নেতার ফোনে রুদ্ধ সংলাপ, থমকাল ব্রাত্যর নাটক

ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ। তবে একেবারে নিস্তব্ধ। মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপটুকুই স্রেফ ভেসে আসছে। কোচবিহারের রবীন্দ্রসদনে অভিনীত হচ্ছে ‘ব্রাত্যজন’ প্রযোজিত নাটক ‘রুদ্ধসঙ্গীত’। আচমকা সুর কাটল এক দর্শকের মোবাইলের রিংটোন। প্রথম সারিতে বসা ওই ব্যক্তি বেশ জোরেই কথা বলতে শুরু করলেন। কিছু ক্ষণ কথা চলল। তার মধ্যেই বিরক্ত অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার খানিকটা হাল ছেড়ে সংলাপই বন্ধ করে দিলেন। মঞ্চ থেকে বলতে শোনা গেল অভিনেতাকে, “দু’জনে তো একসঙ্গে কথা বলা যায় না। আপনার শেষ হলে, আমি শুরু করি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:১৫
Share:

ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ। তবে একেবারে নিস্তব্ধ। মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপটুকুই স্রেফ ভেসে আসছে। কোচবিহারের রবীন্দ্রসদনে অভিনীত হচ্ছে ‘ব্রাত্যজন’ প্রযোজিত নাটক ‘রুদ্ধসঙ্গীত’।

Advertisement

আচমকা সুর কাটল এক দর্শকের মোবাইলের রিংটোন। প্রথম সারিতে বসা ওই ব্যক্তি বেশ জোরেই কথা বলতে শুরু করলেন। কিছু ক্ষণ কথা চলল। তার মধ্যেই বিরক্ত অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার খানিকটা হাল ছেড়ে সংলাপই বন্ধ করে দিলেন। মঞ্চ থেকে বলতে শোনা গেল অভিনেতাকে, “দু’জনে তো একসঙ্গে কথা বলা যায় না। আপনার শেষ হলে, আমি শুরু করি।”

হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠে। মোবাইল হাতে দেখা যায় বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয়সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। দর্শকদের মধ্যে শুরু হয় গুঞ্জন। শব্দ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী তাঁকে বাইরে গিয়ে কথা বলার পরামর্শও দেন। তা নিয়ে বাদানুবাদও হয়। ইতিমধ্যে থমকে যায় নাটক। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথা শেষ হলে মঞ্চ থেকে দেবশঙ্করকে বলতে শোনা যায়, “এ বার কি শুরু করতে পারি?” মঞ্চের নীচ থেকে কর্মীরা সবুজ সঙ্কেত দিলে ফের শুরু হয় নাটক।

Advertisement

৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কোচবিহারে ‘জনান্তিক স্কেটেড’ পরিচালিত নাট্যোৎসব শুরু হয়েছে। সেখানেই মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় কলকাতা থেকে আসা নাট্যদল তো বটেই, স্থানীয় নাট্যকর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দর্শকদের একাংশ নাটক থেমে থাকার সময়ই চাপা স্বরে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন। তাঁরা নাটকের শেষে অনেককে বলছিলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবুর মত এক জন ব্যক্তির কাছে এই ধরনের ঘটনা আশা করা যায় না।” বৃহস্পতিবার এ নিয়ে দেবশঙ্করের প্রতিক্রিয়া, “কী আর বলব, কলকাতার হলেও যে এমন হয় না তা তো নয়। আগে রাগারাগি করতাম, এখন বুঝেছি তাতে লাভ হয়না। এই হয়রানিটাও সভ্যতার দান।” তবে তিনি জানাচ্ছেন, “ওই একটি ফোনের পর আর সমস্যা হয়নি। আমার ধারণা উনি বিষয়টা বুঝেছেন। নিশ্চয়ই দরকারি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।”

ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূলের নেতাদের একাংশ। কারণ নাটকের নির্দেশক খোদ পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু। প্রযোজক সংস্থা ‘ব্রাত্যজন’-এর সংস্থার কর্ণধারও তিনিই। যদিও ঘটনাচক্রে ওই নাটকে অভিনয় করার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। এ নিয়ে ব্রাত্যের প্রতিক্রিয়া, “আমার শুনে মনে হচ্ছে, এটা সচেতনতার অভাব।” তিনি যে বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত তা সরাসরি না বললেও, নাট্যকর্মী হিসেবে তাঁর অভিমত, “খুব ব্যস্ত থাকলে প্রেক্ষাগৃহে না আসাই ভাল, বা মোবাইলটা নিষ্ক্রিয় করে রাখা উচিত। মোবাইল সচল থাকলে অভিনেতা ছাড়াও, অন্য দর্শকদেরও অসুবিধা হয়।”

তবে যাঁর ফোন নিয়ে এত কাণ্ড, সেই রবীন্দ্রনাথবাবু অসুবিধার কথা মানেননি। তিনি বলেন, “একটা ফোন এসেছিল ঠিকই। তবে তাতে কারও অসুবিধে হয়নি। সংলাপ কিংবা নাটক থেমে যাওয়ার মত কিছু হয়নি। ভিত্তিহীন অভিযোগ।” মুখ খুলতে চাননি তৃণমূলের অন্য নেতারাও। আজ, শুক্রবার ওই নাট্যোৎসবের শেষ দিন। আয়োজকদের তরফে কল্যাণময় দাস এ দিন বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবু ভাল দর্শক। প্রথম থেকে টানা প্রতিটি নাটক দেখছেন। ওই এক দিনই তাঁর মোবাইল বেজেছিল। এমনটা নিছক দুর্ঘটনা যে কারও ক্ষেত্রেই হতে পারে। সর্বত্র কমবেশি মোবাইল নিয়ে সমস্যা হয়। এখানে বড়জোর তিরিশ সেকেন্ড সংলাপ বলায় শিল্পীরা সমস্যায় পড়েন। এ নিয়ে আমরা হইচই চাই না।”

আয়োজকেরা প্রতিবাদ না করলেও দর্শকদের ওই ঘটনার পরে স্পষ্টই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শকের বক্তব্য, “মোবাইল বেজে ওঠা, শিশুর কান্নার মত সমস্যায় সংলাপ থামানোর ঘটনা দেখেছি। তবে রবীন্দ্রনাথবাবুর বিচক্ষণ মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা কাঙ্ক্ষিত নয়।’’ স্থানীয় ‘ইন্দ্রায়ুধ’ নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক দীপায়ন ভট্টাচার্য, ‘কম্পাস’ নাট্যগোষ্ঠীর দেবব্রত আচার্য সকলেই দর্শকদের সচেতন থাকার কথা বলেছেন। বালুরঘাটের নাট্যব্যক্তিত্ব হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ও জানান, মোবাইলের জেরে এমন সমস্যা প্রায় সর্বত্রই রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন