বীরভূমে ভোট করে দেখিয়ে দেব: রাকেশ

দুই তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও মনিরুল ইসলামের বিতর্কিত মন্তব্যে বিরোধীরা সন্ত্রস্ত। সিউড়িতে সিপিএম কর্মীকে পিটিয়ে খুন। লাভপুরে তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে বোমা ফেটে মৃত্যু। সব মিলিয়ে বীরভূমে এ বার শান্তিপূর্ণ ভাবে লোকসভা ভোটের আয়োজন করাটা নির্বাচন কমিশনের কাছে দস্তুরমতো চ্যালেঞ্জ। এবং তিনি যে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন, মঙ্গলবার তা জানিয়ে দিলেন রাজ্যে নিয়ুক্ত নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ।

Advertisement

কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪৬
Share:

দুই তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও মনিরুল ইসলামের বিতর্কিত মন্তব্যে বিরোধীরা সন্ত্রস্ত। সিউড়িতে সিপিএম কর্মীকে পিটিয়ে খুন। লাভপুরে তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে বোমা ফেটে মৃত্যু।

Advertisement

সব মিলিয়ে বীরভূমে এ বার শান্তিপূর্ণ ভাবে লোকসভা ভোটের আয়োজন করাটা নির্বাচন কমিশনের কাছে দস্তুরমতো চ্যালেঞ্জ। এবং তিনি যে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন, মঙ্গলবার তা জানিয়ে দিলেন রাজ্যে নিয়ুক্ত নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। “কী ভাবে বীরভূমে নির্বাচন করতে হয়, তা আমরা জানি। ওই দিন দেখিয়ে দেব।” এ দিন বললেন তিনি। ওঁর দাবি, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন উতরে দেওয়ার কৌশল কমিশনের বিলক্ষণ জানা আছে। কৌশলটা কী?

বিশেষ পর্যবেক্ষক তা অবশ্য এ দিন ফাঁস করেননি। প্রশ্ন শুনে শুধু মুচকি হেসেছেন।

Advertisement

রবিবার নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা সফরে গিয়ে রাকেশ জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রশাসনের কেউ নির্বাচন সংক্রান্ত ভুল রিপোর্ট দিলে এবং যথাযথ ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন না-করলে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। তা সেই ব্যক্তি জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারই হোন, কিংবা পুলিশ-প্রশাসনের একেবারে নিচুতলার কোনও কর্মী। আর এই হুঁশিয়ারি যে নিছক কথার কথা নয়, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে তা-ও টের পাওয়া গিয়েছে। ‘নিয়ম মেনে’ কাজ না-করার জন্য এ দিনই রাজ্যের কুড়ি জন ওসি এবং তিন জন বিডিও-কে বদলি করেছে নির্বাচন কমিশন। যে সিদ্ধান্তের পিছনে রাকেশেরই ছায়া দেখছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতরের কর্মীমহল।

এমতাবস্থায় আগামী কাল, বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। ভোট নেওয়া হবে চার জেলা দুই দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মোট ছ’টি লোকসভা আসনে। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পর দিনই (শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল) রাকেশ যাবেন বীরভূম, যেখানে ভোট হবে ঠিক পরবর্তী দফায়, অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে জেলার পুরোটা ঘুরব। চেষ্টা করব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনে আস্থা ফেরানোর। কমিশনের হয়ে প্রচার চালাব, যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ ভোট দিতে যান।”

পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই তিনি এ ভাবে ঘুরবেন?

রাকেশ বলেন, “আমি পর্যবেক্ষক হয়ে এসেছি সারা রাজ্যের জন্য। সব খুঁটিনাটি বিষয়ের উপরে নজর রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতেই হয়। সেই কাজটাই করছি।” ওঁর কাছে বীরভূম সে রকম ‘বিশেষ ক্ষেত্র’ হয়ে উঠল কেন?

সিইও-অফিস সূত্রের ব্যাখ্যা: এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মধ্যে বীরভূমেই রাজনৈতিক উত্তাপ সবচেয়ে বেশি। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসের পরিবেশ। বিভিন্ন নেতা নানা ধরনের প্ররোচনামূলক বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছেন। এই কারণেই কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক ওখানে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে চান বলে দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

এ দিকে আগামী কালের নির্বাচনের শেষ মহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে রাকেশ এ দিন মালদহ-মুর্শিদাবাদ-দুই দিনাজপুরের ডিএম-এসপি’দের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। ১৭ এপ্রিল রাজ্যে প্রথম দফার নির্বাচনের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপ্রতুলতার অভিযোগ তুলেছিল বিরোধী দলগুলি। রাকেশ এ দিন বলেন, দ্বিতীয় দফার ভোটে এ ধরনের অভিযোগ যাতে তাঁকে শুনতে না-হয়, সে বিষয়ে তিনি জেলাশাসকদের সতর্ক করে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের তিনি বলেছেন, “ভোট প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আপনারা ভাল নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু সেটাই শেষ নয়। আপনাদের আরও দু’বার ভাল নম্বর পেতে হবে। ভোটগ্রহণের দিন, আর গণনার দিন। আসল নম্বর আপনারা পাবেন অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানোর পরেই। আশা করি, এ ব্যাপারে আপনারা সচেতন থাকবেন।”

তবে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-হুগলি জেলা সফর করে কিছু ভাল দিকও তাঁর নজরে এসেছে বলে এ দিন জানিয়েছেন বিশেষ পর্যবেক্ষক। “আমার সফরে জেলা প্রশাসন আস্থা ফিরে পাচ্ছে। আমিও বিভিন্ন আধিকারিকের থেকে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি। কোথাও ভাল কিছু দেখলে অন্যদের বলছি তা কার্যকর করতে।” জানান রাকেশ। একই সঙ্গে সংযোজন, “কমিশন এ সবের জন্যই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে!”

এবং সেই দায়িত্ব পালন করতেই তাঁর গন্তব্য হবে বীরভূম। অনুব্রত-মনিরুলদের জন্য তিনি কী বার্তা নিয়ে যাবেন?

রাকেশের মন্তব্য, “আমাদের কাছে সব ধরনের ওষুধ মজুত। আমরা জানি, কোন রোগে কী দাওয়াই। একটু ধৈর্য্য ধরুন। সব বুঝতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন