বিরোধীদের ভোট দিতে দেবেন না: মনিরুল

বিরোধী প্রার্থীদের একটা ভোটও যেন কেউ দিতে না পারে, দলের কর্মীদের তা নিশ্চিত করার ডাক দিলেন তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। শনিবার বিকেলে বীরভূমের সাঁইথিয়ায় তিনি প্রকাশ্য কর্মিসভায় এই নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫১
Share:

বিরোধী প্রার্থীদের একটা ভোটও যেন কেউ দিতে না পারে, দলের কর্মীদের তা নিশ্চিত করার ডাক দিলেন তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। শনিবার বিকেলে বীরভূমের সাঁইথিয়ায় তিনি প্রকাশ্য কর্মিসভায় এই নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। যদিও রাতে নির্বাচন কমিশনের সাঁইথিয়া ব্লকের ওসি-এমসিসি জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের কাছে এখনও কোনও সিডি পৌঁছয়নি। পৌঁছলে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

Advertisement

শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ সাঁইথিয়ার হরিসাড়া পঞ্চায়েতের রুদ্রনগর গ্রামের কর্মিসভায় যান লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। সেখানেই মাইক হাতে তাঁকে বলতে শোনা যায় “একটাও ভোট সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপিকে দিতে দেবেন না, এই প্রতিশ্রুতি দিন। এই দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।” সেই সময়ে মঞ্চে ছিলেন সাঁইথিয়ার তৃণমূল পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত ও তৃণমূলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অম্বিকা দত্ত। সভায় হাজির ছিলেন শ’তিনেক তৃণমূল কর্মী।

স্বাভাবিক ভাবেই, প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র রাজ্য নেতা তথাগত রায় বলেন, “সিপিএম এত দিন ধরে ওখানে যা করত, এখন তৃণমূল সেই একই কাজ করছে। ফারাক এটাই, সিপিএম গোপনে করত, আর এদের সবই প্রকাশ্যে।” কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যটা তৃণমূলের জমিদারি বলে মনে হচ্ছে। জমিদার নির্দেশ দিচ্ছেন, কাকে ভোট দিতে হবে। গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করার এই খেলা মানুষ মেনে নেবে না। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।” মনিরুলের বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, “ওঁর কোনও সংযম নেই। শিক্ষা নেই। আইনসভায় এই ধরনের লোক কী ভাবে আইন পাশ করবেন, তা ভেবে পাচ্ছি না।”

Advertisement

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের দু’দিন আগে সাঁইথিয়ারই একটি জনসভায় সেখানকার কংগ্রেস নেতা বাপি দত্তের “মুন্ডু আদায় করার” হুমকি দিয়েছিলেন মনিরুল। তিনি যে লাভপুরের তিন ভাইকে “পায়ের তলায় পিষে” হত্যা করেছিলেন, সে কথাও প্রকাশ্য সভায় বলেন। এর পর সেই বক্তৃতার সিডি চেয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শেষ অবধি কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০১০ সালে লাভপুরের নবগ্রামে সিপিএম কর্মী তিন ভাইকে খুনের মামলায় অভিযুক্ত মনিরুলের বিরুদ্ধে এখনও কোনও চার্জশিট দেয়নি জেলার পুলিশ। বিরোধীদের আশঙ্কা, এ বারও শেষ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ দিন মনিরুলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ এড়িয়েই যাচ্ছেন। এ দিন সভার পরে বিপ্লব দত্ত বলেন, “আমি ওই সময়ে ব্যস্ত ছিলাম, ওঁর বক্তব্য ভাল করে শুনিনি। তবে একটা ভোটও যেন নষ্ট না হয়, এটাই উনি বলেছেন বলে মনে হল।” জেলা তৃণমূল নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “মনিরুল এটা করতে চাননি। তিনি বলতে চেয়েছেন, বিরোধীরা যেন কাউকে ভুল বুঝিয়ে ভোট না পেয়ে যায়।” পরে মনিরুল দাবি করেন, “আমি কর্মীদের বলেছি, এলাকার মানুষরা যেন বিরোধীদের ভোট না দেয় তা বুঝিয়ে বলতে। এতে আপনারা যা মানে করবেন, করুন।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এটা ফ্যাসিবাদের কণ্ঠস্বর। এ সব অনুব্রত মণ্ডলের কাছে শিখেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব।” বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “সিপিএম শেষের দিকে যা শুরু করেছিল, তৃণমূল এখন থেকেই সেই সন্ত্রাস শুরু করেছে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি, বীরভূমের কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “তৃণমূল যে নির্বাচনে ভয় পায়, তা এদের কথাতেই পরিষ্কার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন