ট্রেনের দেরি হলেই এই ছবি নিত্যদিনের।-বাগনান স্টেশনে নিজস্ব চিত্র।
তোমার দেখা নাই!
হু হু গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার ট্রেন। কখনও-সখনও মালগাড়ি। কিন্তু কোথায় লোকাল ট্রেন? কখনও তার দেখা মিলছে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট দেরিতে, কখনও ২০ মিনিট বা কখনও আধ ঘণ্টা পরে। বাদুড়ঝোলা ভিড় নিয়ে। পা রাখাই দায়। তবু দিনের পর দিন এ ভাবেই যাতায়াত করতে হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার বিভিন্ন স্টেশনের ইএমইউ লোকালের যাত্রীদের। রেল দফতরের ‘টাইম টেবিল’-এর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় সারাদিনে ৪৯ জোড়া লোকাল ট্রেন চলে। কিন্তু সকাল-সন্ধ্যা বা রাত সব সময়েই দেরিতে প্ল্যাটফর্মে ঢোকাটাই লোকালগুলির নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। একই হাল হাওড়া-আমতা শাখার লোকালগুলিরও। ‘সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে (হাওড়া-জকপুর) প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক অজয়কুমার দলুইয়ের আক্ষেপ, “কোন ট্রেন কতটা দেরিতে চলাচল করে তা সবিস্তার জানিয়ে আমরা দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি এবং স্মারকলিপি দিয়েছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার অবশ্য দাবি করেছেন, “সব ট্রেনই যে দেরিতে চলাচল করে তা নয়। কিছু ট্রেন সামান্য দেরিতে চলে। প্রতিটি ট্রেনই যাতে ঠিক সময়ে চলে তার জন্য সব রকম চেষ্টাই করা হয়।” তবে, রেলের আর এক আধিকারিক মেনে নিয়েছেন, হাওড়া থেকে সাঁত্রাগাছি পর্যন্ত অতিরিক্ত একটি রেললাইন পাতা না-হলে এই সমস্যার সমাধান কার্যত অসম্ভব।
হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় যে সব লোকাল চলে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল হাওড়া-মেদিনীপুর, হাওড়া-খড়্গপুর, হাওড়া-পাঁশকুড়া, হাওড়া-মেচেদা, হাওড়া-হলদিয়া ইত্যাদি ট্রেন। বিশেষ করে মেদিনীপুর বা খড়্গপুর থেকে যে লোকালগুলি হাওড়ায় আসে সেগুলির অধিকাংশই সময়সীমা মেনে চলে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
কলকাতা বা হাওড়ায় কাজ সেরে রাতে যাঁরা বাড়ি ফেরেন, তাঁদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে পাঁচটি ট্রেন। সেগুলি ছাড়ার কথা যথাক্রমে রাত ৯টা ৪২মিনিট, ১০টা, ১০টা ২৫মিনিট, ১১টা এবং ১১টা ৩৫ মিনিটে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি ট্রেন চলাচলের সময়সীমা প্রায় কোনওদিনই ঠিক থাকে না বলে অভিযোগ। ফলে, কাজকর্ম সেরে ক্লান্ত হয়ে যে যাত্রীরা হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসেন, তাঁদের কান খাড়া রাখতে হয় ট্রেনের ঘোষণার জন্য। তাঁদের অভিজ্ঞতা, গড়ে ১৫ মিনিট থেকে আধ ঘন্টা দেরিতে ট্রেনগুলি প্ল্যাটফর্মে ঢোকে। ফলে, বাড়ি ফিরতে তাঁদের গভীর রাত হয়ে যায়। গত শনিবার সকালে ও রাতে বাগনান স্টেশনে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর পরে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু ট্রেনই দেরিতে চলছে।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, লোকালের এই দেরি, চলছে দিনের পর দিন। কৌশিক সামন্ত, মদনমোহন প্রামাণিকের মতো নিত্যযাত্রীরা বলেন, “কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে ট্রেন ধরতে এসে খুব টেনশন হয়। ঠিক সময়ে ট্রেন আসেই না।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে দূরপাল্লা এবং লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। কিন্তু ট্রেন চালানোর পরিকাঠামোর উন্নতির দিকে নজর দেওয়া হয়নি। হাওড়া স্টেশনের পুরনো প্ল্যাটফর্মের ৯ থেকে ১৫ এবং নতুন প্ল্যাটফর্মের ১৮ থেকে ২১ মোট ১১টি প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘন ঘন লোকাল এবং দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়ছে এবং হাওড়াগামী ট্রেন ঢুকছে। কিন্তু সাঁত্রাগাছি, রামরাজাতলা, দাশনগর এবং টিকিয়াপাড়া এই চারটি স্টেশনের তিনটি মাত্র ট্রাক ব্যবহার করে হাওড়া স্টেশনের ১১টি প্ল্যাটফর্মের আপ ও ডাউন ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তার ফলেই ট্রেনগুলি দেরিতে চলে।