প্রতিরোধ নয়, সিপিএমের ডাক বুথে যাওয়ার

বীরভূমে এক কর্মী খুন হয়ে গিয়েছেন। তার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে ‘ধিক্কার মিছিল’ হচ্ছে। খাস কলকাতায় দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। প্রহৃত হয়েছেন বরো চেয়ারম্যান। ভাঙড়-সহ আরও কিছু এলাকায় প্রচারে বেরিয়ে আক্রান্ত হন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। শাসক দলের জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যেই সরাসরি বুথের দখল নেওয়ার ডাক দিচ্ছেন!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

বীরভূমে এক কর্মী খুন হয়ে গিয়েছেন। তার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে ‘ধিক্কার মিছিল’ হচ্ছে। খাস কলকাতায় দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। প্রহৃত হয়েছেন বরো চেয়ারম্যান। ভাঙড়-সহ আরও কিছু এলাকায় প্রচারে বেরিয়ে আক্রান্ত হন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। শাসক দলের জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যেই সরাসরি বুথের দখল নেওয়ার ডাক দিচ্ছেন! খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তবু ভোট-প্রক্রিয়ার মাঝে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘প্রতিরোধে’র ডাক দিচ্ছে না আলিমুদ্দিন। কারণ, ভোটের সময় এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কথায়, “কোথাও স্থানীয় ভাবে মানুষ যদি প্রতিরোধ করেন, করবেন। কিন্তু আমরা এখন প্রতিরোধের কথা বলছি না। তাতে ভুল বার্তা যেতে পারে। মনে হতে পারে, আমরা বোধহয় মারামারি করতে বলছি! কিন্তু আমরা সংঘর্ষ চাইছি না।” রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ‘সন্ত্রস্ত’ এলাকাতেই সিপিএম নেতৃত্ব এখন মানুষের কাছে শুধু বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন। বিমানবাবুদের আশা, শাসক দলের তাণ্ডব বা হুমকি সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ যদি বুথে গিয়ে লাইন দেন, তা হলে তাঁদের ভোট রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই পড়বে।

বর্ধমানের মতো কিছু জেলার সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য ইতিপূর্বেই প্রতিরোধের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিমানবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, সামগ্রিক ভাবে সেটা আপাতত দলের কৌশল নয়। রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রথম পর্বে কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলার একাংশে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভয় দেখানো এবং জবরদস্তি ভোট করানোর অভিযোগে প্রাথমিক ভাবে সরব হয়েছিল বামেরা। তবে পরে দেখা গিয়েছে, ভোটের শেষ প্রহর পর্যন্ত বুথে বুথে ভালই লাইন থেকেছে। চারপাশের ঘটনাক্রম দেখে মানুষ যদি ভোটযন্ত্রেই ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটান, তা হলে আর ‘প্রতিরোধে’র কথা বলে এখন পরিস্থিতি জটিল করে তোলার দরকার নেই বলেই আলিমুদ্দিনের যুক্তি। এমনিতে অবস্থার ফেরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাংগঠনিক শক্তিই এখন বহু জায়গায় বামেদের নেই। সারদা-কাণ্ড থেকে শুরু করে একের পর এক ঘটনায় শাসক দলের জন্য পরিস্থিতি যখন কিছুটা হলেও বিরূপ, তখন প্রতিরোধের কথা বলে বামেরা তাদের সাংগঠনিক অক্ষমতাকে আরও প্রকট করতে চাইছে না বলেও বাম শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা।

Advertisement

তার চেয়ে বরং নানা জায়গায় তারা ‘আক্রান্ত’ ভোটের সময় এই ছবি বজায় রেখে আম জনতার একাংশের সহানুভূতি পেতে চাইছেন বাম নেতারা। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারের বক্তব্য, “অন্য কিছু না। আমরা শুধু বলছি, ভোটটা দিতে আসুন।” জেলা স্তরের এক সিপিএম নেতার মন্তব্য, “কোনও কোনও জায়গায় আমরা প্রচার করতে পারছি না সন্ত্রাসের জন্য। কিন্তু প্রচার নেই, এটাও এক ধরনের প্রচারের কাজ করে দিচ্ছে!”

জেলায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে একাধিক কর্মসূচি সেরে ফেলেছেন বিমানবাবু। রবিবারই তিনি যান হাওড়ার বালি থেকে বেলুড় হয়ে লিলুয়ার ভোটবাগান পর্যন্ত পদযাত্রায়। তাঁর একটাই বার্তা, মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ভোটের দিন বুথে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে সকলকে। বালিতে যেমন এখনও সিপিএমের বহু কার্যালয় বন্ধ। প্রতিনিয়ত হুমকি, গোলমালের ভয়ে প্রকাশ্যে দলের কর্মসূচি চালানোই দায়। এমন এলাকায় নিজে পায়ে হেঁটে ঘুরে বিমানবাবু বলছেন, “মিছিলে যাদের দেখছি, বেশির ভাগের বয়সই আমার থেকে অনেক কম! আমি যদি এখনও এত পরিশ্রম করতে পারি, অন্যেরাই বা পারবেন না কেন? বেশি করে নুন-চিনি মিশিয়ে জল খান! আর ভোটের দিন পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকুন!”

ভোট-প্রচারের মধ্যেই নানা জেলায় বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ হয়ে-থাকা কার্যালয় ফের খোলার খবর এসেছে আলিমুদ্দিনে। বেশির ভাগ জায়গাতেই বন্ধ কার্যালয় আবার খোলার সময় উপস্থিত থাকছেন স্থানীয় প্রার্থীরা। এলাকার মানুষের প্রতিক্রিয়াও এ সব ক্ষেত্রে ‘বিরূপ’ নয় বলে রিপোর্ট পেয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব। শাসক দলকে পাল্টা প্রতিরোধের বেশি হুঁশিয়ারি দিতে গিয়ে পরিস্থিতির স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করতে চান না তাঁরা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “মানুষকে প্রতিবাদ করতে বলছি। আর এখন প্রতিবাদের সব চেয়ে বড় অস্ত্র মানুষের হাতেই আছে তাঁদের ভোট! সেই অস্ত্র তাঁরা ঠিকমতো প্রয়োগ করলে আর কী চাই?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন