প্রযুক্তি নিয়ে অবশেষে বাংলার চাষির পাশে ইজরায়েল

ভাসা ভাসা কথা হয়েছিল বছর চোদ্দো আগে। পশ্চিমবঙ্গের কৃষিতে বিশেষ প্রযুক্তি দিয়ে ভাবে সাহায্য করবে ইজরায়েল। জ্যোতি বসু তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ২০০০ সালে তিনি ইজরায়েল গিয়েছিলেন। সেখানেই কথা হয়। কথা হয়েছিল, কম জল দিয়ে তুলনায় কম ফলনশীল জমিতে কী ভাবে সোনালি ফসল ফলানো যায়, তারই প্রযুক্তি বাংলায় নিয়ে আসবে ইজরায়েল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০২:৫৮
Share:

ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত অ্যালন উসপিজ। —নিজস্ব চিত্র।

ভাসা ভাসা কথা হয়েছিল বছর চোদ্দো আগে। পশ্চিমবঙ্গের কৃষিতে বিশেষ প্রযুক্তি দিয়ে ভাবে সাহায্য করবে ইজরায়েল। জ্যোতি বসু তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ২০০০ সালে তিনি ইজরায়েল গিয়েছিলেন। সেখানেই কথা হয়। কথা হয়েছিল, কম জল দিয়ে তুলনায় কম ফলনশীল জমিতে কী ভাবে সোনালি ফসল ফলানো যায়, তারই প্রযুক্তি বাংলায় নিয়ে আসবে ইজরায়েল।

Advertisement

তার পরে এক যুগেরও বেশি সময়ে বাংলার জমিতে অনেক ফসল ফলেছে। কিন্তু বিশেষ ইজরায়েলি প্রযুক্তির সাহায্যে সোনালি ফসল ফলানোর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। ১৪ বছর পরে অবশেষে বাংলার কৃষিতে আসতে চলেছে ইজরায়েলি প্রযুক্তি। সে-বার মৌখিক কথাবার্তার পরে ব্যাপারটা তেমন এগোয়নি। এ বার বিষয়টি পাকতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই নিয়ে কথা হয়েছে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত অ্যালন উসপিজের।

ইজরায়েলি বিজ্ঞানীরা হুগলি জেলার কোথাও একটি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলতে যাচ্ছেন, জানিয়েছেন উসপিজ। তাঁর কথায়, “আমরাই প্রস্তাব দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে আরও উন্নত মানের সব্জির চাষ করা সম্ভব, গবেষণা হবে মূলত তা নিয়েই। গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে তৈরি উন্নত মানের সব্জি যাতে এখানকার মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ফলনে জোয়ার আনতে পারে, সেটা দেখা হবে।” সেই গবেষণার ফল কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য।

Advertisement

কিন্তু ইজরায়েলি প্রযুক্তি কেন?

একটি কারণ যদি হয় ভারত-ইজরায়েল চুক্তি, দু’নম্বর কারণ গবেষণা এবং কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগে ইজরায়েলের সাফল্য। বছর পাঁচেক আগে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তি আদানপ্রদানের চুক্তি হয়েছিল ইজরায়েলের। সেই চুক্তি অনুযায়ী ইজরায়েল কৃষি-সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে চায় এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ঠিক যেমনটি তারা আগেই পৌঁছে দিয়েছে গুজরাতে। তখন ওই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। শুধু কৃষি নয়, গুজরাতে হিরে শিল্প এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নেও হাত লাগিয়েছে ইজরায়েলি সরকার। সেই মোদী এ বার দিল্লির মসনদে। উসপিজ বলছেন, “এর ফলে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। উনি (মোদী) এক দিকে যেমন বাস্তববুদ্ধি-সম্পন্ন, তেমনই কাজের।”

নিজেদের দেশে উসপিজেরা প্রতিনিয়ত জোর দিচ্ছেন গবেষণার উপরে। তাই বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক বৈজ্ঞানিক পুস্তিকা প্রকাশিত হয় তাঁদের দেশ থেকেই। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গবেষণা এবং বাণিজ্য-অর্থনীতি যাতে হাত ধরাধরি করে চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছে ইজরায়েল। উসপিজের কথায়, “গবেষণাগার থেকে বাজার পর্যন্ত আমরা সরাসরি রাস্তা তৈরি করেছি। গবেষণাগারের পরীক্ষার ফল সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাজারে।” ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূতের হিসেব অনুযায়ী ১৯৯২ সালে ভারতের সঙ্গে তাঁদের ১৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। ২০১২ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৫০০ কোটি ডলার। দূষিত জল শোধন, কম জলে চাষ, উন্নত মানের সব্জি চাষের ক্ষেত্রে তাঁরা গবেষণা সফল। গবেষণার সেই ফলই পশ্চিমবঙ্গকে দিতে চান তাঁরা।

“এই ধরনের প্রস্তাব আমাদের কাছে সব সময়েই স্বাগত,” বলেছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী অরূপ রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন