দলে লাগাতার ভাঙনের ঘটনা কংগ্রেস নেতৃত্বের কপালে যে ভাঁজ ফেলেছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল দলের ছাত্র সমাবেশে। দলত্যাগীদের দেখে ছাত্র-যুবরা যাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পড়েন, সেই বার্তাই বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতৃত্ব দিয়েছেন ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে।
এ দিন মহাজাতি সদনের সামনে ছাত্র পরিষদের সমাবেশে সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের অনেকের বক্তব্যেই দলত্যাগের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তবে দলত্যাগে কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলের মতো সংগঠনে সাময়িক সমস্যা তৈরি হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে শুরু করে অসিত মিত্র, অরুণাভ ঘোষের মতো নেতা ছাত্র-যুবদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। সমাবেশে উপস্থিত ছাত্র-যুবদের উদ্দেশে অধীরবাবু বলেন, “দলত্যাগ কংগ্রেস নতুন কোনও ঘটনা নয়। কংগ্রেস কেন্দ্রে সবসময় ক্ষমতায় থাকেনি। কংগ্রেসের পরাজয় হলে তখন সুবিধাবাদী শ্রেণি দলত্যাগ করে।” আরও এক ধাপ এগিয়ে অধীরবাবু বলেন, “কংগ্রেস একটা আদর্শের নাম। একটা মতবাদ। সংখ্যা দিয়ে সেই মতবাদের বিচার হয়না।”
দল ছেড়ে শাসক দলে যোগদানের হিড়িক আটকাতে এ দিন অরুণাভ ঘোষ বলেন, “কংগ্রেসে বরাবরই মতাদর্শের লড়াই ছিল, থাকবেও। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রশ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।” দলত্যাগের ঘটনার সমালোচনা করে বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর তির্যক মন্তব্য, “ভূতের ভবিষ্যৎ আছে, কিন্তু তৃণমূলের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। যাঁরা দল ছাড়ছেন তাঁরা এটা মনে রাখবেন।” এ দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশ ছিল ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। সেই সমাবেশকে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওটা নকল। নকল হইতে সাবধান!” সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চৌরঙ্গি বিধানসভার উপনির্বাচনের কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। তিনি ছাত্র-যুবদের কাছে কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গহিকতা উপনির্বাচনে বোঝানোর আবেদন জানান।
দলের নেতা-কর্মী, বিশেষ করে ছাত্র-যুব সংগঠনের প্রধানদের দলত্যাগের বিষয়টি নিয়ে দিল্লিও উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে দলের পরিস্থিতি বুঝতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সোমেন মিত্র, মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। অধীরবাবুরা অবশ্য মনে করেন, নেতা দলত্যাগ করলেও, কর্মীরা দলেই আছে। অধীরবাবুদের এই মনোভাব নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক তো চলছেই, এ দিন শুভঙ্কর সরকারের মতো প্রাক্তন ছাত্র নেতা প্রকাশ্যেই বলেন, “ছাত্র-যুবরা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে গুরুত্ব পায় না।” শুভঙ্করের বক্তব্যের সঙ্গে প্রদেশ নেতৃত্বের একাংশ সহমত। বিষয়টি আঁচ করেই অধীর এ দিন আশ্বাস দিয়েছেন, “প্রতি জেলায় ব্লক স্তরে যেখানে কংগ্রেস আছে, সেখানেই আমরা শাখা সংগঠনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব।” দলত্যাগের সমস্যা রোধে আন্দোলনই হাতিয়ার বলে উল্লেখ করেন প্রদেশ ছাত্র পরিষদের সহ সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়। তিনি এবং প্রাক্তন ছাত্র নেতা অনুপ্লব ঘোষ জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুস্থ পরিবেশ ও পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তাঁরা আন্দোলনে নামছেন।