আবহে বিরোধটা ছিলই। এ বার মঞ্চেও তা প্রকট হয়ে গেল।
গোটা দেশের নামজাদাদের নিয়ে আয়োজিত প্রথম সরকারি নাট্যোৎসবেও রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত দুই নাট্য-ব্যক্তিত্বের দ্বৈরথের ছায়া পুরোপুরি এড়ানো গেল না, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শনিবার বিকেলে উৎসবের উদ্বোধনী আসরের আমন্ত্রণপত্রে পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও সাংসদ অর্পিতা ঘোষ দু’জনেরই নাম ছিল। ব্রাত্য প্রধান অতিথি। আর অর্পিতা বিশেষ অতিথির ভূমিকায়। মঞ্চেও দু’জনের নামই মোটা হরফে লেখা। যথা সময়ে দেখা গেল, ব্রাত্য এলেও অর্পিতার দেখা নেই।
অর্পিতা অবশ্য বলেন, “কল্যাণীতে আমার নাটকের শো থাকার জন্যই আসতে পারিনি। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।” ব্রাত্যও একই কথা বলেছেন। অর্পিতা যে এ দিন সকালেই এসএমএস করে তাঁর থাকতে না পারার কথা জানিয়েছেন, তা ব্রাত্য মঞ্চে দাঁড়িয়েই খোলসা করে দেন। কিন্তু তা হলে, উদ্যোক্তারা পরিস্থিতি না জেনে কেন অর্পিতার নাম ছাপিয়েছিলেন? উৎসবের আয়োজনে সরাসরি যুক্ত মিনার্ভা নাট্য রেপার্টরির কর্তাদের কাছে বিষয়টি জানতেও চান ব্রাত্য। সূত্রের খবর, অর্পিতা দাবি করেছেন, গত ৫ জানুয়ারি (তখনও ব্রাত্য-অর্পিতাদের সমস্যা প্রকাশ্যে আসেনি) মিনার্ভার বৈঠকেও তিনি বলে দিয়েছিলেন যে, উদ্বোধনী আসরে থাকতে পারবেন না। ব্রাত্য অবশ্য সেই বৈঠকে ছিলেন না। মিনার্ভার তরফে এই উৎসবের অন্যতম উপদেষ্টা, নাট্যকর্মী বিজয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “কার্ডে নাম ছাপানোর সময়েও আমরা জানতাম না যে, অর্পিতা আসতে পারবেন না। পরে জানতে পারি।”
দিন কয়েক আগেই বন্ধুত্বে চিড় ধরার কথা বলে তৃণমূলপন্থী নাট্যকর্মীদের সংগঠন ‘নাট্যস্বজন’ থেকে সরে আসেন অর্পিতা ও ব্রাত্য। অর্পিতা নাম না-করে ব্রাত্য ও তাঁর তথাকথিত স্তাবকদের বিরুদ্ধে ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগও তোলেন। ব্রাত্য অবশ্য আগাগোড়াই কারও বিরুদ্ধে কিছু বলা থেকে বিরত ছিলেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরেও নাট্যজগতের কৃতীদের অনেকের মধ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আভাস মিলেছে। এ দিন জাতীয় স্তরের নাট্যোৎসবেও নাট্যজগতের পরিচিতদের কাউকেই প্রায় দেখা যায়নি। মন্ত্রী ব্রাত্য ছাড়া ছিলেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য। তবে উদ্বোধনী নাটকটিও মেঘনাদবাবুর নির্দেশনায়।
অবশ্য উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছিল, সেই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও আসেননি। কেন আসতে পারছেন না, তা উদ্যোক্তাদের জানানওনি সুব্রতবাবু। এমনকী, আসেননি রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্য নিজেই। পরে সচিব ব্রাত্যকে জানান, নন্দনে জরুরি কাজের জন্য আসতে পারছেন না। সুব্রতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁকে সুচিত্রা সেনের মৃত্যুদিনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রয়াত চিত্রাভিনেত্রীর বাড়িতে যেতে হয়েছিল। “বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত মুনমুনদের বাড়িতেই আটকে পড়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে তো আর অন্য কোথাও যেতে পারি না।”