মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটূক্তি করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা বাপি পালকে। শুক্রবার তাঁর জামিনের খবর পেয়ে স্বস্তিতে বাপির মা সুলোচনাদেবী। চাঁচল আদালত চত্বরে বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে অশালীন মন্তব্য করে ধৃত হরিশচন্দ্রপুরের যুবক বাপি পালের জামিনের আর্জি মঞ্জুর করল আদালত। সরকার পক্ষের আইনজীবী বাপির জামিনের বিরোধিতা করলেও শুক্রবার চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম তনুময় কর্মকার জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেন। ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় পুলিশকে ভর্ৎসনাও করেছেন বিচারক। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের ভর্ৎসনার ব্যাপারে মন্তব্য করেননি।
বাপিকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের বিধি যে মানা হয়নি, তা মনে করিয়ে দিয়ে বিচারক পুলিশকে সতর্ক করেন। জানান, সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কম, এমন মামলার ক্ষেত্রে প্রথমে অভিযুক্তকে ডেকে তাঁর বক্তব্য নথিভুক্ত করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশ তা করেনি। বাপিকে হাতকড়া পরানোর জন্যও পুলিশকে ভর্ৎসনা করে সতর্ক করেন বিচারক। পুলিশের যুক্তি ছিল, অভিযুক্ত পালালে তাদের চাকরি নিয়ে টানাটানি হতে পারে। বিচারক জানান, সে যুক্তি মানা যায় না। এর পরে বাপিকে এক হাজার টাকার বন্ডে জামিন দেন তিনি। বাপির বিরুদ্ধে কটূক্তি করার অভিযোগে আরও দু’টি ধারা (আইপিসি ৫০৬ ও ৫০৯) মামলায় যোগ করার অনুমতি চায় পুলিশ। বিচারক জানান, ২২ অক্টোবর সে আর্জির শুনানি হবে। বাপির মা সুলোচনাদেবী বলেন, “আগের দিন যতটা হতাশ হয়েছিলাম, আজ ততটাই খুশি।” তবে বাপি রয়েছেন মালদহ সদরের সংশোধনাগারে। জামিনের নির্দেশ নিয়ে সেখানে যেতে রাত হয়ে যাওয়ায় এ দিন তিনি ছাড়া পাননি।
আগের দিন বাপির জামিন হয়নি কেন? বিশেষজ্ঞেরা জানান, আইনজীবী না থাকলেও জামিনযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত নিজেই জামিনের পক্ষে সওয়ালের আবেদন জানাতে পারেন। বাপি তা করেননি। আইনজীবীদের একাংশ জানান, এই আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ (এ) এবং ৬৭ ধারায় এটিই প্রথম মামলা। ওই ধারা দু’টিকে অনেকে জামিন-অযোগ্য বলেই জানতেন। বাপির আইনজীবী হিমাদ্রিশেখর দাস, খাইরুল আনাম, রমেন দাস ও ফারুক শাহ বিচারককে জানান, জামিনযোগ্য অপরাধে মামলা হয়েছে। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝিতে বুধবার বাপির জামিনের আবেদন করা যায়নি। বিচারক জানান, এটি আইনজীবীদেরই ত্রুটি। তিনি বলেন, “আনন্দবাজার লিখেছে বলেই কি ধারা দু’টিকে জামিনযোগ্য বলছেন?” আইনজীবীদের নিরুত্তর দেখে তিনিই জানান, ২০০৮-এর আগে ওই ধারা দু’টি জামিন-অযোগ্য ছিল। পরে জামিনযোগ্য হয়েছে। আনন্দবাজার ঠিকই বলেছে। পুজোর ছুটিতে এখন বিশেষ আদালত চললেও, এ ক্ষেত্রে অপরাধ জামিনযোগ্য হওয়ায় এবং আইনজীবীদের ত্রুটির কথা শুনে ‘ন্যাচারাল জাস্টিসের’ জন্য আবেদনের শুনানি হয়েছে বলে বিচারক জানান।
এ দিন বাপির জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী গোলাম মুস্তাফা কামাল। তিনি বলেন, “আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলার নেই। আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিনের বিরোধিতা করেছি।”