লোকসভা নির্বাচনের প্রচার থেকে ভোট পর্ব পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরে রাখতে রাজ্যে পুলিশ-পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ওই পর্যবেক্ষকেরা হবেন উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তা। তাঁদের মধ্যে ডিআইজি পদমর্যাদার নীচের কেউই থাকবেন না বলে কমিশন সূত্রের খবর। সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় পুলিশ-পর্যবেক্ষকেরা নজর রাখবেন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে। সেই সঙ্গেই সাধারণ প্রশাসন ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করতে হবে তাঁদের।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রিপোর্ট নিয়মিত নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে পাঠানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সব রিপোর্ট নিয়মিত পর্যালোচনা করে তারই ভিত্তিতে কোথায় ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, রাজ্যের পুলিশকর্তাদের সেই নির্দেশ দেবেন পুলিশ-পর্যবেক্ষকেরা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালিত হল কি না, তা যাচাই করে সেটাও জেলা প্রশাসনকে জানাবেন ওই সব পর্যবেক্ষকই।
পুলিশ-পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে কমিশন যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কথা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরকে জানানো হলেও ঠিক কত জন এই ধরনের নজরদার বাংলায় আসবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার দুর্গাদাস গোস্বামী জানান, ওই কেন্দ্রের জন্য এক জন পুলিশ-পর্যবেক্ষক আসছেন বলে তাঁরা জেনেছেন। তবে ঠিক কবে থেকে রাজ্যে পুলিশ-পর্যবেক্ষকেরা আসবেন, সেই বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য এখনও নেই।
২০১১ সালে বিধানসভার ভোটেও নির্বাচন কমিশন ছ’জন পুলিশ-পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল বাংলায়। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে তাঁরা সারা রাজ্য চষে বেড়িয়েছিলেন। তবে তখন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। এ বার অন্তত নির্বাচন কমিশন এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। তা হলে পুলিশ-পর্যবেক্ষক কেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিচ্ছে না কেউই। তবে কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, অন্যান্য রাজ্যেও একই ভাবে পুলিশ-পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বৃহস্পতিবার বলেন, “পুলিশ-পর্যবেক্ষক নিয়োগের ধোঁয়াশা কাটাতে উপনির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, লোকসভা কেন্দ্র ও বুথের স্পর্শকাতরতার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ও টহলের বিষয়টি দেখভাল করবেন কমিশন নিযুক্ত পুলিশ-পর্যবেক্ষক।” মানসবাবু উপনির্বাচন কমিশনারকে জানান, পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহারই করা হয়নি। এই ভোটে যেন তেমনটা না-ঘটে।
কমিশন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে নির্বাচনের আগে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে বারবার। একই রকম অভিযোগ ওঠে ভোটের সময় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। সেই বিষয়টিকে কমিশন যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। তা ছাড়া ভোটের যথাসম্ভব আগে থেকে এলাকায় পুলিশি টহলের উপরেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত কেন্দ্র বা এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলছে কমিশন।