ভুল রিপোর্ট দিলে সাজা, হুঁশিয়ারি রাকেশের

ভোটে যা ঘটছে, তার নির্ভুল ও নিরপেক্ষ রিপোর্ট দিন। সেই রিপোর্ট নিচুতলা থেকে যাচাই করে দেখবে নির্বাচন কমিশন। যদি দেখা যায়, ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট দিয়েছেন, তা হলে শাস্তির জন্য তৈরি থাকুন। স্মরণকালে কার্যত নজিরবিহীন এতটাই কড়া ভাষায় রাজ্যের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সতর্ক করে দিলেন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২২
Share:

কৃষ্ণনগরে সুধীরকুমার রাকেশ। রবিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

ভোটে যা ঘটছে, তার নির্ভুল ও নিরপেক্ষ রিপোর্ট দিন। সেই রিপোর্ট নিচুতলা থেকে যাচাই করে দেখবে নির্বাচন কমিশন। যদি দেখা যায়, ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট দিয়েছেন, তা হলে শাস্তির জন্য তৈরি থাকুন। স্মরণকালে কার্যত নজিরবিহীন এতটাই কড়া ভাষায় রাজ্যের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সতর্ক করে দিলেন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ।

Advertisement

আর দিন শেষ হওয়ার আগেই সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা ঘিরে চোখে পড়ার মতো দ্রুততায় নড়ে বসল প্রশাসন।

সিউড়িতে সিপিএম কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা পাল্টে সরাসরি খুনের মামলা দায়ের করল পুলিশ। বীরভূমের জেলাশাসকও (যিনি ইতিমধ্যেই একটি রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন) সেই মর্মে নতুন করে রিপোর্ট পাঠালেন কমিশনকে।

Advertisement

বীরভূমেরই লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে শো-কজের চিঠি ধরাল জেলা প্রশাসন। যে মনিরুল শনিবার সাঁইথিয়ার রুদ্রনগরে একটি কর্মিসভায় বলেছিলেন, “একটাও ভোট সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে দিতে দেবেন না। বিজেপির একটি লোককেও ভোট দিতে দেবেন না, এই প্রতিশ্রুতি দিন। এই দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।”

বর্ধমান জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শনিবার আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের রোড-শোয়ের সঙ্গে ছিল মোটরবাইক মিছিল। এ দিন শো-কজ নোটিস পেয়ে গিয়েছেন তাঁরাও।

বিশেষ পর্যবেক্ষকের হুমকির ঠেলা খেয়েই কি এই তৎপরতা? দুয়ে দুয়ে চার করে নিচ্ছেন অনেকেই।

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে কমিশন যে এ বার আদাজল খেয়ে লেগেছে, সে কথা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা ইস্তক হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পতের নেতৃত্বাধীন কমিশনের ফুল বেঞ্চ এ মাসের গোড়ায় কলকাতা ঘুরে যাওয়ার পরেই রাজ্যের এক জেলাশাসক, দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং পাঁচ পুলিশ সুপারকে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে গিয়েও সেই বদলি মেনে নিতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এর পর প্রথম দফার নির্বাচনের আগে-আগেই রাজ্যের জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে বিহারের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী অফিসার রাকেশকে পাঠায় কমিশন।

রাকেশ তাঁর জেলা সফরের প্রথম পর্যায়ে এ দিন নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ সফরে যান। সেখানকার জেলাশাসক ও এসপি-র সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “আপনারা ভাববেন না যে, আপনাদের রিপোর্টকেই আমরা সত্যি বলে মেনে নেব। আমরা নিজে থেকে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলব। প্রতিটি রিপোর্ট খতিয়ে দেখব। কোনও রিপোর্ট ভুল কিংবা পক্ষপাতদুষ্ট মনে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা শাসক ও এসপি-দের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে।”

শনিবারই জেলাশাসক ও এসপি-দের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন রাকেশ। সেখানে তিনি বলছিলেন, কমিশনের কাছে হলফনামা দিয়ে জেলাশাসকদের জানাতে হবে যে, প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী যাওয়ার খবর তাঁরা নিয়েছেন। তার পরেও বাহিনী নিয়ে কোনও অভিযোগ উঠলে কমিশন যে কঠোর অবস্থান নেবে, সে কথাও জানিয়েছিলেন। বস্তুত, সেই বার্তাই এ দিন আরও চাঁছাছোলা ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন রাকেশ। কী ভাবে জেলাশাসক এবং এসপি-রা ত্রুটিহীন রিপোর্ট দেবেন, তার পাঠ এ দিন প্রশাসনিক কর্তাদের দিয়েছেন তিনি।

সেই সঙ্গে বলেছেন, “বিডিও বা সেক্টর অফিসারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠান। এখন থেকে রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট বিডিও বা আধিকারিকদের নাম ও নির্দিষ্ট বক্তব্য উল্লেখ করতে হবে, যাতে প্রয়োজনে রিপোর্টের সত্যাসত্য জানতে সরাসরি ওই সব অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলতে পারে কমিশন।”

এই পরিস্থিতিতে কর্তারা যেমন সক্রিয় হয়েছেন, তেমনই লক্ষ্যণীয় ভাবে সুর নরম করতে দেখা গিয়েছে ‘ডাকাবুকো’ বলে পরিচিত তৃণমূল বিধায়ক মনিরুলকে। রাতারাতি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে তিনি বলেছেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকেদের বোঝাতে হবে, যাতে তাঁরা সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে ভোট না দেন।”

তা সত্ত্বেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে শো-কজের উত্তর দিতে হবে বলে সাঁইথিয়া ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আনন্দ সরকার জানিয়েছেন। দোলা সেনের সঙ্গে বাইক মিছিল প্রসঙ্গে কলকাতায় কমিশনের ওএসডি অমিত রায়চৌধুরী বলেন, “ওই রোড শোয়ের আবেদনকারী ছিলেন পাপ্পু উপাধ্যায় নামে জনৈক ব্যক্তি। তাঁর কাছে শো-কজ নোটিস পাঠিয়েছেন আসানসোলের এআরও।”

তবে নির্বাচন কমিশন ও বিরোধী দলের নেতা-প্রার্থীদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের বিষয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা দিল্লিই নেবে বলে এ দিন জানিয়েছেন কমিশনের রাজ্যের কর্তারা।

তাঁরা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমরা চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। দিল্লিতে সব কিছুই সিডি করে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই আমরা উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।” ভাষা প্রয়োগ নিয়ে মমতাকে এ দিন একহাত নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যে ধরনের ভাষায় কথা বলছেন, তা মার্জিত রুচির পরিচয় দিচ্ছে না। নীতির লড়াই থেকে সরে গিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। আমরা পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় যাচ্ছি না। নীতির লড়াই করতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন