এত দিন বিভিন্ন জেলে সিসিটিভি নজরদারি চালাত বন্দিদের গতিবিধির উপরে। এ বার কারাকর্মীদের কাজকর্মের উপরে লক্ষ রাখতে তাঁদেরও সিসিটিভি-র আওতায় আনতে চলেছে কারা দফতর। এক শ্রেণির কারাকর্মীর বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ পেয়ে জেরবার কারা দফতর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেলের মধ্যে অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু সম্প্রতি ওই সব বেআইনি কাজকর্মের সঙ্গে বারবার জেলকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, পরে পুলিশি তদন্তে সেই অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। সম্প্রতি আলিপুরে তিন বন্দি পালানোর ঘটনায় সরাসরি অভিযোগের তির ছিল কারা-কর্মীদের দিকে। ওই ঘটনায় সাসপেন্ড হন সেখানকার সুপারও।
রাজ্য কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, “আলিপুর সংশোধনাগারে তিন বন্দির পালানোর ঘটনায় কারা কর্মীদের যোগসাজশের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। তা ছাড়া, জেলের মধ্যে কর্মীদের সাহায্যে অবাধে মোবাইল, মাদক ঢোকানোর অভিযোগ তো অতীতে বহু বার উঠেছে। এই সব কিছু বন্ধ করতেই এ বার কারাকর্মীদের সিসিটিভির নজরদারির আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” প্রথমে কলকাতার তিন জেলে এই ব্যবস্থা চালু হবে। পরে ধাপে ধাপে রাজ্যের সব সংশোধনাগারে বন্দি এবং কর্মীদের সিসিটিভির নজরদারিতে আনা হবে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি তৃণমূল নেতা শম্ভুনাথ কাও জেলে বসেই মোবাইলে রাজ্যের শাসক দলের এক জনপ্রতিনিধিকে ফোন করেন। বিষয়টি জানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। জেলের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার বন্ধের জন্য তিনি কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেন কর্তাদের। এর পরে জেলগুলির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, কারা দফতরের এডিজি-সহ কারা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা বৈঠকে বসেন। সেখানেই কলকাতার জেলগুলি সিসিটিভি-তে মুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক কারাকর্তা বলেন, “হ্যাপি সিংহের হত্যাকাণ্ডে আমরা তাঁকে হত্যার দৃশ্যের সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। সেখানে যে অভিযুক্ত বন্দিই হ্যাপি সিংহকে হত্যা করছে, তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত কারা-কর্মীর কী ভূমিকা ছিল, তা ওই ফুটেজে আসেনি।” ওই কর্তার বক্তব্য, “এখন সব জায়গাতেই নিরাপত্তা কর্মীদের সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখা হয়। তা হলে জেলের মধ্যেই বা সেটা হবে না কেন! কারণ, জেলে অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে কর্মীদের যুক্ত থাকারও তো অভিযোগ রয়েছে।” প্রশ্ন উঠেছে, সিসিটিভি-র আওতায় কারাকর্মীদের রাখলেই তাঁদের উপরে সঠিক নজরদারি হবে। ওই কর্তার বক্তব্য, “এখন সিসিটিভি-তে নজরদারির জন্য ওখানেই থাকতে হবে, এমনটা নয়। বাইরে থেকেও নজরদারি চালানো যায়। ফলে, দফতরে বসেও কারা দফতরের শীর্ষ কর্তারা প্রয়োজনে কারাকর্মীদের উপরে নজর রাখতে পারবেন।
তবে সিসিটিভি বসালেই হল না, তার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও চিন্তিত কারা প্রশাসন। বছর বারো আগে কলকাতার কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারগুলিতে বন্দিদের উপরে নজরদারির জন্য বেশ কিছু সিসিটিভি বসানো হয়েছিল। এ ছাড়া, জেলের প্রধান গেটের বাইরেও শুরু হয়েছিল সিসিটিভির নজরদারি। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই বেশির ভাগ সিসিটিভি-ই অকেজো হয়ে গিয়েছে বলে খবর। শুধুমাত্র আফতাব আনসারি-র মতো কিছু ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দির ঘরে এখনও পর্যন্ত সিসিটিভি নজরদারি রয়েছে। কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, এসএফআই সমর্থক সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর ঘটনায় প্রেসিডেন্সি জেলের সামনের রাস্তায় যে সব সিসিটিভি ফুটেজ মিলেছিল, তার সবগুলিই ছিল পুলিশের সিসিটিভি। জেলের লাগানো সিসিটিভির সবগুলিই খারাপ থাকায় ওই ঘটনার ফুটেজই পাওয়া যায়নি।
এ বার তাই সিসিটিভি বসানোর পাশাপাশি তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দিচ্ছে কারা দফতর। এতে সিসিটিভির মেয়াদ বাড়বে বলেই আশা কারা কর্তাদের। ওই কর্তা জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে জেলে মোবাইল-জ্যামার লাগানোর কাজ প্রায় হয়ে যাবে। ওই জ্যামারগুলি নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ সব দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে জ্যামার প্রস্তুতকারী সংস্থাকেই। সিসিটিভির ক্ষেত্রেও এমন প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।