বিধানসভায় সাম্প্রদায়িকতার তির ঘুরে এল শাসক দলের দিকেও

নামে সর্বদল প্রস্তাব। সেই আলোচনার ফাঁকেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন হজম করতে হল শাসক দলকে! বিরোধীদের সঙ্গেই যারা সর্বদল প্রস্তাবে সই করেছিল! বিধানসভার অধিবেশনের শেষ দিনে আলোচনা ছিল ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প সঙ্কোচন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে দু’টি সর্বদল প্রস্তাবের উপরে। প্রথম আলোচনায় বিরোধী বাম ও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, রাজ্য সরকার কেন বেশ কয়েক মাস ধরে ১০০ দিনের কাজে মজুরি বাবদ ৭৩৩ কোটিরও বেশি টাকা বকেয়া রেখেছে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
Share:

নামে সর্বদল প্রস্তাব। সেই আলোচনার ফাঁকেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন হজম করতে হল শাসক দলকে! বিরোধীদের সঙ্গেই যারা সর্বদল প্রস্তাবে সই করেছিল!

Advertisement

বিধানসভার অধিবেশনের শেষ দিনে আলোচনা ছিল ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প সঙ্কোচন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে দু’টি সর্বদল প্রস্তাবের উপরে। প্রথম আলোচনায় বিরোধী বাম ও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, রাজ্য সরকার কেন বেশ কয়েক মাস ধরে ১০০ দিনের কাজে মজুরি বাবদ ৭৩৩ কোটিরও বেশি টাকা বকেয়া রেখেছে? আর দ্বিতীয় আলোচনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অভিযোগ এনেছে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করার। প্রথমটার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ঘাড়েই বন্দুক রেখে নিস্তার পেতে চেয়েছে শাসক দল। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার তোপ দাগতে গিয়ে একই তির নিজেদের দিকেও আসায় তৃণমূলের অস্বস্তি বেশি।

বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য ছাড়া আর সব দলই সর্বদল প্রস্তাবে সই করেল। শমীকের প্রশ্ন, তিনি যখন সই করেননি, সেই প্রস্তাবকে সর্বদল বলা যায় কী ভাবে? বিজেপি-র বিরুদ্ধে যে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অভিযোগ আসবে, তা জেনেই এ দিন পাল্টা আক্রমণে যান শমীক। তাঁর বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদীরা সন্ত্রাসবাদীই। এই প্রসঙ্গে যাঁরা বিভাজনের কথা বলছেন, তাঁরাই আসলে বিভাজন করছেন। এই সূত্রেই শমীক বলেন, “সকালে কালীঘাটে পুজো দিয়ে মা কালী, আর বিকেলে হাত উপরে করে হে আলি, হে আলি এই রাজনীতি কত দিন চলবে? বারবার দাঙ্গা করার চক্রান্ত কথাটা উচ্চারণ করেই বা কী বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে?” নাম না করলেও শমীকের স্পষ্ট ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই। যিনি বিধানসভায় ছিলেন না।

Advertisement

তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বামেরাও। ফব বিধায়ক উদয়ন গুহ সাফ বলেন, “সরকারকে বলেছিলাম, ইমাম বা মোয়াজ্জেম ভাতা দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না। কিন্তু যারা বিভাজন করতে চায়, তারা সুযোগ পেয়ে যাবে!” তাঁর আরও যুক্তি, যারা রামের নামে বিভাজন করে তারা যেমন সাম্প্রদায়িক, তেমনই রহিমকে সামনে রেখে বিভাজন যারা করে, তারাও একই দোষে দুষ্ট। সর্বদলে সহমত হলেও এই নীতির পথ থেকে সরে এলে তাঁরা কোনও ভাবেই শাসক দলের পাশে নেই, জানান উদয়নবাবু।

খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে তদন্তের সময়ে কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি কার্যকলাপের সন্ধান পাওয়ায় গোটা একটি সম্প্রদায়কে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেসের মহম্মদ সোহরাব, এসইউসি-র তরুণ নস্কর থেকে মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। এই সূত্রেই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, “এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে দলীয় পরিচয় না দেখে সরকার কেন ব্যবস্থা নেবে না?” সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিলে পাল্টা সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাও যে বেড়ে যায়, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন সূর্যবাবু। অস্বস্তি সামাল দিতে জবাবি ভাষণে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, “এনআইএ কিন্তু রাজ্য পুলিশের প্রশংসাই করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন