নিজের পছন্দের সংস্থাকে বিশ্ব বাংলা সম্মেলন আয়োজনের বরাত পাইয়ে দিতে কোনও প্রভাব খাটাননি বলে দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
বৃহস্পতিবার নবান্নে অমিতবাবু বলেন, “কোনও রকম সরকারি নিয়ম ভাঙা হয়নি এবং আমি কখনও ইঙ্গিতেও নিয়ম ভাঙার ব্যাপারে কাউকে অনুরোধ করিনি।” বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংক্রান্ত খবর মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মন্তব্য অর্থমন্ত্রীর। এই খবরে তাঁর ও সরকারের মানহানি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
আগামী জানুয়ারি মাসে কলকাতায় যে ‘গ্লোবাল বেঙ্গল ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ বা বিশ্ব বাংলা সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে রাজ্য সরকার, তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য সংস্থা বাছাই করতে গত মাসে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। নবান্ন সূত্রের খবর, এ জন্য সর্বনিম্ন দর দিয়েছিল যে সংস্থাটি, তাকে পছন্দ হয়নি প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের। তাই তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়। সেই চাপের মুখে কাজ করতে অস্বীকার করে সংস্থাটি। তখন প্রাথমিক ভাবে বাছাই হওয়া বাকি দু’টি সংস্থার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা সর্বনিম্ন দরে কাজ করতে রাজি কি না। কিন্তু সর্বনিম্ন দরের থেকে দুই-তিন গুণ দর দেওয়া সংস্থা দু’টি রাজি হয়নি। এই অবস্থায় আসরে নেমে অর্থমন্ত্রী শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে নির্দেশের সুরে অনুরোধ করেন, ‘আপনারা নিয়মে আটকে না-থেকে একটু নমনীয় হোন।’ যে সংস্থাটি সর্বোচ্চ দর দিয়েছে, তাদেরই কাজটা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দেন তিনি।
অমিতবাবুর এই পরামর্শ ফিরিয়ে দেন নিগমের এমডি কৃষ্ণ গুপ্ত। তিনি অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, নিয়ম মোতাবেক কোনও কাজের জন্য সর্বনিম্ন দরের চেয়ে বেশি টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এবং যা পরিস্থিতি, তাতে
নতুন করে দরপত্র চাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কৃষ্ণবাবুর অনড় অবস্থানের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন অমিতবাবু।
নবান্ন সূত্রে পাওয়া খবরের সত্যতা যাচাই করার জন্য বুধবার রাতে আনন্দবাজারের তরফে অর্থমন্ত্রীকে ফোন করা হয়েছিল। কোনও জবাব না পেয়ে এসএমএস-ও করা হয়। কিন্তু অমিতবাবু সাড়া দেননি। অগত্যা তাঁর বক্তব্য ছাড়াই বৃহস্পতিবারের কাগজে খবরটি প্রকাশিত হয়। তার পরেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অমিতবাবুর দাবি, “এই সংক্রান্ত টেন্ডারের প্রতিটি পদক্ষেপ নির্দিষ্ট সরকারি অর্থবিধি মেনে নেওয়া হয়েছে।” মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
কিন্তু সংস্থা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী ঘটনা ঘটেছে, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি অমিতবাবু। টেন্ডারে সর্বনিম্ন দর কে দিয়েছিল, তারা কেন কাজ করতে রাজি হল না তা নিয়েও কোনও ব্যাখ্যা দেননি। যে সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই সংস্থা মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিল কি না, থাকলে তাদের কী ভাবে বাছাই করা হয়েছিল এবং সে জন্য তারা কত টাকা পেয়েছিল, সে সব নিয়ে প্রশ্ন করারও কোনও সুযোগ অর্থমন্ত্রী দেননি। পরে ফোন করা হলে সাড়া দেননি যথারীতি।
মুখ্যমন্ত্রী আনন্দবাজার পত্রিকা না-পড়ার ফতোয়া জারি করলেও বৃহস্পতিবার সকালে কাগজ দেখেই তৎপর হয়ে ওঠেন অর্থমন্ত্রী। নবান্নের খবর, এ দিন বাজেট সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বর্পূণ বৈঠক ছিল তাঁর। সব বাতিল করেন। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে দুপুরে নবান্নে আসেন কৃষ্ণ গুপ্ত। এর কিছু পরেই জানানো হয়, সাংবাদিক বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী। অমিতবাবু যখন সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন তখন আগাগোড়া তাঁর পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন কৃষ্ণবাবু। নিজের বক্তব্য শেষ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এ বার মিস্টার গুপ্ত বলবেন।” কৃষ্ণবাবু কিন্তু কিছুই না বলে সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেন। অমিতবাবুর অবশ্য দাবি, কৃষ্ণ তাঁর প্রতিবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সাংবাদিক বৈঠকের পরে অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি বিলি করা হয় সাংবাদিকদের। অর্থমন্ত্রী বা তাঁর দফতরের লেটারহেডে নয়, সাদা কাগজে বিবৃতিটি লেখা হয়। তাতে কোনও মেমো নম্বর নেই। সইও নেই অর্থমন্ত্রীর। তাঁর দফতরে খোঁজ করা হলে জানানো হয়, এ ভাবেই বিবৃতি বিলির নির্দেশ দিয়েছেন অমিতবাবু। নবান্ন সূত্রের খবর, আর এক আমলা, তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্যও সম্প্রতি বিদ্রোহ করেছেন। সরকারি কাজের প্রচারে সংস্থা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বিরুদ্ধে গিয়ে দরপত্রের প্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারে সেই খবরও প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক বৈঠকে অত্রিবাবু হাজির ছিলেন না। তিনি কোনও প্রতিবাদপত্র লিখেছেন বলেও তথ্য-সংস্কৃতি দফতর সূত্রে জানানো হয়নি।