বামনগাছি গিয়ে লড়াইয়ের জেদ বাড়ল পুত্রহারা বাবার

লড়ছেন দু’জনেই। ছেলের খুনিদের শাস্তি দেওয়ার লড়াই। সন্তানহারা দুই বাবা মুখোমুখি বসে কথা বললেন। কাঁদলেন। সান্ত্বনা দিলেন পরস্পরকে। কোথায় যেন মিলে গেল দু’জনের লড়াই। বামনগাছির সরোজ চৌধুরী সদ্য হারিয়েছেন তাঁর ছোট ছেলে সৌরভকে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের অনিল মণ্ডল অনুভব করতে পেরেছেন সেই শোক।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৪:০৭
Share:

অতনু মণ্ডল।

লড়ছেন দু’জনেই। ছেলের খুনিদের শাস্তি দেওয়ার লড়াই।

Advertisement

সন্তানহারা দুই বাবা মুখোমুখি বসে কথা বললেন। কাঁদলেন। সান্ত্বনা দিলেন পরস্পরকে। কোথায় যেন মিলে গেল দু’জনের লড়াই।

বামনগাছির সরোজ চৌধুরী সদ্য হারিয়েছেন তাঁর ছোট ছেলে সৌরভকে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের অনিল মণ্ডল অনুভব করতে পেরেছেন সেই শোক। মাস তিনেক আগে তাঁর একমাত্র ছেলে অতনুকেও যে খুন করা হয়েছিল! সেই থেকে তিনি বিচার চেয়ে ঘুরছেন। বামনগাছির ঘটনার কথা জানতে পেরে আর থাকতে পারেননি। শনিবারই সরোজবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অনিলবাবু। রবিবার সৌরভের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভাতেও সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন তিনি।

Advertisement

আয়কর দফতরের কর্মী, কৃষ্ণনগর শহরের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা অনিলবাবু বলছেন, “সরোজবাবুর যন্ত্রণাটা আমি অনুভব করতে পারছি। আমার ছেলেকেও তো নৃশংস ভাবেই খুন করা হয়েছিল! আমি সরোজবাবুর পাশে আছি।” এর আগে সরোজবাবুর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন বনগাঁর সুটিয়ার প্রতিবাদী শিক্ষক, নিহত বরুণ বিশ্বাসের বাবা জগদীশ বিশ্বাসও।

কী ভাবে খুন হয়েছিল অতনু?

এ বছর ৩ মার্চ সন্ধ্যার পর নিখোঁজ হয়ে যায় কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র। পর দিন বিকেলে কৃষ্ণনগরের কাছে জলঙ্গি নদীর চরশম্ভুনগর ঘাট থেকে বুকে পাথর বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তার দেহ।

অনিলবাবু জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক বন্ধুর মোটরবাইকে এসে বাবা-মায়ের ওষুধ কিনে দিয়ে গিয়েছিল অতনু। পৌনে আটটা নাগাদ ফোনে অতনু জানায়, সে এক দাদার সঙ্গে বন্ধুর জন্মদিনে আমঘাটায় যাচ্ছে। রাত দশটা নাগাদ অতনুর মোবাইলে ফোন করা হলে তার অস্পষ্ট কথা শুনতে পান অনিলবাবু। তার কিছুক্ষণ পরেই অতনুর মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। অনিলবাবু বলেন, “রাত ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ আমার ছেলের মোবাইল থেকে কেউ এক জন ফোন করে জানায়, বাড়ির বাইরে একটা চিঠি রাখা আছে। সেখানে যেমন বলা

আছে, তেমনটাই আমাকে করতে বলা হয়। চিঠিতে লেখা ছিল, ১২ লক্ষ টাকা না দিলে ছেলেকে খুন করা হবে। পর দিনই নদী থেকে ছেলের দেহ মিলল!”

ওই ঘটনায় অনিলবাবু তাঁর ছেলের গৃহশিক্ষক, এক সহপাঠিনী এবং এক বন্ধুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথম দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু, ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা না দেওয়ায় ওই দু’জনেই জামিন পেয়ে যান। পুলিশের তদন্তের উপরে ভরসা করতে না পেরে অনিলবাবু সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়ে ৯ জুন হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি নদিয়ার পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত-রিপোর্ট তলব করেছেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সব কিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ।

ছেলের খুনিরা যাতে সাজা পায়, সে জন্য পাগলের মতো পুলিশ-প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরেছেন অনিলবাবু। দেখা করেছেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে। চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কোথাও কোনও সুরাহা পাননি। অনিলবাবুর অভিযোগ, “পুলিশের তদন্ত আচমকাই যেন থমকে গেল। এর পিছনে শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতার হাত আছে বলে আমরা জানতে পারছি। বাধ্য হয়েই সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছি।” শুধু তাঁর আক্ষেপ, বামনগাছিতে ছাত্র খুনের ঘটনায় গ্রামের মানুষ যতটা সরব, ঠিক ততটাই নীরব কৃষ্ণনগরের মানুষ। “৪ এপ্রিল কৃষ্ণনগরে একটা প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল। সেই শেষ!”

বামনগাছির বাসিন্দারা কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন, অতনুর খুনের ঘটনায় কৃষ্ণনগরে কোনও প্রতিবাদ মিছিল হলে সেখানে সামিল হবেন তাঁরাও। অনিলবাবুর কথায়, “বামনগাছিতে গিয়ে লড়াইয়ের জেদটা আরও বেড়ে গেল। সরোজবাবুকেও বলেছি, এই লড়াইটা আমাদের চালাতেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন