বৃহত্তর মঞ্চই পথ, সিপিএমে বিশেষ দায়িত্বে সুজন-রবীন

সরাসরি জোট নীতিগত প্রশ্নেই সম্ভব নয়। কিন্তু দলের পতাকা সরিয়ে রেখে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ গড়ে তুলে বৃহত্তর ঐক্যের দরজা খুলেই রাখছে সিপিএম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অসীম দাশগুপ্ত। সোমবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

সরাসরি জোট নীতিগত প্রশ্নেই সম্ভব নয়। কিন্তু দলের পতাকা সরিয়ে রেখে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ গড়ে তুলে বৃহত্তর ঐক্যের দরজা খুলেই রাখছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সম্প্রতি প্রমোদ দাশগুপ্ত স্মারক বক্তৃতায় এই পথে দরজা খুলে রাখারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এ বার রাজ্য কমিটির বৈঠকে সেই লক্ষ্যকে আরও একটু সংহত রূপ দিল আলিমুদ্দিন। রাজ্যে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বৃহত্তর মঞ্চ গড়ার কাজে আলিমুদ্দিনের তরফে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য সুজন চক্রবর্তী ও রবীন দেবকে দেওয়া হল।

Advertisement

আলিমুদ্দিনে সোমবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে শিলিগুড়ি পুরসভায় অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রসঙ্গ উঠেছিল। কয়েক দিন আগেই শিলিগুড়িতে বামেদের সমর্থনে একটি বরোর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেসের কাউন্সিলর। শিলিগুড়ির ওই আগামী বিধানসভা ভোটের আগে মডেল হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে চর্চা এখন জোরদার। দার্জিলিং জেলা সিপিএম নেতৃতত্ব-সহ কয়েকটি জেলার প্রতিনিধিরা রাজ্য কমিটিতে শিলিগুড়ি ম়ডেলের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তাঁদের যুক্তি, তৃণমূলকে হারানোই এ রাজ্যে বামেদের প্রধান লক্ষ্য। তৃণমূলকে ঠেকানোর যেখানে যেমন সুযোগ পাওয়া যাবে, সেখানে তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। শিলিগুড়ির দৃষ্টান্ত মাথায় রেখেই সম্ভবত রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু নিচু তলায় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব মানুষকে একজোট করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সিপিএম সূত্রের খবর, জবাবি ভাষণে এ দিন সূর্যবাবু সরাসরি শিলিগুড়ির ঘটনা নিয়ে কিছু বলেননি। তবে তিনি বৈঠকে বলেছেন, ‘নীতিহীন’ কোনও জোট বা সমঝোতায় গেলে যে আখেরে বামেদেরই ক্ষতি হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তই দলের সকলেরই জানা। তবে একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে, রাজ্যে তৃণমূল এবং কেন্দ্রে বিজেপি-র বিরুদ্ধে জোট বেঁধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলের ভিতরে-বাইরে দাবি জোরালো হচ্ছে। সেই জন্যই রাজ্য সম্পাদকের পরামর্শ, স্বৈরতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী একটি বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে তোলা যেতে পারে দলের পতাকা ছাড়া। সিপিএমের তরফে ওই মঞ্চ গঠনের কাজে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করবেন সুজনবাবু ও রবীনবাবু।

Advertisement

তৃণমূলকে হারাতে প্রয়োজনে কংগ্রেসের হাত ধরার কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল বিস্তর। কারও নাম না করেই এ দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, বিধানসভা ভোটের নির্বাচনী কৌশল সম্পর্কে আগ বাড়িয়ে কারও কথা বলার দরকার নেই। বৈঠকে পেশ হওয়া লিখিত রিপোর্টেও সেই নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শাসক দল-সহ অন্যান্য শিবিরে কেমন ভাঙন ধরছে, কার অবস্থানে কী পরিবর্তন হচ্ছে— সে সবের দিকেই খুঁটিয়ে নজর রাখতে হবে। রাজ্য কমিটিতে দেওয়া নির্দেশিকা থেকেই স্পষ্ট, নিচু তলায় দলের নেতা-কর্মীরা কী চাইছেন, সেই মনোভাব বুঝে নিতে চাইছে আলিমুদ্দিন। তাই বৃহত্তর মঞ্চের দরজা খোলা রাখা হচ্ছে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘তৃণমূল স্তরে বৃহত্তর মঞ্চ সফল হলে উপরের দিকেও চাপ আসবে।’’

এরই পাশাপাশি, আগামী দু’মাসে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন কর্মসূচির উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। অগস্টে কৃষক সভার ‘নবান্ন অভিযানে’র পরে বাড়তি বিদ্যুৎ মাসুলের প্রতিবাদে সেপ্টেম্বরে গণসংগঠনকে দিয়ে সিইএসসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম ঘেরাও করে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন