বাঁধা গত ছাড়লে তবেই সাড়া, বুঝেছে আলিমুদ্দিন

যুগের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের বদলানোর ফায়দা কী, দেরিতে হলেও এখন বুঝছে সিপিএম! তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আত্মপ্রকাশ করেছে আলিমুদ্দিন। দীর্ঘদিনের জড়তা কাটিয়ে পুরনো লব্জ ছেড়ে ঘরোয়া ভাষায় ও ভঙ্গিতে আম জনতার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে লোকসভা ভোটের আগে এ বার নানা বিষয়ে আলাদা পুস্তিকা বাজারে এনেছে তারা। প্রতিটি পুস্তিকাই ছোট, নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক এবং তার বক্তব্যও স্পষ্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৩
Share:

সিপিএমের হরেক প্রচার পুস্তিকার প্রচ্ছদ। —নিজস্ব চিত্র।

যুগের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের বদলানোর ফায়দা কী, দেরিতে হলেও এখন বুঝছে সিপিএম!

Advertisement

তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আত্মপ্রকাশ করেছে আলিমুদ্দিন। দীর্ঘদিনের জড়তা কাটিয়ে পুরনো লব্জ ছেড়ে ঘরোয়া ভাষায় ও ভঙ্গিতে আম জনতার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে লোকসভা ভোটের আগে এ বার নানা বিষয়ে আলাদা পুস্তিকা বাজারে এনেছে তারা। প্রতিটি পুস্তিকাই ছোট, নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক এবং তার বক্তব্যও স্পষ্ট। এবং তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য, এই এক গুচ্ছ পুস্তিকাই সিপিএমের চেনা ঘরানার বাইরে!

ছাপানো বই ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, দুই ক্ষেত্রে এই যুগোপযোগী হয়ে ওঠার প্রয়াসের ফলও তাড়াতাড়িই বুঝতে পারছে সিপিএম। তাতে সাড়া মিলছে ভাল। উৎসাহিত হয়ে সিপিএম নেতৃত্ব এখন ছাপানো পুস্তিকার বিষয়বস্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিচ্ছেন। লক্ষ্য, হাতে হাতে এবং ওয়েব-পথে, দু’ভাবেই যথাসম্ভব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো।

Advertisement

বস্তুত, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা বা কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও-এর মতো চেনা বুলির বাইরে বেরিয়ে যুগের উপযোগী, সহজে আকর্ষণীয় স্লোগান নিয়ে মানুষের দরবারে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে আলোচনা হচ্ছে এ রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই। দু’বছর আগে দলের সম্মেলন প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই বিষয়ে চর্চা হয়েছিল। তার পরে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে বিষয়ভিত্তিক পুস্তিকাকে নির্বাচনের প্রচারে বেশি ব্যবহার করছে সিপিএম। তবে লোকসভা ভোটে সেই চেষ্টা আরও সুসংহত রূপ পেয়েছে এক গুচ্ছ পুস্তিকার মধ্যে। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “এই ধরনের পুস্তিকা ভাল সাড়া পাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের টিমও ভাল কাজ করেছে। এখনও পর্যন্ত ৭টা হয়েছে। আরও তিন-চারটে পুস্তিকা করে একটা ফোল্ডার তৈরির পরিকল্পনা আছে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর হরেক প্রতিশ্রুতির পরিণতি নিয়ে ‘রেল-ভাঁওতা’, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, উত্তরবঙ্গকে সুইৎজারল্যান্ড, নারী নির্যাতন, নন্দীগ্রামের ষড়যন্ত্র এই রকম বিষয় ধরে ধরে পুস্তিকা করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ‘তৃণমূল আসলে কী’ শীর্ষক পুস্তিকা, যেখানে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের যোগাযোগের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটির প্রচ্ছদেই রঙিন ছবি ও নানা কার্টুন। ভিতরে বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্টাজের উদ্ধৃতি। সিপিএমের এক সদস্যের কথায়, “আমাদের বই বা দলিল মানেই লাল-সাদা রং বেশি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ বারের পরিকল্পনা অন্য রকম।”

দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “যে সব দলিল দলের অন্দরে কর্মীদের মধ্যে আলোচনার জন্য, তার চরিত্র এক রকম। আর এই পুস্তিকা ভোটারদের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এই বিষয়টা মাথায় রাখা হয়েছে।” সিপিএমের এ বারের প্রচার কমিটির দায়িত্বে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মৃদুল দে। আম জনতা সহজে বুঝবেন, এমন ভাষার দিকে খেয়াল রেখেই পুস্তিকা তৈরি করেছেন মৃদুলবাবু। লক্ষাধিক পুস্তিকা জেলায় পাঠানোর পরে আরও ছাপার অর্ডার দিতে হচ্ছে।

আনুষ্ঠানিক ভাবে ফেসবুক এবং টুইটারে অ্যাকাউন্ট খোলার পরে দলের বাইরে অনেক মানুষই তাঁদের এলাকার ঘটনার কথা সোশ্যাল মিডিয়া মারফত সিপিএম নেতৃত্বের নজরে আনছেন। যা আলিমুদ্দিনের বাড়তি পাওনা। এক জন যেমন টুইটারেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তিনি আপলোড করার জন্য বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করে দিতে চান। তাঁর প্রস্তাব মেনেও নেওয়া হয়েছে। দলের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ইউনিটে সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “দু’দিন আগে খোলা ফেসবুক পেজে ‘লাইক’ পড়েছে ১৪ হাজারের বেশি, টুইটারে ফলোয়ার ৫২০। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানান, এখনও পর্যন্ত দু’লক্ষের বেশি মানুষ আমাদের পেজ দেখেছেন। তার মানে এত মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন