প্রতিবাদের জন্মদিনে ধিক্কার রাজনীতিকেই

নিহত কলেজ ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর ২১ বছরের জন্মদিনে বাড়িতে তাঁর ছবির সামনে জ্বলে উঠেছিল একুশটি মোমবাতি। বিকেলে সেই বাড়ির সামনে থেকেই পথে নামল প্রতিবাদ-মিছিল। প্রতিবাদকে হাতিয়ার করেই দিনভর সৌরভময় হয়ে থাকল বামনগাছি।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৪:০৫
Share:

নিহত সৌরভ চৌধুরীর জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ। রবিবার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর সামনে। ছবি: দেবাশিস রায়।

নিহত কলেজ ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর ২১ বছরের জন্মদিনে বাড়িতে তাঁর ছবির সামনে জ্বলে উঠেছিল একুশটি মোমবাতি। বিকেলে সেই বাড়ির সামনে থেকেই পথে নামল প্রতিবাদ-মিছিল। প্রতিবাদকে হাতিয়ার করেই দিনভর সৌরভময় হয়ে থাকল বামনগাছি।

Advertisement

এক তরতাজা যুবককে খুন করা দুষ্কৃতী-রাজের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ শুধু নয়। সেই খুনের পরে শাসক দলের রাজনীতির কূট-কৌশলের প্রতিও ধিক্কার উঠে এল প্রতিবাদীদের মধ্যে থেকে। বামনগাছির মানুষের সঙ্গে এ দিন একজোট হয়েছিলেন সুটিয়ার প্রতিবাদী মঞ্চ এবং কামদুনির সমব্যথীরাও। বালির নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত থেকে শুরু করে কার্টুন-মামলায় নিগ্রহের শিকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্রও এ দিন হয়ে ওঠেন এই মিছিলের মুখ।

দু’দিন আগেই এ রাজ্যের শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় নিজে সৌরভদের বাড়ি এসে তাঁর পরিবারকে কোনও রকম রাজনীতি না-করে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাতে সৌরভের কাছের লোকেরা কিছুটা হলেও ভরসা পেয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের সভায় মুকুলের ভূমিকায় তাঁরাই চরম হতাশ। মুকুল বসিরহাটে সৌরভকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী বলে দাবি করেছিলেন। প্রতিবাদীদের ক্ষোভ, মুকুলবাবু তথা সরকার ভেবে-চিন্তেই সৌরভকে তাঁদের সমর্থক-কর্মী বলে প্রমাণ করে এই খুনের সঙ্গে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের যোগসূত্র ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

Advertisement


সৌরভের বাড়িতে ছবি হাতে মা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

সৌরভের রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা তুলে জলঘোলা করার এই চেষ্টায় রীতিমতো আহত সৌরভের পরিবার। তাঁর দাদা সন্দীপ চৌধুরী বলেন, “মুকুল রায় ইচ্ছে করে বিষয়টি গুলিয়ে দিতে চাইছেন। এর থেকে ন্যায়বিচার আমরা কত দূর পাব, তা নিয়েই সন্দেহ হচ্ছে।” সৌরভের বন্ধুরা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, এ ভাবে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনের কোমর ভাঙা যাবে না।

বিকেল চারটের প্রতিবাদ-মিছিল এ দিন বামনগাছির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সৌরভের বাড়ির সামনেই ফিরে আসে। সৌরভের ছোটবেলার বন্ধু সুমনা বিশ্বাস ও আরও কয়েক জন মিলে ফেসবুকের মাধ্যমে আরও একটি মিছিল সংগঠিত করেছিলেন। বারাসত কাছারি ময়দান থেকে বামনগাছি আসেন তাঁরা। সুমনা, অভ্রজিৎ বিশ্বাস প্রমুখ প্রতিবাদীরা বলছিলেন, “আমরা বারাসতের কলেজে কলেজে আবেদন করছিলাম। কিন্তু টিএমসিপি-র ছাত্র নেতারা পরিষ্কার বলেন, উপরমহলের চাপ আছে। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই আসেননি।”

আন্দোলন দানা বাঁধতেই নানা ভাবে তাতে ফাটল ধরানোর চেষ্টা যে এ রাজ্যে কার্যত দস্তুর হয়ে উঠেছে, তা ঘুরে-ফিরে বলেছেন মিছিলের অনেক প্রতিবাদীই। বরুণ বিশ্বাসের দাদা অসিত বিশ্বাস বলছিলেন, “আন্দোলন ভাঙতে শাসক দলের নানা কৌশল থাকে। প্রতিবাদীর মুখোশধারী হয়েও অনেকে ভিড় করেন।” এক সুর কামদুনির মৌসুমি কয়ালেরও। অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, “সৌরভের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতিটা আসলে শাসক দলই করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন