মুম্বইয়ের সঙ্গীত জগত্ থেকে রাজনীতির অলিন্দে পা দিয়ে প্রথম বারেই সাংসদ। আর রবিবার একেবারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী!
পাড়ার চেনা ছেলেটার এই উত্থানে রবিবার বারবার স্মৃতিতে ডুব দিচ্ছিল হুগলির দুই শহর উত্তরপাড়া এবং ব্যান্ডেল। দু’জায়গাতেই জীবনের শুরুর দিকে যে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন তিনি বাবুল সুপ্রিয়। তাই দুই শহরেই ছড়িয়ে থাকা পরিচিত এবং বন্ধুরা তাঁর মন্ত্রিত্বে অভিষেকের কথা জেনে উত্ফুল্ল। বলছেন, ও পারবে।
উত্তরপাড়া স্টেশন লাগোয়া ধানকল গলিতে বাবুলদের পৈতৃক বাড়িটা আজ আর নেই। ছোটবেলায় বেশ কয়েক বছর ওই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেই সময়ের কথা বলতে বলতে বেমালুম এ দিন হারিয়ে গেলেন সিএ মাঠ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা, প্রৌঢ় বাবলু রায়। যাঁকে ছোটবেলায় ‘দাদা’ বলেই ডাকতেন বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর কথায়, “আর পাঁচটা ছেলের মতোই এক্কেবারে সাধারণ ছিল। পাড়ায় চুটিয়ে ফুটবল-ক্রিকেট খেলত। ভদ্র, মিশুকে ছিল। জীবনের প্রথম টিউশন আমিই ওকে খুঁজে দিই। দীর্ঘদিন উত্তরপাড়ায় না থাকলেও যেখানেই দেখে আজও চিনতে পারে। বাবুল নতুন দায়িত্বে গেল, আশা করি যোগ্যতার সঙ্গেই উত্তীর্ণ হবে।”
বাবুলের স্কুল-জীবন কেটেছে ব্যান্ডেল ডন বসকোয়। আদি বাড়িও রয়েছে সেখানে। এ দিন সাংসদ থেকে বাবুলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার খবরে তাই আনন্দের জোয়ারে গা ভাসিয়েছে তাঁর পুরনো পাড়া বড়াল গলিও। এখানকার সুরেশ সাউ এক সময়ে বাবুলের খেলা ও জিমের সঙ্গী ছিলেন। তিনিও বলেন, “এক সঙ্গে জিম করেছি, খেলেছি। আমাদের সেই সঙ্গী এখন মন্ত্রী! ওর এই উত্থানে আমরা ভীষণ আনন্দিত। দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। কিন্তু যখনই দেখা হয়েছে, বাবুল আগের মতোই কথা বলেছে। মন্ত্রী বাবুল বাংলার জন্য নিশ্চয়ই ভাল কিছু করবে। নিশ্চয়ই এখানকার উন্নয়নের জন্য ওর সঙ্গে কথা বলতে পারব।”
বাবুলের সান্নিধ্য পেয়েছেন ওই এলাকারই নিমাই দত্তও। তাঁর বক্তব্যেও একই সুর, ‘‘আমি বাংলা মাধ্যমে পড়তাম, বাবুল ইংরেজি মাধ্যমে। পাড়ায় মেলামেশার সূত্রেই আলাপ। যখনই এখানে এসেছে রকে বসে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছে। ওর উত্থানে আমরা আনন্দিত। মনে হয় ঘরের ছেলে এ বার আমাদের জন্য কিছু করতে পারবে।”
পুরনো বন্ধু বা পরিচিতেরা বাবুলের উত্থানে আনন্দিত। কিন্তু কী বলছেন, এই জেলায় রাজনীতিতে তাঁর বিপরীত মেরুর বাসিন্দারা? তাঁরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। চুঁচুড়ার বাসিন্দা, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা চেয়ারম্যান নৃপেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিদিনের রাজনীতির কচকচির বাইরের এক জন মানুষ বাবুল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় উনি এখন নিশ্চয়ই রাজনীতির ঊর্ধ্বে। হুগলির মানুষ হিসেবে আমরা গর্বিত। তরুণতম প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে উনি নিশ্চয়ই রাজ্যের যাতে ভাল হয়, সে দিকে নজর দেবেন। আমরা সে দিকে তাকিয়ে আছি।”
রাজ্যের শাসক দলের নেতা, উত্তরপাড়ার বাসিন্দা দিলীপ যাদব শুভেচ্ছার সঙ্গে অবশ্য রাজনৈতিক ভাবে বিরোধিতার কথাও বলে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “উনি এক সময়ে এখানে থাকতেন। নতুন দায়িত্বে গেলেন, নিশ্চয়ই শুভেচ্ছা। কিন্তু রাজনীতি রাজনীতির জায়গাতেই থাকবে। সেখান থেকে আমার অবস্থান সরার কোনও জায়গা নেই। রাজনীতির ময়দানে আমি ওঁর অবস্থানের কঠিন, কঠোর বিরোধী।”
সকলের শুভেচ্ছা নিয়ে নতুন পথচলা শুরু করলেন বাবুল। শেষ বিচারে তিনি কতটা কী করতে পারেন, তা সময়ই বলবে।