নজর রাখতে সব আদালতেই সিসিটিভির আর্জি

কোথাও বিচারক ও আইনজীবীদের সংঘাতে আদালতে অচলাবস্থা চলছে। কোথাও অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রী এজলাসে মোবাইল ফোনে দেদার কথা বলছেন বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে আবার আদালতের মধ্যেই তুমুল হট্টগোল, কটূক্তি। হাতাহাতিও হচ্ছে। এজলাসে অচলাবস্থার জন্য বিচারক না আইনজীবী কোন পক্ষ দায়ী, গোলমাল কারা বাধাচ্ছে, নিয়ম ভাঙছে কে এ-সব জানার জন্য রাজ্যের প্রতিটি আদালতে সিসিটিভি বসানোর আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি জমা পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৮
Share:

কোথাও বিচারক ও আইনজীবীদের সংঘাতে আদালতে অচলাবস্থা চলছে। কোথাও অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রী এজলাসে মোবাইল ফোনে দেদার কথা বলছেন বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে আবার আদালতের মধ্যেই তুমুল হট্টগোল, কটূক্তি। হাতাহাতিও হচ্ছে।

Advertisement

এজলাসে অচলাবস্থার জন্য বিচারক না আইনজীবী কোন পক্ষ দায়ী, গোলমাল কারা বাধাচ্ছে, নিয়ম ভাঙছে কে এ-সব জানার জন্য রাজ্যের প্রতিটি আদালতে সিসিটিভি বসানোর আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি জমা পড়েছে। চিঠিটিকে জনস্বার্থের মামলার আবেদন হিসেবে গণ্য করার আর্জিও জানানো হয়েছে।

আবেদনকারী সুপ্রদীপ রায় নিজে আইনজীবী। শ্রীরামপুর আদালতে বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস ৭ জানুয়ারি থেকে বয়কট করে আসছেন আইনজীবীরা। সোমবারেও সেখানে কাজ হয়নি। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছেন বিচারক সাহা। অন্য দিকে আইনজীবীরা বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে তাঁকে অপসারণের দাবি তুলেছেন।

Advertisement

সিসিটিভি (ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি) বসালে কী সুবিধা হবে?

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে সুপ্রদীপবাবু লিখেছেন, সিসিটিভি বসানো হলে বিভিন্ন আদালতে কেমন ভাবে মামলা চলছে, সেই ব্যাপারে প্রতি মুহূর্তে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। শ্রীরামপুর আদালতে যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে। ওই আইনজীবীর দাবি, সিসিটিভি থাকলে আদালতে অনেক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়াতেও গতি আসবে। সুপ্রদীপবাবু বলেছেন, আইনজীবী না বিচারক, কে ঠিক কথা বলছেন, ওই এজলাসে সিসিটিভি থাকলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যেত হাইকোর্টের কাছে।

শ্রীরামপুর আদালতের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করেছে। বিচারক সাহাকে ডেকে তাঁর বক্তব্য শুনেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। ওই আদালতের আইনজীবীরা বার কাউন্সিলের কাছে বক্তব্য পেশ করেছেন। তার পরেও বিচারক সাহার এজলাস বয়কট করে চলেছেন আইনজীবীরা। তাঁদের বক্তব্য, ওই বিচারককে না-সরানো পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এ দিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সচিব শঙ্কর দে-র কাছে কাছে সুপ্রদীপবাবুর চিঠি জমা পড়েছে। প্রধান বিচারপতির কাছে সুপ্রদীপবাবুর আর্জি, ওই চিঠিকেই জনস্বার্থ মামলার আবেদন হিসেবে বিবেচনা করা হোক। এই রাজ্যে মোট ১৭১টি আদালত রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ১৩২টি বিচার বিভাগীয় ফোরামও। সুপ্রদীপবাবু প্রতিটি জায়গাতেই সিসিটিভি বসানোর আর্জি জানিয়েছেন তাঁর চিঠিতে।

শুধু শ্রীরামপুর আদালতে বিচারক সাহার এজলাসের গোলমালই নয়। সম্প্রতি ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এজলাসের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, আলিপুর আদালতে মদনবাবুর মামলার সময় আইনজীবীদের কেউ কেউ বিচারককে হুমকি দিয়েছেন। সিসিটিভি থাকলে ওই সব বিষয়ে হাইকোর্ট মন্ত্রী মদনবাবু এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারত বলে মনে করেন সেখানকার আইনজীবীদের একাংশ।

এজলাসে সিসিটিভি লাগানোর প্রস্তাবের বিষয়ে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সারা পৃথিবীর নিরিখেই এটা অভূতপূর্ব ব্যাপার! আদালতের মধ্যে না-হয় ক্যামেরায় সব কিছু ধরা পড়ল। কিন্তু এজলাসের বাইরে! সেখানে তো অনেকে গালাগালি পর্যন্ত দিচ্ছে শুনেছি।” তাঁর মতে, আদালতকে আরও কড়া হতে হবে। নিয়ম মানাতে হবে সকলকেই। নইলে শ্রীরামপুরের মতো ঘটনা ঠেকানো যাবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement