রাজ্যে তৃণমূল জমানার গোড়া থেকেই পুলিশ-প্রশাসনের রদবদলে মুকুল রায়ের ‘হাতের ছাপ’ থাকত। এবং এটাই অলিখিত নিয়ম বলে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিল সরকারের অন্দরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর যে-ছয় আইপিএস অফিসারের বদলির তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেল, প্রথম মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কয়েক জন অফিসারকে গুরুত্বহীন পদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যেমন?
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা। পুলিশমহলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ওই আইপিএস অফিসারকে ব্যারাকপুরে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল স্ট্রাইকিং ফোর্স (এসএসএফ)-এর কম্যান্ড্যান্ট করা হয়েছে। ওই পদটি অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন বলেই মনে করেন পুলিশকর্তারা।
মির্জাকে যে-পদে পাঠানো হল, তাতে ছিলেন মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। মাস দুয়েক আগে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ দফতরের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী তথা জেলার তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে দ্বৈরথে ওই আইপিএস অফিসারের ঘাড়ে ‘শাস্তির খাঁড়া’ নেমে এসেছিল। সেই ‘ছায়াযুদ্ধ’ চলাকালীনই হোমগার্ড নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে পুলিশ সুপারের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাতারাতি তাঁকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে বদলি করা হয় এসএসএফের কম্যান্ড্যান্ট-পদে। এ দিন তৃণমূল নেতা হুমায়ুনকে দল থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি আইপিএস হুমায়ুনকে ব্যারাকপুর কমিশনারেটে ডিসি (সদর)-র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ফিরিয়ে দিল সরকার।
মির্জা অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, বর্ধমানে তাঁর তিন বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই এই বদলির মধ্যে অন্য কিছু খোঁজা ঠিক নয়। অথচ মাস পাঁচেক আগে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ এবং পরবর্তী কালে যখন বাজেয়াপ্ত বিস্ফোরক নষ্টের অভিযোগ উঠেছিল বর্ধমান পুলিশের বিরুদ্ধে, মির্জার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি নবান্ন। উল্টে তাঁর কাজের জন্য দরাজ শংসাপত্র দিয়েছিল প্রশাসন। এ-হেন পুলিশ সুপারের বদলি ঘিরে তাই এখন যারপরনাই কৌতূহল পুলিশমহলে। যদিও সরকারের তরফে এ দিনের বদলিকে ‘রুটিনমাফিক’ সিদ্ধান্ত আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, বর্ধমানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালকে। আর জলপাইগুড়িতে পাঠানো হয়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (ট্রাফিক) আভারু রবীন্দ্রনাথকে। ব্যারাকপুরের ওই পদে গেলেন ইএফআরের দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ড্যান্ট রাঠৌর অমিতকুমার ভারত। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার কল্লোল গনাইকে দেওয়া হয়েছে ডিআইজি (মুর্শিদাবাদ) রেঞ্জের দায়িত্ব।