পুরুলিয়ায় দুই কলেজে ফুল ফুটল এবিভিপি-র

এ রাজ্য থেকে সাংসদ, বিধায়ক তারা পেয়েছে আগেই। এ বার ছাত্র রাজনীতিতেও ফুল ফোটাতে শুরু করল গেরুয়া শিবির। ঝাড়খণ্ড-লাগোয়া পুরুলিয়া জেলার দু’টি কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল আরএসএস-প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। কলেজে কলেজে ইউনিট খুলে শিকড় বিস্তারের যে প্রয়াস এবিভিপি শুরু করেছে, তারই প্রথম ফসল তারা ঘরে তুলল এ বার। পুরুলিয়ার যে ১০টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল, তার মধ্যে হুড়া ব্লকের লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজ এবং ঝালদার অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্র সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এবিভিপি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share:

জিতে উল্লাস এবিভিপি সমর্থকদের। সোমবার পুরুলিয়ায়। ছবি: প্রদীপ মাহাতো

এ রাজ্য থেকে সাংসদ, বিধায়ক তারা পেয়েছে আগেই। এ বার ছাত্র রাজনীতিতেও ফুল ফোটাতে শুরু করল গেরুয়া শিবির। ঝাড়খণ্ড-লাগোয়া পুরুলিয়া জেলার দু’টি কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল আরএসএস-প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। কলেজে কলেজে ইউনিট খুলে শিকড় বিস্তারের যে প্রয়াস এবিভিপি শুরু করেছে, তারই প্রথম ফসল তারা ঘরে তুলল এ বার।

Advertisement

পুরুলিয়ার যে ১০টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল, তার মধ্যে হুড়া ব্লকের লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজ এবং ঝালদার অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্র সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এবিভিপি। দু’টি কলেজেই ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। হুড়ার কলেজে গত পাঁচ বছর ধরে তারাই ক্ষমতায়। এ বার সেখানে ছাত্র সংসদের ২১টি আসনের মধ্যে ১৪টিতেই জিতেছেন এবিভিপি প্রার্থীরা। টিএমসিপি জিতেছে মাত্র ৪টি আসনে (গত বার ছিল ১৭টি)। তিনটি আসন ‘টাই’ হয়েছে। জঙ্গলমহলের কলেজ অচ্ছ্রুরামে ২৩টি আসনের মধ্যে ১০টিতে জিতেছে এবিভিপি। টিএমসিপি পেয়েছে ৭টি (গত বার ছিল ২২)। ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের ঝুলিতে গিয়েছে যথাক্রমে ৫টি ও ১টি আসন। পুরুলিয়া শহরে জগন্নাথ কিশোর কলেজেও এ বারই প্রথম তিনটি আসন পেয়েছে এবিভিপি। যার জেরে বিজেপি-র সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার দাবি করেছেন, “পুরুলিয়ার কলেজের এই ফলেই প্রমাণিত, শাসক দলের ছাত্র সংগঠন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।”

সংখ্যার বিচারে দু’টি কলেজ আহামরি কিছু নয়। কলেজ ভোটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ রাজনীতির ফারাকও আছে। তবু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ছাপ কলেজ ভোটেও পড়ে বলে তাকে ইঙ্গিতবাহী হিসেবে ধরা হয়। বাম জমানার শেষ দিকে পরপর কলেজের নির্বাচনে জিতে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন রাজ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিতকেই স্পষ্ট করে তুলেছিল। পুরুলিয়ার ফলাফলের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ না খুললেও তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, “বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার যে কলেজে কলেজে ঢুকতে চাইছে, সেটা আগেই বোঝা যাচ্ছিল। আমাদের ছাত্র সংগঠনকে আরও সতর্ক হতে হবে। বুঝতে হবে, কোথায় সমস্যা হচ্ছে।” টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র অবশ্য প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, “সামনে এবিভিপি লড়লেও তাদের পিছনে রয়েছে ছাত্র পরিষদ, এসএফআই আর চরম বামপন্থী কিছু সংগঠন। তারা বাংলায় সাম্প্রদায়িক শক্তি বাড়ানোর জন্য একজোট হয়েছে! তবে আমার মনে হয়, এটা এবিভিপি-র সাময়িক ক্ষমতা লাভ।”

Advertisement

বাম নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটে এ বার হাওয়া ছিল বিজেপি-র অনুকূলে। ভোটের ফল বেরোলে সেখানে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে পার্শ্ববর্তী এ রাজ্যের তিন জেলা বীরভূম, পুরুলিয়া, বর্ধমানে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের প্রভাব আরও বাড়বে বলে তাঁদের আশঙ্কা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “আমাদের ভুল-ভ্রান্তির জন্যই আমরা আদিবাসী এলাকাতেও জমি হারিয়েছিলাম। আমরা তা অস্বীকার করিনি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যকে যে পাঁকে নিয়ে গিয়ে ফেলেছেন, সেখানেই এখন পদ্ম ফুটছে!” পুরুলিয়ার স্থান-মাহাত্ম্যের দিকেই ইঙ্গিত করে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহেরও দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তাঁর আমলে জঙ্গলমহল হাসছে। পুরুলিয়ায় বিজেপি-র সাংগঠনিক শক্তিও বিরাট নয়। অথচ সেই জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়া থেকেই তৃণমূলের বিনাশ শুরু হল!”

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আদিবাসী-অধ্যুষিত জেলা পুরুলিয়ার হুড়ার কলেজে এবিভিপি-র জয়ে আব্দুল আলিম আনসারি নামে এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। এমবিএ-র এই ছাত্রের হাতেই ওই কলেজ ভোটের দায়িত্ব সঁপেছিলেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। এবিভিপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক (সংগঠন) কে এন রঘুনন্দন এ দিনই কলকাতায় জানান, তাঁদের সংগঠন গণতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। সেখানে যে কোনও সম্প্রদায়ের ছাত্রই আসতে পারেন। আর সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদার বলেছেন, “এ রাজ্যের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবককুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি এবং তার জেরে হিংসা দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ। বাম জমানায় এসএফআই এবং বর্তমানে টিএমসিপি-র দুর্নীতি ও হিংসার দাপট দেখার পর তাঁরা দলীয় রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চান। এবিভিপি-র ঘোষিত নীতিই সেটা। সে জন্যই আমাদের সমর্থন বাড়ছে।”

পুরুলিয়ায় কলেজ ভোটের কিছু দিন আগেই বিজেপি-তে মিশে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি। ঝালদা ও হুড়ার দু’টি কলেজেই আদিবাসী পড়ুয়ারা যথেষ্ট সংখ্যায় রয়েছেন। দিশমের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুফল এবিভিপি পেয়েছে বলে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের ধারণা। টিএমসিপি-র বিক্ষুব্ধ অংশ এবং এসএফআইয়ের ভোটের একটা অংশও এবিভিপি-র দিকে গিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন