নজরে আল কায়দার জঙ্গি জাল, ঢাকার গোয়েন্দারা কলকাতায়

হায়দরাবাদে ধৃত জঙ্গি মায়ানমারের নাগরিক খালিদ মহম্মদকে জেরা করতেই মূলত ঢাকা থেকে কলকাতায় উড়ে এলেন বাংলাদেশের ৭ গোয়েন্দা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দর নেমেই তাঁরা সল্টলেকে এনআইএ-র দফতরে যান। আল কায়দার জঙ্গি জাল সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য সংগ্রহই আপাতত তাঁদের পাখির চোখ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

কলকাতা বিমানবন্দরে ঢাকার গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।

হায়দরাবাদে ধৃত জঙ্গি মায়ানমারের নাগরিক খালিদ মহম্মদকে জেরা করতেই মূলত ঢাকা থেকে কলকাতায় উড়ে এলেন বাংলাদেশের ৭ গোয়েন্দা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দর নেমেই তাঁরা সল্টলেকে এনআইএ-র দফতরে যান। আল কায়দার জঙ্গি জাল সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য সংগ্রহই আপাতত তাঁদের পাখির চোখ।

Advertisement

জঙ্গি সংগঠন জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ)-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার আমির (রাজনৈতিক প্রধান) সাজিদ ওরফে মাসুদ রানাও ধরা পড়ে এখন এনআইএ-র হেফাজতে রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কলকাতায় আসা দলটি তাকেও জেরা করবে। সাজিদের স্ত্রীকে ইতিমধ্যেই ঢাকার উপকণ্ঠ থেকে গ্রেফতার করে জেরা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল ও সাজিদের আস্তানা শিমুলিয়ার মাদ্রাসাতেও যাবেন ঢাকা থেকে আসা গোয়েন্দারা। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের এক শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, এ সবের কোনওটিই তাঁদের অগ্রাধিকার নয়। হায়দরাবাদ থেকে ধরা পড়া খালিদকে জেরা করতেই প্রধানত কলকাতা দৌড়েছেন তাঁদের বাছাই করা দুঁদে গোয়েন্দারা।

কেন এই তৎপরতা?

Advertisement

মায়ানমারের নাগরিক খালিদকে জেরা করে পাওয়া তথ্য বাংলাদেশ পুলিশকে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। কক্সবাজারের একটি হোটেলে বৈঠকে বসেছিল এরা। এদের মধ্যে মহম্মদ আলম নামে এক জন পাকিস্তানের নাগরিক, দু’জন মায়ানমারের। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, এই পাঁচ জনকে জেরা করেই তাঁদের ঘুম ছুটে গিয়েছে। জেরায় পাওয়া তথ্য তাঁরা এনআইএ-কেও পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই তথ্য থেকেই হদিশ মিলেছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে এক বড়সড় জঙ্গি জালের, যার মাথায় রয়েছে আয়মান আল জওয়াহিরির নেতৃত্বাধীন আল কায়দা। জওয়াহিরি সাম্প্রতিক একটি ভিডিও বার্তায় ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের শাখা খোলার কথা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ ও এনআইএ-র ধারণা চট্টগ্রামের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে আল কায়দার সেই শাখারই টিকির সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। আরব ও ইউরোপের কিছু দেশের নাগরিক ও সংগঠনও এই চক্রান্তে জড়িত। আর খালিদ নিজে সরাসরি আল কায়দার নিয়োগ করা জঙ্গি। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল স্থানীয় স্তরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন জঙ্গি মডিউলগুলিকে প্রশিক্ষণ দিতে। শিমুলিয়া মাদ্রাসায় এসে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে নিহত শাকিলকেও সে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।


বর্ধমান কাণ্ডে জড়িত জহিরুল শেখের স্ত্রী খানসা বিবিকে জেরা করছে এনআইএ। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক।

খালিদ মায়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ। রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দারবন অঞ্চলে সক্রিয়। কখনও মায়ানমারে, কখনও মায়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের কোনও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির চালায় রোহিঙ্গারা। এই ধরনের শিবির সংগঠনের অভিজ্ঞতা রয়েছে খালিদের। পরে তাকে ভারতে কাজ করতে পাঠায় আল কায়দা। গোয়েন্দারা জেনেছেন, দু’বছর আগে ভারতে এসে হায়দরাবাদে বসবাস করতে থাকে খালিদ। শিমুলিয়া ছাড়া ভারতের আরও অন্তত চারটি জায়গায় সে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে খালিদকে জেরা করে জানতে পেরেছে এনআইএ। কিন্তু তার মধ্যে একাধিক বার সে বাংলাদেশেও গিয়েছে বলে পড়শি দেশের গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন। চট্টগ্রামে জঙ্গিদের একটি বড়সড় আঞ্চলিক শাখা গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। সে কাজে টাকাকড়ির জোগান অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা সাজাতেই কক্সবাজারের হোটেলে বৈঠকটি চলছিল। পাকিস্তানের নাগরিক মহম্মদ আলম ‘গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টার’ নামে নেদারল্যান্ডসের একটি এনজিও-র পরিচালক। অতি সম্প্রতি ভারতেও শাখা খুলেছে এই এনজিও। বাংলাদেশেও দফতর খুলতে চেয়ে তারা আবেদন জানিয়েছে। কয়েকটি আরব দেশ থেকে আসা অর্থ এই এনজিও-টি জেহাদি সংগঠনগুলির কাছে বিলি করে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। বৈঠকে হাজির সফিউল্লা নামে এক রোহিঙ্গা আবার বাংলাদেশের শাসক দলে স্থানীয় স্তরে নাম লিখিয়ে রেখেছে। সে এবং অন্য এক জন বাংলাদেশি রোহিঙ্গা সলিডারিটি নামে একটি সহায়ক সংগঠনের নেতা। অন্য দুই ধৃত মায়ানমারের নাগরিক এবং সেখানকার দু’টি রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনের মাথা।

কলকাতায় আসা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দলটিতে থাকা সদস্যরা প্রত্যেকেই এই পাঁচ জনকে জেরা করে এসেছেন। খালিদকে জেরা করে আরও তথ্য পেতে চান তাঁরা। এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, খালিদ ইতিমধ্যেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের জেরায় ভেঙে পড়ে অনেক তথ্য দিয়েছে। বাংলাদেশি গোয়েন্দারা রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠনগুলির বিষয়ে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল। তারা খালিদকে জেরা করে উপমহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া আল কায়দার জঙ্গি জাল ও তাতে অর্থ জোগানের বিষয়ে আরও তথ্য বার করতে পারবে বলে আশা করছে এনআইএ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন