ব্যাঙ্কের টাকার হিসেবও দেননি শান্তনু: ইডি

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছে নিজের দু’টি সংস্থা বেচে শান্তনু ঘোষ যে-টাকা পেয়েছিলেন, তার পুরোপুরি হদিস তো মেলেইনি। এমনকী তার আগে ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ বা সদ্ব্যবহার শংসাপত্রও তিনি এখনও দাখিল করতে পারেননি বলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অভিযোগ। সোমবার নগর দায়রা আদালতে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিল করে এ কথা জানানো হয়েছে বলে ইডি-র দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৭
Share:

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছে নিজের দু’টি সংস্থা বেচে শান্তনু ঘোষ যে-টাকা পেয়েছিলেন, তার পুরোপুরি হদিস তো মেলেইনি। এমনকী তার আগে ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ বা সদ্ব্যবহার শংসাপত্রও তিনি এখনও দাখিল করতে পারেননি বলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অভিযোগ। সোমবার নগর দায়রা আদালতে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিল করে এ কথা জানানো হয়েছে বলে ইডি-র দাবি।

Advertisement

ইডি সূত্রের খবর, মোটরবাইক তৈরির কারখানা, সংবাদমাধ্যম-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা গড়তে চেয়ে বিভিন্ন সময়ে সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি ‘কনসর্টিয়াম’ বা সঙ্ঘ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন শান্তনু। ২০১০ সালে সারদা-প্রধান সুদীপ্তের কাছে তিনি মোটরবাইক তৈরির কারখানা এবং নিজের সংবাদমাধ্যমটি বিক্রি করে দেন। ইডি-র দাবি, ওই সংস্থা দু’টি যে লোকসানে চলছে, বিক্রির সময় শান্তনু তাঁর কাছে সেটা গোপন করে যান বলে জেরায় জানিয়েছেন সুদীপ্ত।

কয়েক দিন আগেই জেনাইটিস গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক শান্তনুকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করেছে ইডি। তাদের অভিযোগ, জেনাইটিস-কর্ণধারকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, বিভিন্ন সংস্থা গড়তে চেয়ে তিনি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ হিসেবে কয়েক দফায় যে-টাকা পেয়েছিলেন, কখন কোথায় কী ভাবে তা খরচ করেছেন? তার হিসেব কোথায়?

Advertisement

এই সব প্রশ্নের সদুত্তর এবং ওই টাকার হিসেব শান্তনু এখনও দিতে পারেননি বলে ইডি-র অভিযোগ। লোকসানে চলা সংস্থা দু’টি বেচে দেওয়ার পিছনে জেনাইটিস-প্রধানের কী উদ্দেশ্য ছিল এবং ওই দু’টি সংস্থা কিনে নেওয়ার পিছনে সারদা-কর্ণধারের অভিপ্রায়ই বা কী ছিল, কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-র তদন্তকারীরা সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সংস্থা বিক্রির টাকা পাচার করে দেওয়ার মতো ব্যাঙ্কঋণের টাকাও পুরোপুরি খরচ না-করে সম্ভবত অন্যত্র সরানো হয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া টাকার হিসেব এবং সংস্থা বিক্রি করে সুদীপ্তের কাছ থেকে পাওয়া টাকার হদিস পুরোপুরি মেলেনি বলে ইডি সূত্রের খবর।

শান্তনুকে এ দিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের আদালতে তোলা হয়। তাঁকে জেল-হাজতে পাঠানোর আবেদন জানান ইডি-র দুই আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র ও ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তনুর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে তাঁরা জানান, অভিযুক্তকে আরও জেরার করা দরকার। কারণ, এখনও অনেক নথিপত্র মেলার সম্ভাবনা আছে। তদন্তকারীরা জেলে গিয়ে অভিযুক্তকে জেরা করতে চান। ওই অভিযুক্ত জামিন পেয়ে গেলে তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাতে পারেন। ব্যাঙ্কঋণের নথিপত্রও লোপাট করে দেওয়ার আশঙ্কা আছে।

অভিযুক্তের আইনজীবী দেবাশিস রায় আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল ব্যাঙ্কগুলির অনুমতি নিয়েই দু’টি সংস্থা সারদা-প্রধানের কাছে বিক্রি করেছেন। তা ছাড়া সংস্থা বেচে দেওয়ার পরে তার লাভ-লোকসানের দায় অভিযুক্তের উপরে বর্তাতে পারে না।

বিচারক দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযুক্তের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাঁকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন