শহরে বিরোধীদের সভা-সমাবেশ নিয়ে জটিলতা অব্যাহত! বিজেপি-র পরে এ বার ধর্মতলার সেই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সমাবেশ নিয়েই প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাচ্ছে বামেরাও। পুলিশি অনুমতি বা আদালতের মুখাপেক্ষী না হয়েই কাল, বৃহস্পতিবার ভিক্টোরিয়া হাউস চত্বরে বামেদের ধর্না-অবস্থান হবে বলে জানিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু।
এ বারের ধর্না-অবস্থানের দাবিগুলির সিংহ ভাগই কেন্দ্র-বিরোধী। অথচ তার জন্যই তৃণমূলের প্রশাসন অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বামেরা বিনা অনুমতিতেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিমানবাবু মঙ্গলবার জানিয়েছেন, কাল ভিক্টোরিয়া হাউসের সংলগ্ন কোনও স্থানে বামেরা তিন ঘণ্টা অবস্থান করবে। এর আগে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি না পেয়ে শ্যামবাজারে সিপিএম নেতা গৌতম দেব বা কলকাতা পুরসভার সামনে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ম্যাটাডোর-মঞ্চে সভা করেছিলেন। মাঝে সরকার-বিরোধিতার ব্যাটন প্রায় পুরোটাই চলে যাচ্ছিল বিজেপির হাতে। প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে আদালতে লড়ে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সম্প্রতি অমিত শাহের সভা এবং গত সপ্তাহে বামেদের দু’টি মিছিলে বিপুল ভিড় এই দুই ঘটনাই বিমানবাবুদের ফের আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার সাহস জুগিয়েছে বলে বাম সূত্রের ব্যাখ্যা। পাশাপাশি, আদালতের হস্তক্ষেপে অমিতের সভা বাকিদের জন্যও দ্বার খুলে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিমত।
কেন্দ্রের ‘জনস্বার্থবাহী নীতি ও আগ্রাসনমূলক সাম্প্রদায়িক নীতি’র বিরুদ্ধে ৬টি বাম দল দেশের প্রতিটি শহরে ৩ ঘণ্টা অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতায় ১৭টি বাম দল কাল ধর্না-অবস্থানের ডাক দিয়েছে। বিমানবাবু বলেন, “ভিক্টোরিয়া হাউস সংলগ্ন স্থানেই অবস্থান করব। তাতে যা হওয়ার হবে!” তৃণমূল প্রশাসনের প্রতি তাঁর প্রশ্ন রাজ্যে কি রাজতন্ত্র চলছে?
এর জন্য বামেদের তরফে প্রথমে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু পুলিশ জানায়, ওখানে ওই দিন ১৮টি সংঠনের যৌথ সভা রয়েছে। এর পরে রানি রাসমণি অ্যাভেনিউয়ে অবস্থানের জন্য আবেদন করা হলে পুলিশ বলে, সেখানেও একটি সংগঠন সভার অনুমতি নিয়েছে। বিমানবাবুর বক্তব্য, তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন ওই সংগঠনের সভা শেষ হলে বিকেল ৩টে থেকে অবস্থান করবেন। কিন্তু পুলিশ জানায় সভা শেষ হবে বিকেল ৫টার পরে। তখন ভিক্টোরিয়া হাউস সংলগ্ন কোনও স্থানে অবস্থান-মঞ্চ করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ তা নাকচ করে দিয়েছে বলে বিমানবাবু জানান।
বিমানবাবুর প্রশ্ন, “রাজ্যের কোনও বিষয়ে নয়, মূলত কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান। তা-ও রাজ্যের আপত্তি কেন? তা হলে কি দু’পক্ষে বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে?” গত দু’দিন ধরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনামূলক ‘নরম মনোভাব’ বিমানবাবুদের এই প্রশ্ন তোলাকে সহজ করেছে। সমাবেশের অনুমতি নিয়ে জটিলতার পরে কাল অবস্থান-মঞ্চ থেকে রাজ্যের বিরুদ্ধেও সরব হতে পারবেন বাম নেতৃত্ব।
পুলিশের তরফে বাম নেতৃত্বকে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর অফিস খোলা। তাই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অবস্থানের অনুমতি দেওয়া অসম্ভব। যানজটের সমস্যা হবে। বিমানবাবুর প্রশ্ন, “অতীতে বাম আমলে (২০১০) ও তৃণমূল সরকারের আমলে (২০১২) ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে বামেরা। এখন অসুবিধার কী আছে?” তাঁর যুক্তি, “পুলিশকে বলা হয়েছিল, দুপুর দু’টো থেকে ৫টা পর্যন্ত কয়েকশো বাম কর্মী অবস্থান করবেন। তার পরে তাঁরা জায়গা খালি করে দেবেন। ফলে যানজট তেমন হবে না।” কিন্তু প্রশাসন অনুমতি না দেওয়ায় এখন যা পরিস্থিতি, তাতে বামেরা ‘কয়েকশো’র জায়গায় কয়েক হাজার মানুষের জমায়েত করতে পারে!