লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আজ দুপুর পর্যন্ত তুষারঝড়ে মৃত ৩০ জনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে। এমনটাই জানানো হয়েছে নেপাল সরকার তরফে। মৃতদের মধ্যে তিন জন ভারতীয় বলে জানা গেলেও, তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। নিখোঁজ এখনও ৮৫ জন। তার মধ্যে চার জন বাঙালি।
এ দেশের সরকারি সূত্রের খবর, দু’টি বাঙালি অভিযাত্রী দল নেপালে দুর্যোগের মুখে পড়েছে। শ্রীরামপুরের চার জনের একটি অভিযাত্রী-দল নেপালের মুস্তাং জেলার থোরাং পাস গিয়েছিল। সেখান থেকে মুক্তিনাথ আসার পথে মঙ্গলবার ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের মুখে পড়েন তাঁরা। তিন জন কোনও মতে মুক্তিনাথ এসে পৌঁছতে পারলেও, অরূপ রায়চৌধুরী নামে এক অভিযাত্রী এখনও নিখোঁজ।
দ্বিতীয় দলটি বেলুড়ের একটি পর্বতারোহী ক্লাব থেকে নেপালের অন্নপূর্ণা অঞ্চলে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিল। ওই দলের সাত সদস্যের মধ্যে বৈদ্যবাটি ও শেওড়াফুলি এলাকার পাঁচ যুবক এবং ডোমজুড় ও ব্যারাকপুরের দুই যুবক ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ অক্টোবর রক্সৌল এক্সপ্রেসে রওনা দেন তাঁরা। নেপালে তাঁদের ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল ‘নেপাল অল্টারনেটিভ ট্রেক্স অ্যান্ড এক্সপিডিশনস’ নামে একটি সংস্থা। মঙ্গলবার মানাং জেলার ফু গ্রাম থেকে শিয়াং গ্রামে আসার পথে তুষার ঝড়ের মুখে পড়ে দলটি। আচমকাই পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল হয়ে ওঠে। দলছুট হয়ে যান কয়েক জন। গত কাল এঁদের মধ্যে চার জনকে নেপাল সেনা উদ্ধার করতে পেরেছে। তাঁরা হলেন বৈদ্যবাটির বাসিন্দা রঞ্জিত দত্ত, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রামচন্দ্র মিত্র। তথাগত জানা, সুনীল সেন, ইন্দ্রনীল ঘোষ নামে ওই দলের বাকি অভিযাত্রীরা এখনও নিখোঁজ। তাঁদের ফেরার অপেক্ষায় চাম-এর সেনা ছাউনিতে অপেক্ষা করছেন উদ্ধার হওয়া চার জন।
আজ সকালে রামচন্দ্র মিত্র নেপাল থেকে ফোন করেন বৈদ্যবাটিতে। ক’দিন ধরে খোঁজ না মেলায় দুশ্চিন্তায় ছিল তাঁর পরিবার। আজ ফোনে খবর মিলতে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হন তাঁর বাড়ির লোক। কিন্তু নিখোঁজ অভিযাত্রীদের নিখোঁজ হওয়ার খবরে উদ্বেগ ছড়ায় এলাকায়। বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, “নিখোঁজদের জন্য আমরা সকলেই দুশ্চিন্তায় আছি। দিল্লিতে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানিয়েছি। উনি নেপাল দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।”
প্রতি বছরই এই সময়ে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ নেপালে ভিড় জমান বিভিন্ন পথে ট্রেকিংয়ের জন্য। মুক্তিনাথ, অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প ও অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেকই মূল আকর্ষণ। বছরের এই সময়টাতেই সেরা আবহাওয়া থাকে নেপালে। কিন্তু এ বছর হুদহুদ ঝড়ের প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরেই ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল নেপালে।
সরকারি সূত্রের খবর, সোমবার রাত থেকে প্রবল তুষারপাত শুরু হয়। আশপাশের শৃঙ্গগুলিতে এক সঙ্গে অনেকটা তুষার জমে যায়। বিপদ বুঝে মঙ্গলবার সব অভিযাত্রী দলই দ্রুত নিরাপদ জায়গায় নেমে আসতে শুরু করে। কিন্তু তুষার ঝড় শুরু হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েন অভিযাত্রীরা। দলছুট হয়ে যান অনেকেই। ক্রমেই বাড়তে থাকে ঝোড়ো হাওয়ার গতি। সেই সঙ্গে লাগাতার বরফ পড়তে থাকে। দু’দিন ধরে টানা বরফ পড়ায় আশপাশের শৃঙ্গগুলি থেকে তুষার ধস নেমে আসে। এই সময়েই ধসে চাপা পড়ে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন বলে আশঙ্কা পর্বতারোহী মহলের।
খবর পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই বুধবার নেপাল সরকারের তরফে সেনা পাঠানো হয় দুর্ঘটনাস্থলে। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকায় দিনভর হেলিকপ্টারে করে চলে তল্লাশি। আজকেও দুপুর একটা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালায় সেনা। নেপাল সরকার জানিয়েছে, উদ্ধার কাজের খরচ বহন করবে তারাই।
নেপালের একটি পর্বতারোহণ আয়োজক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ধবলগিরি শৃঙ্গেও তুষারঝড়ে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে নিখোঁজ স্লোভাকিয়ার দুই পর্বতারোহী ও নেপালের তিন শেরপা। তাঁদের সন্ধানে চারটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকারী দলে রয়েছেন নেপাল সেনা, নেপাল পুলিশ ও কয়েক জন শেরপা। মুস্তাং জেলার গভর্নর বাবুরাম ভান্ডারী বলেন, “উদ্ধারকাজ চলছে। জার্মানির পাঁচ জন, পোল্যান্ডের পাঁচ জন ও ইজরায়েলের চার জন পর্বতারোহীকে উদ্ধার করা গিয়েছে।”