রাত বাড়লেই ঠান্ডা-ঠান্ডা ভাব। ভোরের দিকে উত্তর থেকে আসছে শিরশিরে বাতাস। বয়স্করা প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে চাদর চাপাচ্ছেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি দক্ষিণবঙ্গবাসীর প্রশ্ন, শীত কি এগিয়ে আসছে?
আবহবিদেরা অবশ্য এতে সায় দিচ্ছেন না। জানাচ্ছেন, হুদহুদের জেরে নেপালে তুষারপাত হয়েছে। বরফছোঁয়া সেই হিমেল বাতাসই বয়ে আসছে দক্ষিণবঙ্গে। উপরন্তু শনিবার দক্ষিণবঙ্গ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। ঝকঝকে আকাশ, মেঘের বাধা নেই। তাই নেপালের ঠান্ডা হাওয়া দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়ছে। বর্ষা বিদায়ের ফলে জলীয় বাষ্পে টান ধরায় রয়েছে রুক্ষ ভাবও।
সব মিলিয়ে যেন প্রাক শীতের আমেজ। “কিন্তু এটা অস্থায়ী। শীত আসতে অনেক দেরি।” রবিবার বলেছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
বর্ষা বিদায় আর নেপালি হাওয়ার সৌজন্যে দিনের তাপমাত্রাও কমছে। আলিপুরের রেকর্ড, রবিবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা কি না স্বাভাবিকের তুলনায় এক ডিগ্রি কম। শ্রীনিকেতনে রাতের তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে বিশ ডিগ্রির কোঠায়, স্বাভাবিকের দু’ডিগ্রি নীচে! চলতি সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে ভোরের শিরশিরে ভাব থাকবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে আলিপুর। সপ্তাহ পেরোলে আবহাওয়া কেমন হতে পারে?
আবহবিদেরা বলছেন, নেপালের ঠান্ডা হাওয়া চলে গেলে ফের গুমোট ফিরতে পারে। তবে আর্দ্রতা ক্রমেই কমবে। এ ভাবেই ধীরে ধীরে শীত পড়বে দক্ষিণবঙ্গে। গত ক’দশক ধরে বাংলায় শীতের সেই পুরনো চেহারা অবশ্য কিছু পাল্টেছে। যেমন, আগামী বৃহস্পতিবার কালীপুজো। বছর বিশেক আগেও এ সময়ে রাতে ঠান্ডা ভাব থাকত। “কালীপুজোর রাতে হাল্কা সোয়েটার চাপিয়েছি, এমনও হয়েছে।” বলছেন বছর আঠাশের এক যুবক। প্রবীণদের স্মৃতিচারণায় ক’দশক আগে লক্ষ্মীপুজোর পরেই রাতে গায়ে চাদর চাপানোর কথাও শোনা গিয়েছে।
সে সব আর হয় না। গত ক’বছরে বর্ষার ভাব-ভঙ্গিও পাল্টেছে। সাবেক ঋতু-ক্যালেন্ডার মানলে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়ায় দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষার পাততাড়ি গোটানোর কথা। কিন্তু হাওয়া অফিস বলছে, গত পাঁচ বছরে বর্ষা বেঁধে দেওয়া নির্ঘণ্ট মানেনি। প্রতি বার বিদায় নিতে দেরি করেছে। এমনকী, কখনও তার দক্ষিণবঙ্গ ছাড়তে অক্টোবরের শেষ এসে গিয়েছে। তবে কি বর্ষার ক্যালেন্ডারই পাল্টে গেল?
মৌসম ভবনের আবহবিদরাও তেমনই ভাবছেন। ওঁদের বক্তব্য, বর্ষার চরিত্র বদলের আঁচ মিলছে। গত ক’ছর অক্টোবরের গোড়ায় বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ের জেরে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রলম্বিত হচ্ছে। “এ বছর হুদহুদের জেরে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রলম্বিত হয়েছে। গত বছর একই কাজ করেছিল পিলিন।” বলছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী।