বিদায়ের আভাসেই কি বৈঠকি চাল বিমানের

দিল্লিতে দলের বৈঠক সেরে কলকাতায় ফিরেই ফের বৈঠকের ডাক। উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলা সম্মেলন সেরে দুপুরে শহরে পা দিয়ে বিকেলে আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টকে তলব! হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক সেরে ফিরলেন বৃহস্পতিবার। এবং এ বারও ফিরে বিকেলে প্রথমে বামফ্রন্ট, তার পরে ১৩টি বাম দলের বৈঠক! এত বৈঠকের ঘনঘটার নির্যাস কী? বিশেষ কিছু না। পরবর্তী বৈঠকের বাতাবরণ তৈরি করে রাখা ছাড়া!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share:

দিল্লিতে দলের বৈঠক সেরে কলকাতায় ফিরেই ফের বৈঠকের ডাক। উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলা সম্মেলন সেরে দুপুরে শহরে পা দিয়ে বিকেলে আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টকে তলব! হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক সেরে ফিরলেন বৃহস্পতিবার। এবং এ বারও ফিরে বিকেলে প্রথমে বামফ্রন্ট, তার পরে ১৩টি বাম দলের বৈঠক! এত বৈঠকের ঘনঘটার নির্যাস কী? বিশেষ কিছু না। পরবর্তী বৈঠকের বাতাবরণ তৈরি করে রাখা ছাড়া!

Advertisement

হালফিল এমনই বিস্ময় জাগিয়ে চলেছেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু! কারণে-অকারণে যে কোনও দিন, যে কোনও সময় বৈঠক! সিপিএমের রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য ভাষণ-প্রিয় রাজ্য সম্পাদককে নিয়ে নাজেহাল! এ বার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বামফ্রন্টের শরিকদের মধ্যেও। মার্চে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে বিমানবাবুর বিদায়ের প্রবল সম্ভাবনা। তবে ফ্রন্টের চেয়ারম্যান পদে তিনিই সম্ভবত থেকে যাবেন। দলে চর্চা চলছে, বিদায় আসন্ন বুঝেই কি বহুগুণে ‘সক্রিয়তা’ বাড়িয়ে তুলেছেন ৭৪ বছরের এই নেতা? দেখাতে চাইছেন বামফ্রন্ট পরিচালনায় তিনি যারপরনাই তৎপর? হায়দরাবাদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যসমাপ্ত বৈঠকের অবসরে প্রকাশ কারাট বুঝিয়ে দিয়েছেন, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে তিনি সরেই যাচ্ছেন। সরে যাওয়ার কথা বলে কারাট বিমানবাবুর বিদায়ের পথ আরও প্রশস্ত করে দিয়েছেন বলে সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা। সেই সঙ্গেই তাঁদের আশঙ্কা, হায়দরাবাদ ফেরত বিমানবাবুর বৈঠকের ঘটা কি এর পরে আরও বেড়ে যাবে?

বাম শিবিরেই প্রশ্ন উঠেছে, এত বৈঠক ছেড়ে রাস্তায় নামলেই কি কাজের কাজ হতো না? আলিমুদ্দিনে বৈঠকের পরে এ দিন বিমানবাবু বলেন, বীরভূমে এক বধূর উপরে অত্যাচারের ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁরা বড় ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা ভাবছেন! এক বাম শরিক নেতার প্রশ্ন, “ঘটনা টাটকা থাকতে থাকতে পথে নামতে হয়। ঘটনাস্থলে যেতে হয়। এত আলোচনার পরেও কর্মসূচি ভাবনার স্তরে থাকলে আর কী করা যাবে!” বিমানবাবু বৈঠকের অন্দরে বলেছেন, শনিবারের মধ্যে কর্মসূচি জানাতে হবে সব বাম দলকে। বাইরে তাঁর মন্তব্য, “ওই ঘটনা নিয়ে মহিলা সংগঠন সব জেলায় কর্মসূচি নিয়েছে। পথে নামিনি, তা ঠিক নয়!”

Advertisement

যদিও নিষ্ফলা বৈঠকের বিরক্তি বোঝাতে বাম নেতারাই শেষ-জানুয়ারির চার দফা কর্মসূচির উদাহরণ দিচ্ছেন। নেতাজির জন্মদিনকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ ঘোষণার দাবিতে আজ ২৩ জানুয়ারি সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে নেতাজি মূর্তি পর্যন্ত মিছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরের প্রতিবাদে কাল, শনিবার ধর্মতলা থেকে মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে মিছিল করে গিয়ে সমাবেশ, ২৬ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে ‘মানব বন্ধন’ এবং ৩০ জানুয়ারি ‘সম্প্রীতি দিবস’ পালন করতে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ এই নিয়ে অন্তত তিন বার বামফ্রন্টের বৈঠক হয়েছে। বিমানবাবু সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন বারতিনেক। তবু এ দিন আবার সেই একই কাহিনি! খোদ বিমানবাবু অবশ্য বলছেন, “আগের বামফ্রন্টে কথা হয়েছিল, দু’টি উপনির্বাচনে বাম প্রার্থীদের নাম নিয়ে কথা হবে। সেটাই এ দিনের বৈঠকে হয়েছে। ২৬ তারিখ এসইউসি কলকাতায় তাদের কর্মসূচিতে বাকি বামদলগুলিকে আহ্বান জানিয়েছে। তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”

বাম নেতাদেরই একাংশ বলছেন, লোকসভা ও বিধানসভার দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনেই প্রার্থী সিপিএমের। দলে নাম ঠিক হওয়ার পরে তাই বাম শরিক নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে নিলেও চলতো! কিন্তু আলিমুদ্দিনের কয়েক পেয়ালা চা বাঁচিয়ে আর লাভ কী? তাই বৈঠক হতেই হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন