বাংলায় ভোটের শুরুতেই রাশ রাকেশের হাতে

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে তিনি ঢুকলেন বৃহস্পতিবার বেলা ঠিক ১১টায়। আর ঢুকেই বুঝিয়ে দিলেন, দিল্লি থেকে কী উদ্দেশ্যে তাঁকে পাঠানো হয়েছে কলকাতায়। বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে সুধীরকুমার রাকেশকে যে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের মাথার উপরে বসানো হচ্ছে, বুধবার সেই বার্তাই এসেছিল দিল্লি থেকে। এ দিন টানা সাত ঘণ্টা মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-এর দফতরে বসে রাজ্যের প্রথম দফার নির্বাচন পরিচালনা করলেন রাকেশ। কী ভাবে?

Advertisement

কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪০
Share:

কলকাতার দফতর থেকে উত্তরবঙ্গের ভোট পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে তিনি ঢুকলেন বৃহস্পতিবার বেলা ঠিক ১১টায়। আর ঢুকেই বুঝিয়ে দিলেন, দিল্লি থেকে কী উদ্দেশ্যে তাঁকে পাঠানো হয়েছে কলকাতায়।

Advertisement

বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে সুধীরকুমার রাকেশকে যে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের মাথার উপরে বসানো হচ্ছে, বুধবার সেই বার্তাই এসেছিল দিল্লি থেকে। এ দিন টানা সাত ঘণ্টা মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-এর দফতরে বসে রাজ্যের প্রথম দফার নির্বাচন পরিচালনা করলেন রাকেশ। কী ভাবে?

জেলা থেকে কোনও অভিযোগ আসা মাত্র রাকেশ নিজেই কথা বলেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে। কী করতে হবে, সঙ্গে সঙ্গেই সেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পরক্ষণেই ফোন করেন দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে। পশ্চিমবঙ্গের চার জেলায় কী ভাবে ভোট হচ্ছে, তা জানিয়ে দেন কমিশন-কর্তাদের। বিরোধী দলের দায়ের করা কোন অভিযোগের গুরুত্ব ঠিক কতটা, চটজলদি তার রিপোর্টও পৌঁছে যেতে থাকে দিল্লিতে।

Advertisement

৫ মার্চ বাংলায় ভোট পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে রাজ্যের সিইও-র দফতরের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছিল বিভিন্ন বিরোধী দল। উপনির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসি কলকাতায় এসে সিইও-র উদ্দেশে কড়া বার্তাও দিয়ে গিয়েছিলেন। এ মাসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বাধীন ফুল বেঞ্চ এসে সিইও-র দফতরকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেয়। ফুল বেঞ্চ দিল্লিতে ফিরে রাজ্যের পক্ষপাতদুষ্ট আধিকারিকদের চিহ্নিত করে তাঁদের বদলিও করেছে। ভোটের আগেই যে তারা কোনও বিশেষ পর্যবেক্ষককে কলকাতায় পাঠাবে, তার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিল কমিশন। রাজ্যে প্রথম দফার ভোটের ঠিক আগের দিন, বুধবার কলকাতায় আসেন রাকেশ।

বৃহস্পতিবার, রাজ্যে ভোটের প্রথম দিন কী কী করেছেন রাকেশ?

উত্তরবঙ্গের চার জেলা থেকে যখনই কোনও অভিযোগ কলকাতায় সিইও-র দফতরে পৌঁছেছে, রাকেশ তা লিপিবদ্ধ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকদের ফোন করে প্রকৃত অবস্থা জানতে চেয়েছেন। তার পরে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের সঙ্গে। প্রথমে নিজে পুরো পরিস্থিতি বুঝে নিতে চেয়েছেন। সেই অনুযায়ী নির্দেশও পৌঁছে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকের কাছে। তিনি কী করছেন, সেই রিপোর্টও নিয়মিত পাঠিয়েছেন দিল্লিতে। দিল্লি যা যা জানতে চেয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তা পৌঁছেও দেন। দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখিও হন রাকেশ। জানিয়ে দেন, “কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। সেই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হয়েছে, এ দিন বসে বসে সেটাই দেখলাম। উত্তরবঙ্গের চার জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে যে-সব অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করেছি। এটা পরবর্তী বিভিন্ন দফায় আরও সুষ্ঠু ভাবে ভোট পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।”

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই উত্তরবঙ্গের চার জেলা থেকে ভোট সংক্রান্ত অভিযোগ আসা কমতে থাকে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যে-সব জেলা ও কেন্দ্রে ভোট হবে, সেখানকার কয়েক জন জেলাশাসক ও পর্যবেক্ষককে ডেকে নেন রাকেশ। প্রথম দফার ভোট থেকে তাঁরা কী শিক্ষা পেলেন, তা জানতে চান তিনি। নির্বাচন কমিশন তাঁদের কাছ থেকে ঠিক কী চায়, তা-ও বুঝিয়ে দেন।

সন্ধ্যা ৬টায় দিনের ভোট পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই রাকেশ মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতর ছেড়ে বেরিয়ে যান দক্ষিণ কলকাতার একটি অতিথিশালার উদ্দেশে। সেখানেই উঠেছেন ওই বিশেষ পর্যবেক্ষক।

আজ, শুক্রবার সিইও-র অফিসে বসে আরও কয়েক জন জেলাশাসক ও পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাকেশ। আর জেলা সফরে বেরোবেন কাল, শনিবার থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন