পদোন্নতির পর দিনই অমিতের ভোজে দীনেশ

মুকুল রায়ের বিদ্রোহের আশঙ্কায় দীনেশ ত্রিবেদীকে দলের সহসভাপতি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। দীনেশকে আজ দেখা গেল নেত্রীর কাছে ‘অচ্ছুত’ দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের ছেলের বিয়ের ভোজে। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে দীনেশ যে শুধু উপস্থিত থাকলেন তা নয়, দীর্ঘ সময়ও কাটালেন সেখানে। সন্ধে-সন্ধে পৌঁছে যান তিনি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

মুকুল রায়ের বিদ্রোহের আশঙ্কায় দীনেশ ত্রিবেদীকে দলের সহসভাপতি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। দীনেশকে আজ দেখা গেল নেত্রীর কাছে ‘অচ্ছুত’ দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের ছেলের বিয়ের ভোজে।

Advertisement

দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে দীনেশ যে শুধু উপস্থিত থাকলেন তা নয়, দীর্ঘ সময়ও কাটালেন সেখানে। সন্ধে-সন্ধে পৌঁছে যান তিনি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অশোক সিঙ্ঘলের সঙ্গে আলাপও করেন। ব্যারাকপুরের সাংসদ বেশ কিছু ক্ষণ কাটান বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি রাহুল সিংহ ও রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সঙ্গেও। গুজরাতিতে কথা বললেন মোদী-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গেও। ভোজসভায় তৃণমূল থেকে একমাত্র দীনেশের এই উপস্থিতি সবারই নজর কেড়েছে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন, “আপনি তো এখন এলিভেটেড ভাইস-প্রেসিডেন্ট!” সহাস্যে দীনেশ বলেছেন, “আমি তো আর দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট নই। তৃণমূলের ভাইস প্রেসিডেন্ট!” কাউকে কাউকে জবাব দিয়েছেন, “এই পদ পেতে অনেকটা দেরিও হয়ে গেল!” তৃণমূলের খবর, দীনেশ যে অমিতের ছেলের বিয়ের ভোজে যাবেন, মমতা তা জানতেন। হতে পারে তিনি দলনেত্রীকে জানিয়েই এসেছেন। কিন্তু মমতার এখন আর সেই রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নেই যে বারণ করবেন। তবে মমতা তাঁকে দলে নয়া দায়িত্ব দেওয়ার পরের দিনই দীনেশের এই অনুষ্ঠানে হাজির হওয়াকে বিশেষ আমল দিতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জাতীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, “ব্যক্তিগত ভাবে দীনেশ আমন্ত্রিত ছিলেন। দলের কিছু বলার নেই।” তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সর্বভারতীয় তৃণমূল কমিটিতে ১১ জনের মধ্যে দীনেশ নেই। তাঁকে নতুন পদ দিয়ে দলনেত্রী সম্মান দেখিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিরাট কোনও ভূমিকা তাঁর জন্য রাখা হয়নি। তাই দীনেশ ব্যক্তিগত পর্যায়ে কী করলেন, তা নিয়ে প্রয়োজনের বেশি গুরুত্ব দিতে চায় না দল।

এক সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় মোদী মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তৃণমূল নেত্রী সেখানে যাননি। মোদী দীনেশকে পাঠানোর কথা বললেও মমতা তাঁকে যেতে দেননি। সেটি ছিল সাংবিধানিক অনুষ্ঠান। আর আজ অমিতের ছেলের বিয়ের ভোজসভার আয়োজন হয়েছে বিজেপির সদর দফতরের লাগোয়া বাংলোতেই। দিল্লির ১১ অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতর। পাশের বাংলোটি ৯ অশোক রোড। যেখানে এত দিন অরুণ জেটলি থেকে এসেছেন। বিজেপি নেতা রামলালও এই বাংলোতে বসেই দলের কাজ করেন। ফলে একেবারে বিজেপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাজির হলেন দীনেশ। আলোচনার পর রাহুল সিংহ বলেন, “দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে বিজেপির অনেক নেতারই ভাল সম্পর্ক। কিছু ক্ষণ গল্প হল। তবে ওঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হল, রাজনৈতিক ভাবে তিনি কিছুটা হতাশ।”

Advertisement

ক’দিন আগেই গুজরাতের কচ্ছে এক অনুষ্ঠানে মুখ খুলেছিলেন দীনেশ। পরে জানিয়েছিলেন, তৃণমূল মোদীর নীতির বিরোধিতা করছে ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজে দেশের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। মমতার নাম না করেই দীনেশ মন্তব্য করেছিলেন, “ব্যক্তিবিশেষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা নেই। আমি দেশের প্রতি দায়বদ্ধ।” দীনেশের সেই বক্তব্যের পরে এক মাস হতে চলল। তার পর আজ যে ভাবে তিনি বিজেপি সভাপতির আয়োজিত অনুষ্ঠানে তৎপর ছিলেন, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।

এই ভোজসভা হয়ে উঠেছিল বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মিলনস্থল। মোদী সরকারের মন্ত্রী, বিভিন্ন মুখ্যমন্ত্রী, কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালরা এসেছিলেন। সপরিবার উদ্ধব ঠাকরে, প্রকাশ সিংহ বাদলের মতো শরিক দলের নেতাদের সঙ্গেই আডবাণী, জোশীরাও ছিলেন। ছিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব, শরদ পওয়ার, রাজীব শুক্লও। এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন