বেকার হ্যায়, বর্ষপূর্তির আগে ক্ষোভের মুখে সারদা কমিশন

বুধবার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে সারদা কমিশনের। আর তার আগের দিনই কমিশনের অফিসে দাঁড়িয়ে ছত্তীসগঢ় থেকে আসা সারদার দুই পাওনাদার সৈয়দ আসিফ আলি ও সতীশপ্রকাশ সিংহের সখেদ মন্তব্য, “সারদা কমিশন বেকার হ্যায়! লেকিন ইডি তেজ সে চল রহা হ্যায়।” সারদা-কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তৎপরতার খবর বেরোতেই কলকাতায় চলে এসেছেন ওঁরা। সারদার কর্মকাণ্ডে তাঁরাও প্রতারিত।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪৮
Share:

বুধবার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে সারদা কমিশনের। আর তার আগের দিনই কমিশনের অফিসে দাঁড়িয়ে ছত্তীসগঢ় থেকে আসা সারদার দুই পাওনাদার সৈয়দ আসিফ আলি ও সতীশপ্রকাশ সিংহের সখেদ মন্তব্য, “সারদা কমিশন বেকার হ্যায়! লেকিন ইডি তেজ সে চল রহা হ্যায়।”

Advertisement

সারদা-কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তৎপরতার খবর বেরোতেই কলকাতায় চলে এসেছেন ওঁরা। সারদার কর্মকাণ্ডে তাঁরাও প্রতারিত। এই দু’জনের দাবি, ওই সংস্থার কাছে তাঁদের পাওনা প্রায় ১.২৫ কোটি টাকা।

কী ভাবে? সারদা গোষ্ঠী এক সময় গ্লোবাল অটোমোবাইলস নামে একটি মোটরবাইক সংস্থা কেনে। ওই সংস্থার মোটরবাইক বিক্রির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ডিলার নিয়োগ করা হয়। রায়পুরের শিবনগরের শিবম্ অটোমোবাইলসের মালিক আসিফের কথায়, “নিজেদের তৈরি মোটরবাইক সংস্থার জন্য সারদা ছত্তীসগঢ়ে ১১ জন ডিলার নিয়োগ করে। প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা আগামও নেয়। কিন্তু কোথায় মোটরবাইক, জমা টাকা নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যান সারদার প্রতিনিধি।” এ নিয়ে রায়পুরে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি। একই অভিযোগ জমা পড়েছে ছত্তীসগঢ়ের অন্যান্য জায়গাতেও। আসিফ জানান, সারদা কমিশন গঠনের পর তাঁরা নথিপত্র সমেত আবেদনও জমা দেন। তাঁর অভিযোগ, গত এক বছরে বার সাতেক কমিশনে এসেছেন। কিন্তু কেউ কথাই শোনেনি।

Advertisement

সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী ও ছেলেকে সম্প্রতি ইডি গ্রেফতার করায় প্রায় ধামাচাপা পড়া সারদা-কাণ্ড নয়া মোড় নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে সে খবর জেনে মঙ্গলবার ফের কলকাতায় এসেছেন আসিফ।

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সতীশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগো গ্রাহক, জাগো’-র ছত্তীসগঢ়ের সভাপতি। তিনি জানান, ওই রাজ্যেও বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল সারদা। এখন তাঁরা সঙ্কটে পড়েছেন। তাঁদের হয়ে কথা বলতেই সতীশ কলকাতায়। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “সল্টলেকে ইডি-র অফিসে গিয়ে কাগজপত্র দেখাতে গুরুত্ব দিয়ে সব দেখলেন তাঁরা। পরামর্শ দেন, কমিশনে গিয়ে সব জানাতে। কিন্তু কমিশন বলছে, এখন তাদের কিছু বলার নেই।”

এ দিনই সারদা কমিশনের এক বছর পূর্ণ হল। গত বছরের ২৪ এপ্রিল কমিশন কাজ শুরু করে। রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, কমিশনের মেয়াদ ছ’মাস। পরে দু’দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আগামী অক্টোবরে বর্ধিত মেয়াদও শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কমিশনের কাজকর্ম খুবই ঢিমে তালে চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আমানতকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি কী ভাবে ঘটল, তার তদন্ত করাও কমিশনের বিচার্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে। কত টাকা বাজার থেকে তোলা হয়েছে, তা জানাতে হবে। সারদার সম্পত্তির পরিমাণ কত তার হিসেব বার করতে হবে। কিন্তু কোথায় কী?

ওই সব ব্যাপারে যে খুব অগ্রগতি হয়নি, তা স্বীকার করছেন কমিশনের কর্তারাও। কমিশনের এক অফিসারের কথায়, “গরিব ও নিম্নবিত্ত আমানতকারীদের কথা ভেবে তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার কাজকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে কমিশন।” যাঁরা ১০ হাজার টাকার কম ওই সংস্থায় রেখেছিলেন, সেই শ্রেণির প্রায় ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার আমানতাকারীর টাকা চেকের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে বলে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন জানান।

রাজ্য জুড়ে সারদা গোষ্ঠীর বহু সম্পত্তি রয়েছে। সেগুলির অবস্থান জানার জন্য বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক-সহ রাজ্যের ভূমি কমিশনারকেও তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাস সাতেক আগে। কিন্তু এখনও সমস্ত রিপোর্ট না পৌঁছনোয় কমিশনও অস্বস্তিতে। যদিও কমিশন সূত্রের খবর, আপাতত কয়েকটি সম্পত্তির তথ্য হাতে এসেছে। সেগুলি নিলাম করা হবে শীঘ্রই। তবে সারদার মোট সম্পত্তির পরিমাণ কত, জানতে চাইলে শ্যামলবাবু বলেন, “ওই তথ্য এখনও তৈরি হয়নি।” এমনকী সারদা সংস্থার যে সব গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তদন্তকারী দলের ঢিলেমির জন্য তার নিলামের কাজও আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কমিশনের অন্যতম সদস্য অম্লান বসু অবশ্য বলেন, “যাঁদের কাছে সারদা টাকা পেত, শুনানির পাশপাশি এখন তাঁদেরও ডাকা হচ্ছে। কারণ টাকা আদায় করা হলে আমানতকারীদের পাওনা মেটাতে সুবিধা হবে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে ১.৩৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। আদায়ের ক্ষেত্রে সিটেরও অবদান আছে বলে তিনি জানান।

কিন্তু সারদার টাকা কোথায় গেল, কারা লাভবান হয়েছেন এই সব প্রশ্নের জবাব এখনও দূর অস্ত। এই ব্যাপারে যে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি, সুপ্রিম কোর্টও তা বলেছে। এই অবস্থায় আপাতত ইডি-র তৎপরতাই ভরসা রাখছেন ছত্তীসগঢ়ের ওই বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন