযোগের নম্বর। তবে, খুঁটিয়ে পড়লে ওই আবেদনের আড়ালে যত্‌কিঞ্চিত্‌ মজাটুকুও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ভুল বানানে লেখা সন্তানের নাম— স্যামসাং গ্র‌্যান্ড-২।

আরশি লালন

তোর্সাপাড়ে লালন মেলার উদ্বোধনে গান শোনাতে নদিয়ার করিমপুর থেকে যাচ্ছেন গোলাম ফকির। ৭ মার্চ থেকে কোচবিহার শহর লাগোয়া পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীঘাট এলাকায় তিন দিনের মেলা বসবে। নদিয়ারই কদমখালি থেকে লালন গীতি শোনাতে যাচ্ছেন পরেশ সরকার। যাচ্ছেন দক্ষিণবঙ্গের আরও নানা শিল্পী। বাংলাদেশের লালন অ্যাকাডেমির শিল্পীরাও আসছেন। মেলা চত্বরে থাকবে প্রদর্শনী, লালনের দর্শন আলোচনার আয়োজনও রয়েছে। স্থানীয় আরশিনগর আশ্রমের কর্তা নীলাভ গুহ চৌধুরী বলেন, “লালনের দর্শন ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছর এই মেলা করা হবে।”

সুরসঞ্চার

হালফিলের র‌্যাপ বা হানি সিং নয়, এ মেয়ের মন পড়ে রয়েছে ধ্রুপদী সঙ্গীতেই। ছেলেবেলায় দাদুর গলায় রবি ঠাকুরের গানে ঘুম থেকে ওঠা আর বাবার সেতার শুনে ঘুমোতে যাওয়া, এই ছিল তার রুটিন। নিজের অজান্তেই কবে যেন সুরে সা-রে-গা-মা বলতেও শিখে গিয়েছিল সে। বছর চারেক বয়সে তুলিরেখা দত্তের কাছে গানের হাতেখড়ি। ধীরে-ধীরে টিভি চ্যানেলের রিয়্যালিটি শো, নানা অনুষ্ঠান, রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নানা পুরস্কার—পরিচিতি ক্রমে বাড়ছে ভাতারের সঞ্চারী সেনগুপ্তের। ইতিমধ্যে পোগো অ্যামেজিং কিডস পুরস্কার থেকে রাষ্ট্রীয় বালশ্রী সম্মান তার ঝুলিতে। আপাতত গান শেখা, পড়াশোনা নিয়ে কলকাতায় থাকলেও মন পড়ে থাকে বর্ধমানে গ্রামের বাড়িতেই। বছর চোদ্দোর সঞ্চারী অকপটে স্বীকার করে দিনরাত হর্ন, হট্টগোলে ভরা মহানগর তার ততটা পছন্দের নয়। শ্রেয়া ঘোষাল, সুনিধি চৌহান, অরিজিত্‌ সিংহ তার বেশ পছন্দের হলেও বড় হয়ে শুধুই প্লে ব্যাক করতে চায় না সে। বরং সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ে মার্গসঙ্গীত ছড়িয়ে দিতে চায় বিশ্ববাসীর কাছে। মাসির বাড়িতে ভাইবোনদের সঙ্গে হুটোপাটির মাঝেই চোদ্দো বছরের মেয়েটি বলে, “সঙ্গীত তো সত্যকে খোঁজে, বিজ্ঞানও তাই। এই দুইয়ের নতুন ভাবে মেলবন্ধনই আমার লক্ষ্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন