উচ্চ মাধ্যমিকের ধাঁচে এ বার প্রশ্নের ধরনে পরিবর্তন আসছে মাধ্যমিক স্তরেও। আইসিএসই, সিবিএসই-র মতো পরীক্ষার বিচারে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষার্থীরা নম্বরের দিক থেকে বৈষম্যের শিকার এই যুক্তিতেই প্রশ্নের ধাঁচ-ধরন বদলানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পর্ষদ। তাদের ধারণা, এতে পর্ষদের পরীক্ষার্থীরা নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লির ওই সব বোর্ডের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারবে।
পড়ুয়াদের মার্কশিটের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পরিকাঠামো উন্নয়ন বা পঠনপাঠনের রীতিতে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন আনার কথা কিন্তু ঘোষণা করেনি পর্ষদ। শুধু প্রশ্নপত্রের ধরন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নের পদ্ধতি পাল্টেই এই কাজ করা যাবে বলে মনে করেন পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারের স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটি।
আর প্রবীণ শিক্ষা-গবেষকদের অনেকের আপত্তি এখানেই। মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন (এমসিকিউ) বা অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের সংখ্যা বাড়ানোয় আপত্তির কিছু দেখছেন না তাঁরা। তবে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া এই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন অনেক ক্ষেত্রেই নানা প্রশ্নের অবতারণা করতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁদের আশঙ্কা, নম্বরের দৌড়ে পড়ুয়াদের এগিয়ে দিতে গিয়ে আখেরে পঠনপাঠনের মানের সঙ্গে আপস করা হতে পারে। পর্ষদ অবশ্য জানিয়েছে, নয়া পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষকদের পরিচয় ঘটাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
নতুন পদ্ধতি ঠিক কেমন হবে?
প্রতিটি বিষয়ে ১০০-র মধ্যে ১০ নম্বর থাকছে স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে। লিখিত পরীক্ষা ৯০ নম্বরের। তার মধ্যে এমসিকিউ বা অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ৪০ নম্বরের। বাকি ৫০ নম্বরের মধ্যেও যেগুলি বড় প্রশ্ন, তাতে নম্বর থাকবে ২, ৩, ৫। সাহিত্য বা ইতিহাসে তা হবে বড়জোর ৮ বা ১০।
পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৫-য় নবম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রমে পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বদলাচ্ছে প্রশ্নের ধরন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না-হলেও ২০১৭ থেকে মাধ্যমিকেও এমন ধাঁচে প্রশ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বলে জানিয়েছে পর্ষদ। স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, “২০১৭-র মাধ্যমিকে এই ধাঁচেই প্রশ্ন হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে নতুন প্রশ্নের ধরনে কেমন সাড়া মেলে, সেটা নবম শ্রেণিতে চালু করে প্রথম এক বছরে দেখে নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কিছু পরিবর্তন করে নয়া রীতি চালু করা হবে মাধ্যমিকে।”
নতুন রীতি চালু করার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “অন্যান্য বোর্ডের একই মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা আমাদের ছাত্রছাত্রীর থেকে বেশি নম্বর পেয়ে যায়। এই বৈষম্য দূর করতে হবে। তাই প্রশ্নের ধাঁচে পরিবর্তন আনার এই উদ্যোগ।”
কিন্তু যাদের নম্বরের সঙ্গে পাল্লা দিতে এই পরিবর্তন, সেই আইসিএসই, সিবিএসই-র প্রশ্নের ধরনটা কেমন? সেখানে বড় প্রশ্নকে ছোট ছোট ভাগে ভাঙা হয় ঠিকই। তবে অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে বড়জোর ১০ নম্বরের।
এর আগে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ একই যুক্তিতে প্রশ্নের ধরন বদলেছে। আগামী বছর থেকে নয়া পাঠ্যক্রম ও নতুন ধাঁচের প্রশ্নে উচ্চ মাধ্যমিক হওয়ার কথা। সেই ধাঁচে রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, গণিতের মতো বিজ্ঞানের বিষয়ে ৩০ নম্বরের এবং অন্যান্য বিষয়ে ২০ নম্বরের প্রজেক্ট থাকবে। বিজ্ঞানের লিখিত পরীক্ষায় ৩৫ নম্বরের আর বাকিগুলিতে ৪০ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন রাখা হবে। ফলে মাধ্যমিক স্তরে একই আদলে প্রশ্ন তৈরি ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের ঘোষণা ছিল কার্যত সময়ের অপেক্ষা।
অভীকবাবু জানান, আইসিএসই, সিবিএসই-র পাঠ্যক্রম, প্রশ্নের ধরন পর্যালোচনা করেই প্রশ্নের নতুন ধাঁচ তৈরি করা হয়েছে। খাতা দেখার ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দেওয়ার প্রস্তাবও করা হবে পর্ষদের কাছে। আইসিএসই, সিবিএসই-তে কোন প্রশ্নে কী কী শব্দ লিখলে কত শতাংশ নম্বর দিতে হবে, তার উল্লেখ থাকে। রচনাতেও পূর্ণ নম্বর দেওয়া হয় ওই সব বোর্ডে। মাধ্যমিক স্তরেও যাতে নম্বর দেওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে পরীক্ষকের পছন্দ-অপছন্দের উপরে নির্ভরশীল না-হয়, নির্দেশিকা দিয়ে তা নিশ্চিত করতে চায় পাঠ্যক্রম কমিটি। কমিটির প্রস্তাব পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান কল্যাণময়বাবু।