চোরাস্রোত যে বইছে, তা আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী শপথ নেওয়ার দিনে বাম-তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার হিড়িক আরও গতি পেল।
পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে ব্লক সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বিজেপিতে যোগ দিলেন দেড় হাজার তৃণমূল কর্মী। স্থানীয় মলম পঞ্চায়েতে সিপিএমের সাত সদস্য-সহ শ’চারেক বাম কর্মী বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। এতে একমাত্র পঞ্চায়েতটি বিজেপি-র দখলে চলে গেল। জলপাইগুড়িতেও সিপিআই ছেড়ে সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বিজেপি-তে গিয়েছেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য। নদিয়ার চাপড়ায় সিপিএমের দুই পঞ্চায়েত সদস্যও একই রাস্তা ধরেছেন। গত ক’দিন ধরেই জেলা বিজেপি-র সদস্য হুহু করে বাড়ছে। কোচবিহারে হাজার তিনেক বাম কর্মী-সমর্থক দল বদলেছেন। রবিবারই মোদীর দলে যোগ দিয়েছেন সিপিএমের বীরভূম জেলা কমিটির এক সদস্য।
বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনীকুমার ঘোষের দাবি, “তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত, তাঁর অনুগামীদের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় বছরখানেক ধরে কোণঠাসা ছিলেন অর্ধেন্দুবাবুরা। আমরা তাঁদের সাদরে দলে নিয়েছি। ও দিকে, তৃণমূলের বাধায় মলম পঞ্চায়েত কাজ করতে পারছিল না। তৃণমূলের আক্রমণ থেকে কর্মীদের বাঁচাতেও পারছে না সিপিএম। তাই ওই এলাকার বামকর্মীরা আমাদের দলে এসেছেন।”
অর্ধেন্দুবাবুর বক্তব্য, “সিপিএম যে ভুল করেছে, সেই একই ভুল করছে স্থানীয় তৃণমূল। উন্নয়নের টাকা লুঠপাঠ হচ্ছে। ক্ষমতার দম্ভে মানুষকে মানুষ জ্ঞান করছেন না।” উজ্জ্বলবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই দলের সঙ্গে ওঁদের সম্পর্ক ছিল না। ওঁরা সিপিএমের হয়ে কাজ করেছিলেন। এই দলবদলে তৃণমূলের ক্ষতি হবে না।” সিপিএমের নয়াগ্রাম জোনাল সম্পাদক হিমাংশু ত্রিপাঠী দাবি করেন, “আমাদের লোক দলবদল করেছেন বলে জানা নেই।”
এ দিনই জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি দফতরে গিয়ে দলবদল করেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস বিশ্বাস। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক গোপাল সরকারের আক্ষেপ, “হুজুগ চলছে। তাপসের মত দক্ষ বামপন্থী ছেলে গেরুয়া ঝান্ডা হাতে তুলে নেবে ভাবিনি।” তাপসবাবুর পাল্টা, “দেশ ও রাজ্যের রাজনীতিতে বামপন্থীদের প্রাসঙ্গিকতা শেষ। তাই প্রায় সাতশো সিপিআই কর্মী দলত্যাগ করেছেন।” তিনি ছাড়াও জেলা কমিটির দুই সদস্য সুকুমার রায় ও কমল রায়ও বিজেপিতে যোগ দেন। ৭০০ সিপিআই কর্মী দল ছেড়েছেন। স্থানীয় অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন সিপিএম সদস্যও এ দিন অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন।
নদিয়ার চাপড়ার আলফা ও হাতিশালা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই সিপিএম সদস্যও দল বদলেছেন। রবিবার সন্ধ্যাতে চাকদহের কালীবাজার এলাকায় এক সভায় কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূলের দেড়শো কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট, চাপড়ার কয়েকশো সিপিএম কর্মীরাও এই দলে রয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সামসুল ইসলাম মোল্লার দাবি, ‘‘আমাদের দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার খবর নেই।”