ফিরে এল কুকুর, সপ্তাহ কাটলেও নিখোঁজ বিশ্বদীপ

পুলিশ-কুকুর দিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও বিশ্বদীপের কোনও চিহ্ন মেলেনি, শনিবার জানিয়ে দিল সিকিম পুলিশ। এই মুহূর্তে ২৪ জন অভিজ্ঞ গাইডের একাধিক উদ্ধারকারী দল বাখিম সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। কিন্তু সাত দিন পরেও কোনও রকম সূত্র না মেলায় হতাশা আর উদ্বেগ দু’টোই বাড়ছে। যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার কার্যকরী উপদেষ্টা দীপঙ্কর ঘোষ শনিবার ইয়কসাম থেকে জানালেন, ঠিক কোন জায়গা থেকে বিশ্বদীপ পথ হারিয়েছেন, সেই জায়গাটাও জানা নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭
Share:

পুলিশ-কুকুর দিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও বিশ্বদীপের কোনও চিহ্ন মেলেনি, শনিবার জানিয়ে দিল সিকিম পুলিশ। এই মুহূর্তে ২৪ জন অভিজ্ঞ গাইডের একাধিক উদ্ধারকারী দল বাখিম সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। কিন্তু সাত দিন পরেও কোনও রকম সূত্র না মেলায় হতাশা আর উদ্বেগ দু’টোই বাড়ছে।

Advertisement

যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার কার্যকরী উপদেষ্টা দীপঙ্কর ঘোষ শনিবার ইয়কসাম থেকে জানালেন, ঠিক কোন জায়গা থেকে বিশ্বদীপ পথ হারিয়েছেন, সেই জায়গাটাও জানা নেই। সম্ভাব্য আশঙ্কার উপর ভিত্তি করেই উদ্ধারকাজ চলছে। আগামী কাল ইয়কসামের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা কনজারভেশন কমিটি’ ও সিকিম পুলিশের যৌথ উদ্যোগে আরও কয়েক জন দক্ষ গাইডকে উদ্ধারকাজে পাঠানো হবে বলে জানালেন তিনি।

ইয়কসামেরই ট্রেকিং আয়োজক সংস্থা ‘রেড পান্ডা ট্রেকস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস’-এর মাধ্যমে জোংরি-গোয়েচা লা ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বদীপ। গত শনিবার বাখিম থেকে নিখোঁজ ওই কলেজ পড়ুয়া।

Advertisement

ট্রেক শেষে ফিরে বিশ্বদীপের দলের জার্মান সদস্য ড্যানিয়েল এ দিন জানান, বাখিমে পৌঁছনোর আগেই বেশ পিছিয়ে পড়েন বিশ্বদীপ। খানিক উপরে ওঠার পর বিশ্বদীপকে দূরে দেখতেও পান তিনি। তার পরে আর অপেক্ষা না করে এগিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তী গ্রাম চোখা পৌঁছনোর পরে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি বিশ্বদীপের।

তাঁর দলের গাইড ভিকি জানালেন, বিশ্বদীপ বারবারই জানিয়েছিলেন, তিনি পথ চেনেন। ২৭ তারিখ দুপুর আড়াইটা নাগাদ বিশ্বদীপ ইয়কসামের সংস্থা ‘রেড পান্ডা’-র মালিক ধনরাজ গুরুঙ্গকে ফোন করে জানান পথ হারিয়ে ফেলেছেন। ধনরাজ তখনই ভিকিকে ফোন করে জানান সে কথা। ভিকির দাবি, তত ক্ষণে চোখা পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। খবর পেয়েই বাখিমের পথে নেমে এসে খোঁজ শুরু করেন বিশ্বদীপের। পরের দিন, অর্থাৎ ২৮ তারিখও দলের বাকি সদস্যদের চোখায় অপেক্ষা করতে বলে বাখিমে নেমে এসে বিশ্বদীপের খোঁজ চালান তিনি। কিন্তু খোঁজ না পেয়ে ফের চোখা ফিরে গিয়ে দলের বাকি সদস্যদের নিয়ে জোংরির পথে এগিয়ে যান তিনি।

একটি প্রতিষ্ঠিত সংস্থার মাধ্যমে ট্রেকিংয়ে গিয়ে জলজ্যান্ত যুবকের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। গত বছর পুজোর সময় ওই সংস্থার সঙ্গেই জোংরি-গোয়েচা লা রুটে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন হাবরার যুবক ইমন সেনগুপ্ত। তাঁর অভিযোগ, দলে বিদেশি ট্রেকার থাকলে তাঁদের সঙ্গেই দ্রুত হাঁটেন গাইডরা। ভারতীয় ট্রেকারদের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এমনকী ট্রেকারের নাম-ঠিকানা-পরিচয়পত্র ইত্যাদির রেকর্ডও জমা রাখা হয় না বলে জানালেন ইমন। ফলে কোনও বিপদের সময় তৎপর পদক্ষেপ করাও সম্ভব হয় না।

এই অভিযোগ উঠেছে বিশ্বদীপের ক্ষেত্রেও। ২৭ তারিখ থেকে নিখোঁজ বিশ্বদীপের সন্ধানে বাখিমে প্রথম উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয় তিন দিন পরে, ৩০ তারিখে। তার পর থেকে লাগাতার সন্ধান চললেও কোনও খোঁজ মেলেনি এখনও।

তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে ইমন বললেন, “ট্রেক শেষ করে ফিরতি পথে কোকচুরাংয়ের জঙ্গল পেরোনোর সময়েও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। আমাকে একা রেখেই এগিয়ে গিয়েছিল গাইড। কোনও ভাবে পথ ভুল করলে একই পরিণতি আমারও হতে পারত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন