অন্ধকারে পার্থ

নিয়মের আজব থাবা বেতনে, কলেজে ক্ষোভ

নিয়মটা সরকারি কর্মীদের বেতন নিয়ে। কিন্তু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রেও সেটা প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরিণামে বেতন কমে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। এতে বিস্তর ক্ষোভ জমেছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মনে। এমনকী আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

নিয়মটা সরকারি কর্মীদের বেতন নিয়ে। কিন্তু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রেও সেটা প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরিণামে বেতন কমে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। এতে বিস্তর ক্ষোভ জমেছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মনে। এমনকী আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ।

Advertisement

সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষকদের প্রশ্ন, সরকারি কর্মীদের জন্য তৈরি অর্থ দফতরের একটি নিয়ম তাঁদের ক্ষেত্রে বলবৎ হবে কেন? তাঁরা তো আর সরকারি কর্মী নন! শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, এমনটা যে হচ্ছে, তিনি তা জানেন না। এই বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। নিয়মটা কী?

কোনও সরকারি কর্মীর স্বামী বা স্ত্রীও যদি সরকারি কর্মী হন, তা হলে বাড়িভাড়া বাবদ দু’জন মিলিত ভাবে ছ’হাজার টাকার বেশি পেতে পারেন না। ২০১২ সালে অর্থ দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, সরকারি কর্মীর স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ছ’হাজার ছাড়াতে পারবে না। এই নিয়ম নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু ঝামেলা বেধেছে ২০১৪-র শেষ থেকে ওই নির্দেশিকা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কিছু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরেও প্রয়োগ করায়। ২০১২ সাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাড়িভাড়া বাবদ যে-অর্থ পেয়েছেন, একাধিক কলেজ তা-ও কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। কোথাও তিন মাস, কোথাও ছ’মাসের টাকাও কেটে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

Advertisement

বেশ কিছু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই নির্দেশিকার কবলে পড়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ। এর জেরে চিন্তায় পড়েছেন আরও বড় অংশের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক কলেজ-শিক্ষক বলেন, “আমাদের কিছু সহকর্মী তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনই। আমাদের কলেজেও যে-কোনও সময়ে ওই নিয়ম বলবৎ হতে পারে। তখন আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব। এই অন্যায় কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।” মাগ্গিগণ্ডার বাজারে বেতন থেকে কয়েক হাজার টাকা চলে গেলে কী করে চলবে, সেই প্রশ্নও উঠছে।

শ্রুতিনাথবাবুর প্রশ্ন, বছর তিনেক আগে অর্থ দফতরের জারি করা একটি নির্দেশিকা হঠাৎ কলেজ-শিক্ষকদের উপরে প্রয়োগ করা হচ্ছে কেন? এই বিষয়ে শিক্ষা দফতর তো পৃথক নির্দেশিকা জারি করেনি! “সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী ভাবে সরকারি কর্মচারী হলেন, সেটা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না,” বলেন শ্রুতিনাথবাবু।

ওই নির্দেশিকা চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধিতায় উচ্চশিক্ষা দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছে ওয়েবকুটা। আর তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু জানান, এমনটা যে হচ্ছে, তা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, “রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তা (ডিপিআই)-র নির্দেশিকা ছাড়া তো আমাদের ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম কার্যকর হয় না। হওয়ার কথাও নয়। এ ক্ষেত্রে কী হচ্ছে, জানি না!”

তা হলে কিছু কলেজ ওই নির্দেশিকা মানছে কেন?

দমদমের একটি কলেজে নিয়মটি বলবৎ করা হয়েছিল। সেখানকার অধ্যক্ষ জানান, উচ্চশিক্ষা দফতরের সবুজ সঙ্কেত পেয়েই তাঁরা ওই নিয়ম মানছেন। তাঁর কথায়, “একটু বিভ্রান্তি হয়েছিল। তবে সব মিটে গিয়েছে। সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ওই নিয়ম কার্যকর হবে না।”

সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার কথা স্বীকার করেনি উচ্চশিক্ষা দফতর। এমনকী খোদ ডিপিআই নিমাইচন্দ্র সাহা বলেন, “খোঁজখবর না-নিয়ে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।”

মন্ত্রী অবশ্য এই বিভ্রান্তি, ভুল বোঝাবুঝির জটিলতায় ঢুকতে চাননি। সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করার আগে বিষয়টি তাঁর গোচরেই আসেনি বলে জানান পার্থবাবু। তিনি বলেন, “ব্যাপারটা সবে শুনলাম। সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলব। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করব।” তবে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কলেজে এই নিয়ম বলবৎ করায় ঘনিষ্ঠ মহলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন পার্থবাবু। সরকারি কর্মীদের জন্য তৈরি নিয়ম যাতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরে প্রয়োগ করা না-হয়, মৌখিক ভাবে সেই নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন