পদত্যাগের ইঙ্গিত মনোজের, নাটকের মঞ্চে চিড় বহাল

তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত দুই নাট্যব্যক্তিত্বের সংঘাত মেটাতে দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে বসে হস্তক্ষেপ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন চারেক আগে নবান্নের বৈঠকে মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে মমতা বলে দিয়েছিলেন, যে ভাবে হোক ঝগড়া মেটাতেই হবে। কিন্তু মঙ্গলবার বরফ গলার ইঙ্গিত দূরে থাক, উল্টে নাট্যজগতের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও ঘোরালো হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০২
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বসু। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত দুই নাট্যব্যক্তিত্বের সংঘাত মেটাতে দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে বসে হস্তক্ষেপ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন চারেক আগে নবান্নের বৈঠকে মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে মমতা বলে দিয়েছিলেন, যে ভাবে হোক ঝগড়া মেটাতেই হবে। কিন্তু মঙ্গলবার বরফ গলার ইঙ্গিত দূরে থাক, উল্টে নাট্যজগতের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও ঘোরালো হল। এ দিন রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নাট্য অ্যাকাডেমি থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র।

Advertisement

এই পদত্যাগ করতে চাওয়ার মধ্যে অবশ্য কোনও ‘রাজনৈতিক কারণ নেই’ বলে দাবি করেছেন নাট্য অ্যাকাডেমির সভাপতি মনোজবাবু। তাঁর কথায়, “যাঁদের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের সঙ্গটাই আমার ভাল লাগছে না। কাজের পরিবেশটা ঠিক লাগছে না। যে ভাবে কাজ হচ্ছে, তা নাট্যসমাজের পক্ষে ক্ষতিকর।” এ দিন দুপুরে এবিপি আনন্দ চ্যানেলে মনোজবাবুর ইস্তফার অভিপ্রায় প্রকাশ হওয়ার পরে অবশ্য শুধু সংস্কৃতি মহল নয়, রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়। মনোজবাবুর মতো বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সরকারি পদ ছাড়লে শাসক দলের জন্য বিরূপ বার্তা তৈরি হবে বলে তৃণমূলের অন্দরে অনেকের অভিমত।

তবে এ দিন সন্ধ্যায় মনোজবাবু বলেন, “নানা মহল থেকে আমায় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে। সুতরাং কিছুটা সময় নিয়েই পদত্যাগের চিঠি লিখব।” কয়েক দিন ধরেই নাট্যজগতের ভিতরকার পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা ঘোষ। তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ নাট্যকর্মীদের সংগঠন নাট্যস্বজনের সাধারণ সম্পাদক পদে দেবেশ-অর্পিতা ইস্তফা দিয়েছেন। সরে এসেছেন নাট্য স্বজনের সভাপতি ব্রাত্যও। দেবেশ নাট্য অ্যাকাডেমি, মিনার্ভা রেপার্টরি বা সরকারি হল কমিটি থেকেও নিজেকে বিযুক্ত করেছেন। এ দিন মনোজবাবু বলেন, “অনেকেই আছেন যাঁরা নিজেরা পরিচ্ছন্ন নন, কিন্তু নানা ধরনের অভিযোগ আনছেন। তাতে নাট্য অ্যাকাডেমিরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এর মধ্যে থাকতে ভাল লাগছে না।”

Advertisement

তবে কার বিরুদ্ধে তাঁর ইঙ্গিত, তা বলতে চাননি মনোজবাবু। অর্পিতা ও দেবেশের দাবি, তাঁদের সঙ্গে এ দিনই মনোজবাবুর কথা হয়েছে। এবং তিনি তাঁদের নিয়ে কিছু বলেননি। অর্পিতার কথায়, “মনোজবাবু নাট্য অ্যাকাডেমি থেকে সরে গেলে তা নাট্যচর্চার জন্য ভাল হবে না।” দেবেশ বলেন, “মনোজবাবুর মতো প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্বের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি কীই বা বলতে পারি!” ব্রাত্য নাট্য অ্যাকাডেমির মুখ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “মনোজবাবু এখনও ইস্তফা দেননি। দেখা যাক না, কী হয়।” নাট্যজগতে তৃণমূলের দুই মুখ ব্রাত্য বনাম অর্পিতা দ্বৈরথের ছায়া পড়ে মিনার্ভা ও রবীন্দ্রসদনে আসন্ন জাতীয় নাট্যোত্‌সব নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনেও। ব্রাত্য সেখানে বলেন, “বন্ধুদের মধ্যে কী হয়েছে, তা বাইরে বলতে চাই না। এ সব বলে দেওয়াটা আমার সংস্কৃতি নয়।” অর্পিতা এ দিন কোচবিহারে সরকারি নাট্যমেলায় তাঁর নাটকের শো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। মিনার্ভার উত্‌সব থেকে ‘সময়াভাবে’ নিজের নাটকের শো বাতিল করলেও তিনি বলেছেন, “আমি আর পিছনে তাকাতে চাই না।” তবে ব্রাত্য-অর্পিতা দু’জনের ঘনিষ্ঠমহলেই এই চাপান-উতোর পর্ব নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।

নতুন নাট্য উত্‌সবের ঘোষণায় ব্রাত্য বলেন, “নাট্যজগতে কোনও রকম ‘আমরা-ওরা’ রাখতে চাই না। এটা নাটকের তালিকা দেখলেই বুঝবেন।” বিজেপি সাংসদ পরেশ রাওয়ালের নাটকও থাকছে উত্‌সবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন