ব্যক্তি-আক্রমণ নয়, সংযমের নির্দেশ বিমানের

ভোটের প্রচারের ভাষা থাকবে সংযত। কোনও ভাবেই ব্যক্তিগত আক্রমণ চলবে না। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে পরিষ্কার নির্দেশ দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সেই সঙ্গেই তাঁর পরামর্শ, শাসক দলের প্রার্থী তালিকায় এ বার বিভিন্ন জগতের যে এক ঝাঁক নামী মুখ আছেন, তাঁদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

ভোটের প্রচারের ভাষা থাকবে সংযত। কোনও ভাবেই ব্যক্তিগত আক্রমণ চলবে না। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে পরিষ্কার নির্দেশ দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সেই সঙ্গেই তাঁর পরামর্শ, শাসক দলের প্রার্থী তালিকায় এ বার বিভিন্ন জগতের যে এক ঝাঁক নামী মুখ আছেন, তাঁদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের নিয়ে রুচিহীন মন্তব্য বা ব্যক্তিগত স্তরের আক্রমণ জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে বলেই এমন সতর্কতার পরামর্শ বিমানবাবুর।

Advertisement

কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের মন্ত্রীদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক আনিসুর রহমান। যার প্রেক্ষিতে তাঁকে লোকসভার প্রচারে আর বক্তা হিসাবে রাখতে চাইছে না আলিমুদ্দিন। লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও অবধারিত ভাবে আনিসুর-প্রসঙ্গ ওঠে। সূত্রের খবর, একাধিক জেলার নেতারা আনিসুরের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ডোমকলের বিধায়ক অশ্লীল, অশালীন বা অসংসদীয় কিছু বলেননি। কিন্তু বিরোধীদের চেয়েও বাম শিবিরেই যেন এই নিয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া হয়ে গেল! স্বয়ং আনিসুরও বৈঠকে বলেন, অন্যায় করলে দোষ স্বীকার করতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। আগে ভুল মন্তব্য করেছিলেন বলে প্রকাশ্যে এবং দলের অন্দরে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এ বার তেমন আপত্তিকর কিছু বলেছেন বলে তাঁর মনে হচ্ছে না। এ সবের পরেও অবশ্য অনড় থেকে বিমানবাবুর সাফ জবাব, বামেদের বক্তব্যে ব্যক্তি-কুৎসার কোনও স্থান নেই!

জবাবি ভাষণে এ দিন বিমানবাবু বলেছেন, তাঁদের প্রচারের মূল কথাই হবে বিনয়। মানুষের কাছে গিয়ে ধৈর্য ধরে তাঁদের কথা শুনতে হবে। শুনতে হবে বেশি, বলতে হবে কম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পরামর্শ, ‘ঘোড়ায় জিন দিয়ে’ প্রচারে গেলে চলবে না! পাড়া, মহল্লা ধরে ধরে হাতে সময় নিয়ে মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, কেন রাজনৈতিক সৈনিকদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন জগতের তারকাকে তৃণমূল বা বিজেপি প্রার্থী করছে, সেই প্রশ্ন প্রচারে তুললেও বিশিষ্টদের নাম করে ব্যক্তিগত ভাবে নিশানা করা চলবে না।

Advertisement

যুগের সঙ্গে তাল রেখে প্রচারের ধরন বদলানো নিয়েও এ দিন কথা উঠেছিল বৈঠকে। বিমানবাবু অবশ্য পরম্পরাগত ভাবে পাড়া বৈঠক, বাড়ি বাড়ি যাওয়ার বাইরে অভিনব কিছুতে সায় দেননি। যা নিয়ে এ দিনের বৈঠকের শেষ লগ্নে দলের এক প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে ঈষৎ বিতণ্ডাও হয়েছে রাজ্য সম্পাদকের! ওই নেতার প্রস্তাব ছিল, বেশ কিছু নতুন, তরুণ প্রার্থী এ বার বামফ্রন্টের তালিকায় আছেন। এক সঙ্গে বহু লোকের কাছে তাঁদের পরিচয় ঘটাতে সুবিধার জন্য পোস্টারে প্রার্থীদের ছবি ব্যবহার করা হোক। যেমন দক্ষিণ ভারতে সিপিএম করে থাকে। কিন্তু জবাবি বক্তৃতায় বিমানবাবু জানিয়ে দেন, ‘কাট-আউট সংস্কৃতি’তে হাত পাকানোর কোনও দরকার নেই! সিপিএম সূত্রের খবর, জবাবি ভাষণ শেষ করতেই ওই প্রাক্তন সাংসদ বিমানবাবুর কাছে জানতে চান, অডিও-ভিস্যুয়াল প্রচারের উপকরণ ব্যবহার সম্পর্কে তিনি জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া গেল না! বিমানবাবু তখন জানিয়ে দেন, অডিও-ভিস্যুয়াল প্রচার বাদ! যদিও দলেরই এক রাজ্য কমিটির সদস্যের বক্তব্য, “গত কয়েক বছর ধরেই ভোটের প্রচারের সময়ে অডিও-ভিস্যুয়াল ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও সক্রিয়তা বাড়াতে চাইছে। আশা করা যায়, এখানেও প্রয়োজন বুঝে উপযুক্ত ব্যবস্থা হবে।”

বিভিন্ন জেলা থেকেই প্রতিনিধিরা এ দিন রিপোর্ট দিয়েছেন, চতুর্মুখী লড়াইয়ের আবহে তাঁরা কেউই হাল ছাড়ছেন না। ব্রিগেড সমাবেশের পরে দলের সর্ব স্তরে নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হয়েছে। হুগলি, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া-সহ কিছু জেলার কিছু অংশে এখনও সন্ত্রাসের পরিবেশ আছে। কিন্তু কর্মীরা হতোদ্যম হয়ে পড়েননি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে ভোট হলে ভাল লড়াই হবে বলেই তাঁদের আশা। তবে প্রতিনিয়তই নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ রাখার কথা বলেছেন তাঁরা।

আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত এ দিন রাজ্য কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। এক প্রাক্তন মন্ত্রী বৈঠকে বলেন, লক্ষ্মণ শেঠের কাজকর্ম সম্পর্কে আগেই অনেক অভিযোগ ছিল। তখনই দলের সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। বিমানবাবুর ব্যাখ্যা, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন