অরুণ জেটলির সঙ্গে করমর্দন অমিত মিত্রের। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতির রং দেখা হবে না। রাজ্যগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই চলবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। দিল্লিতে দরবার করার সময়ে অরুণ জেটলির কাছ থেকে এই বার্তাই পেলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
বাজেটের প্রস্তুতি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অমিতবাবু সেখানেই রাজ্যের ঋণ সমস্যার সমাধান ও বাড়তি অর্থ সাহায্যের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সরব হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রের কাছে ঋণের সমস্যা সমাধান ও সুদ মকুবের দাবি জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও পঞ্জাবের ঋণের সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থ মন্ত্রকে সচিব স্তরের কমিটিও তৈরি হয়েছিল। তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রণব মুখোপাধ্যায়, তারপরে পি চিদম্বরমের জমানায় বার বার অমিতবাবু দিল্লিতে এসে বৈঠক করেছেন। কোনও লাভ হয়নি।
নরেন্দ্র মোদীর জমানায় নতুন করে সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন অমিতবাবু। ভোটের পরে মোদী জানিয়ে দিয়েছিলেন, উন্নয়নের প্রশ্নে কোনও রাজ্যের সঙ্গেই বিমাতৃসুলভ মনোভাব নেবেন না তিনি। পশ্চিমবঙ্গকেও উন্নয়নের প্রশ্নে সাহায্য করা হবে। আজ একই কথা বলেছেন জেটলিও। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলেননি ঠিকই। কিন্তু জেটলি জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র ‘কোঅপারেটিভ ফেডেরালিজম’ বা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি নিয়েই চলতে চায়। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা যে সব দাবি তুলেছেন, তার সবই খতিয়ে দেখা হবে। যতটা সম্ভব বাজেটে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণে নিজে না এলেও অমিত মিত্র ও মুকুল রায়কে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক দলাদলিকে সাংবিধানিক সম্পর্কের মধ্যে আনতে চাননি। অমিতবাবু জানিয়েছেন, এ বারও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি দিল্লিতে এসেছেন। রাজ্যকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাহায্য করার বিষয়ে উন্নয়নের প্রশ্নটিই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত, মত তাঁর। অমিতের যুক্তি, “রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির হার এখন ৭.৭১%। কেন্দ্রের সাহায্য পেলে তা ১০ শতাংশে পৌঁছতে পারে।”
একই সুর শোনা গিয়েছে অরুণ জেটলির গলাতেও। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে জেটলির বক্তব্য, দেশের আর্থিক বৃদ্ধিকে ফের টেনে তোলার জন্য রাজ্যগুলিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতেও রাজ্যগুলির সাহায্য প্রয়োজন। উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও রাজ্যগুলিকে আরও স্বাধীনতা দিতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্রীয় সরকার। জেটলির যুক্তি, কোনও একটি রাজ্য পিছিয়ে থাকলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারকে টেনে তোলা সহজ নয়। একই ভাবে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করার জন্যও রাজ্যগুলির সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
আজ জিএসটি চালুর জন্য কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বাবদ ক্ষতিপূরণের দাবি জানানোয় অমিত অন্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সমর্থন কুড়িয়েছেন। আবার পশ্চিমবঙ্গের মাথায় বিপুল ঋণের বোঝার কথায় বলায় কেরল ও পঞ্জাবের মতো অন্য ঋণগ্রস্ত রাজ্যও তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন। ইউপিএ জমানায় অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির সমস্যা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব চতুর্দশ অর্থ কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ আসার আগে কিছু করা সম্ভব নয়। আজ অমিতবাবু দাবি জানিয়েছেন, “অর্থমন্ত্রীকে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”