কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুক্রবার পাড়ুইয়ের সাগর ঘোষ হত্যা মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু সরকার বা বিরোধী, কোনও পক্ষই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি আদালতে পেশ করতে না-পারায় এ দিন সেই শুনানি হল না। তুমুল বিতণ্ডা হল সরকার ও বিরোধী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র জানিয়ে দেন, সোমবার তাঁরা মামলাটি শুনবেন।
গত বছর ২১ জুলাই চতুর্থ দফার পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে বীরভূমের পাড়ুইয়ে কসবা অঞ্চলের বাঁধ-নবগ্রামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষ খুন হন। তাঁর ছেলে হৃদয় ঘোষ বাবার হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তদন্তের জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বে একটি স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে দেন। কিন্তু সিটের দেওয়া কোনও রিপোর্টেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি তিনি। কিছু প্রশ্নের উত্তর চেয়ে তিনি ১১ এপ্রিল ডিজি-কে হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন।
আর ১১ এপ্রিলই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ পাড়ুই মামলাটি বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালত থেকে নিজেদের বেঞ্চে নিয়ে যায়। ডিজি-কে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বিচারপতি দত্ত যে-নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিন সপ্তাহের জন্য তার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে তারা। সেই স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন নিহতের ছেলে হৃদয় ঘোষ। সর্বোচ্চ আদালত সেই মামলা খারিজ করে নির্দেশ দেয়, মামলাটি চলবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চেই। সেই নির্দেশের প্রতিলিপি এ দিন পেশ করতে পারেনি কোনও পক্ষই।
এ দিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ওঠে নির্ধারিত সময়েই। বেঞ্চ রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছিল। সরকার পক্ষ সেই হলফনামা নিয়েও এসেছিল। এ দিন মামলাটি শুনতে চাননি বলেই প্রধান বিচারপতি হলফনামাটি নেননি।
হৃদয়বাবুর আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের দাবি ছিল, এ দিন মামলাটির শুনানি হওয়া উচিত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না-থাকায় জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় শুনানিতে আপত্তি জানান। প্রধান বিচারপতিও শীর্ষ আদালতের নির্দেশ দেখতে চান। এই অবস্থায় দুই আইনজীবীর মধ্যে তর্ক শুরু হয়ে যায়। এবং সেই তর্ক এক সময় ব্যক্তিগত স্তরে পৌঁছয়।
তার পরেই প্রধান বিচারপতি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, এ ভাবে চললে তিনি মামলাটি অন্য বিচারপতির এজলাসে পাঠিয়ে দেবেন। উত্তরে অরুণাভবাবু বলেন, কলকাতা হাইকোর্টে একটি ডিভিশন বেঞ্চ ছাড়া অন্য যে-কোনও ডিভিশন বেঞ্চে তাঁরা যেতে প্রস্তুত। যদিও তিনি কোনও ডিভিশন বেঞ্চের নাম উল্লেখ করেননি। এর পরে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সোমবার এই মামলার শুনানি হবে।