বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের সন্দেহভাজনরা দেশের বাইরে পালাতে পারেনি বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। আশপাশের রাজ্যে গা-ঢাকা দিয়ে থাকাটাও কঠিন করে তুলতে তাঁরা এখন উঠে পড়ে লেগেছেন।
প্রধান অভিযুক্ত মহম্মদ ইউসুফ ফেরার। গা-ঢাকা দিয়েছে আরও ৯ জন। তদন্তে তাদের যে সব ছবি পাওয়া গিয়েছে, তার প্রতিলিপি ইতিমধ্যেই বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা বা উত্তরপ্রদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজনরা কেন দেশ ছাড়তে পারেননি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা? তাঁদের যুক্তি, দেশের বাইরে পালাতে চাইলে বাংলাদেশেই স্বাভাবিক গন্তব্য হওয়া উচিত এই জঙ্গিদের। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গি দমনে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-কে অভিযানে নামানোর ফলেই এ বাংলায় আসতে বাধ্য হয় জামাতের দুষ্কৃতীরা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বর্ধমান বিস্ফোরণের কথা জেনেছে। ফলে, বর্ধমান কাণ্ডের পরে বাংলাদেশের পুলিশের সামনে গিয়ে পড়তে চাইবে না ইউসুফরা। গোয়েন্দারা জেনেছেন বাংলাদেশের রাজশাহি জেলার আহলে হাদিস ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই ছিল পালিয়ে গিয়ে ইউসুফদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু, বর্ধমান কাণ্ডের পরে সেখানেও তল্লাশি অভিযান চালান হয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, “বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে যে নামগুলি পাওয়া গিয়েছে, নিয়মমাফিক সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া চলছে। সীমান্ত এলাকাতেও যাতে দুষ্কৃতীরা ঘাঁটি গাড়তে না পারে, তার জন্যও নজরদারি চলছে, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তদন্তকারীরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া নেপালে পালিয়ে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা ছিল। এর আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে নাশকতামূলক কাজের পরে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই সেখানকার পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছ থেকে যথাসম্ভব সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে নেপাল পুলিশের সাহায্য নিয়েই ইয়াসিন ভাটকলের মতো জঙ্গিদের ধরা গিয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন লুকনোর জন্য ইউসুফরা কোনও ধর্মীয় স্থানই পছন্দ করে। নেপালে তেমন সুযোগ অল্প।
গোয়েন্দাদের ধারণা, তাই বেশি দূর যেতে পারেনি ইউসুফরা। নিম্ন অসমের সঙ্গে যে হেতু ইউসুফ-শাকিলদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, তাই অসমে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার দিকটিও খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানে কড়া নজরদারি শুরু করেছে এনআইএ। জামাতুল মুজাহিদিন জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই অসম থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে অসমে পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি হয়তো নেবে না ইউসুফরা। ধরপাকড় শুরু হয়েছে অন্য রাজ্যেও। চেন্নাইয়ে তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বর্ধমান কাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শাকিলের মোবাইল কললিস্ট থেকে জানা গিয়েছে, চেন্নাইয়ে সে বেশ কয়েক বার ফোন করেছিল।
এনআইএ-র এক কর্তার কথায়, “ইউসুফরা বিস্ফোরণের পরেও দু’তিন দিন শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় ছিল বলে জানতে পেরেছি।” এই তথ্য জানা গিয়েছে ওদের মোবাইল ঘেঁটে। কিন্তু, তার পর থেকেই ইউসুফদের মোবাইল ফোন বন্ধ করা আছে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সম্ভবত কোথাও গিয়ে নতুন সিম নিয়েছে পলাতকেরা। কিন্তু, যে ভাবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, তাতে খুব একটা শান্তিতে নেই তারা।