ভাইচুংকে সমর্থনের প্রশ্নে অনিশ্চিত মোর্চা

ভাইচুং ভুটিয়া ভোটের ময়দানে নেমে পড়ায় রক্ষণ সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজতে যেন হিমশিম খাচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দলের অন্দরে ঘনঘন আলোচনা, বৈঠক, টেলি কনফারেন্স শুরু হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থীকে তারা সমর্থন করবেন কি না, সে বিষয়ে রাত পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি মোর্চা।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ১০:০১
Share:

দার্জিলিঙের লেবং স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভাইচুং।—ফাইল চিত্র।

ভাইচুং ভুটিয়া ভোটের ময়দানে নেমে পড়ায় রক্ষণ সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজতে যেন হিমশিম খাচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দলের অন্দরে ঘনঘন আলোচনা, বৈঠক, টেলি কনফারেন্স শুরু হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থীকে তারা সমর্থন করবেন কি না, সে বিষয়ে রাত পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি মোর্চা। যদিও মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা একান্তে স্বীকার করেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে ফের বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য দু-একদিনের মধ্যেই মোর্চা সভাপতি দিল্লিতে যাবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “তৃণমূল কাকে প্রার্থী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা নিজেরা প্রার্থী দেব, না কি কাউকে সমর্থন করব সেটা এখনও ঠিক হয়নি। আলোচনা চলছে। আরও আলোচনা হবে। দিল্লিতেও যাওয়ার কথা রয়েছে। যথা সময়ে দলের সভাপতি সিদ্ধান্ত জানাবেন।”

Advertisement

তবে এ দিনই মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ একটি অনুষ্ঠানে ফের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করার অভিযোগ করেছেন। যা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, পাহাড়ে তৃণমূলের প্রার্থীকে মেনে নিতে তাঁদের বাধা রয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি মোর্চা-তৃণমূল ফের কাছাকাছি আসায় দু-দল সহমতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেবে কি না, তা নিয়েই কৌতুহল ছিল। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষ থেকে গোড়া থেকেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, ঘাসফুল প্রতীকেই দার্জিলিং লোকসভা আসনে প্রার্থীকে লড়তে হবে। তা নিয়ে মোর্চা নেতাদের অনেকের আপত্তি ছিল। নরমপন্থীরা আরও আলোচনার পক্ষে মত দেন। কয়েক দফায় কথা চালাচালি হলেও তৃণমূল-মোর্চা বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়নি। তবে তৃণমূলের অন্দরের খবর, বিষয়টি দলনেত্রী আদপেই ঝুলিয়ে রাখতে চাননি। সে জন্যই মোর্চার সম্মতির অপেক্ষা না করে ভাইচুংয়ের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “ভাইচুং ভাল প্রার্থী। আমরা আশা করব, পাহাড়-সমতলের সকলেই ওকে সমর্থন করবেন।” কিন্তু মোর্চা যে ফের বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছে, সে খবর পৌঁছেছে তৃণমূলের কাছেও। এ দিন গুরুঙ্গ যে রাজ্যের সমালোচনা করেছেন, সে কথাও তাঁদের কানে গিয়েছে। তবে মুকুলবাবুর বক্তব্য, “এ নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই।

Advertisement

সময়ই যা বলার বলবে।”

বছর দু’য়েক আগেও পাহাড়ে তৃণমূলের কার্যত শক্তি ছিল না। তা হলে এখন তৃণমূল একক ভাবে প্রার্থী দেওয়ার পথে হাঁটল কেন? দলীয় সূত্রের দাবি, জিটিএ চুক্তির পরে তৃণমূল নেত্রী আড়াই বছরে অন্তত ২২ বার পাহাড়ে গিয়ে দলের জনসমর্থনের ভিত আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়িয়েছেন। গত জুলাইয়ে মোর্চা পাহাড় অচলের আন্দোলনে নামলে কড়া হাতে তা সামাল দিয়ে পাহাড়কে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে সেই ভিত আরও মজবুত করেছেন। লেপচা ও তামাঙ্গদের জন্য বোর্ড গড়ে দু’টি সম্প্রদায়ের আস্থাভাজন হয়েছেন। সম্প্রতি তামাঙ্গরা খোলাখুলি তৃণমূলকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে। পাহাড়ের ৬টি সম্প্রদায়কে জনজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করাতেও তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলে দাবি দলের। তাই তৃণমূলের পাহাড়ের নেতাদের অনেকেই চেয়েছিলেন, দলেরই কাউকে প্রার্থী করতে।

তবে দার্জিলিং আসন মানে শুধু পাহাড় নয়। রয়েছে সমতলের শিলিগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরও। ফলে, তৃণমূল এমন কাউকে প্রার্থী করার উপরে জোর দেয়, যিনি পাহাড়-সমতল, দুই এলাকাতেই গ্রহণযোগ্য। সেই কারণেই আর পাঁচটা নাম টপকে ভাইচুংকে মনোনীত করেন তৃণমূল নেত্রী।

‘অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ ভাইচুং প্রার্থী হওয়ায় সতর্ক বামেরাও। এক সময়ে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অনুষ্ঠানেও ভাইচুংকে দেখা গিয়েছে। সিপিএমের দার্জিলিং আসনের প্রার্থী সমন পাঠকের মন্তব্য, “ভাইচুংকে নিয়ে কিছু বলব না। মানুষের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে লড়ছি।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “সরকারে থাকার সময়ে ওঁকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছি।

এখন তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছে।

কিছু বলার নেই।” তাঁর সংযোজন, “এটুকু বলতে পারি, দার্জিলিঙের বাসিন্দাদের যে আবেগ ও চাহিদা, তা পূরণ করা ভাইচুংয়ের মতো অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পক্ষে সম্ভব হবে না।”

রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে ছিলই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আসতে হবে ভাবেননি ভাইচুং নিজেও। এ দিন প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই ভোটে দাঁড়ালাম।” তাঁর কথায়, “দার্জিলিঙে অনেক কিছু করার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে অনেক কাজ করতে চাইছেন। আমিও নির্বাচিত হলে সেখানে পরিশ্রম করব।” এ দিনই সকালে সরকারি ভাবে তাঁকে জানানো হয় যে তিনি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। এর আগে ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন হাওড়া কেন্দ্র থেকে। ভাইচুং নির্বাচিত হলে দু’জন ফুটবলার সংসদে থাকবেন।

দেখার, ফুটবল মাঠে সফল ভাইচুং রাজনীতির ময়দানে সফল হন কি না।

(সহ প্রতিবেদন: রতন চক্রবর্তী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন