ভালবাসার টানেই সঙ্গে টলিউড, দাবি মমতার

তারকা প্রার্থী ও প্রচারে তারকাদের উপস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব তারকাদের পাশে বসিয়েই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।লোকসভা নির্বাচনে একাধিক কেন্দ্রে রুপোলি পর্দার তারকাদের প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। দলের প্রচারেও হাজির থাকছেন এক ঝাঁক তারা। এ নিয়ে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

বেলপাহাড়িতে পরিচালক রাজ চক্রবর্তী ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

তারকা প্রার্থী ও প্রচারে তারকাদের উপস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব তারকাদের পাশে বসিয়েই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে একাধিক কেন্দ্রে রুপোলি পর্দার তারকাদের প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। দলের প্রচারেও হাজির থাকছেন এক ঝাঁক তারা। এ নিয়ে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। শুক্রবার তারই পাল্টা হিসেবে মেদিনীপুরে অভিনেত্রী প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে সভা করতে এসে মমতা বললেন, “টলিউডকে আমরা কিনে নিইনি। আমাদের অত টাকা নেই। তবে ওঁদের পাশে থেকেছি। ভালবাসার টানেই ওঁরা আমাদের সঙ্গে এসেছেন।”

শুক্রবার বিকেলে মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট মাঠে তখন হাজার আটেকের জমায়েত। মঞ্চে হাজির তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায় এবং দেব। সঙ্গী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ ও পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। মমতার বক্তব্যকে সমর্থন করে রুদ্রনীল বলেন, “অনেক অপপ্রচার হয়েছে। টলিউডকে কখনও কেনা যায় না। ভাল থাকার দায় থেকেই এখানে জড়ো হয়েছি। কারও নির্দেশে বা কোনও প্রত্যাশা নিয়ে আসিনি।” বামেদের বিঁধে রুদ্রনীল আরও বলেন, “এতদিন করছি-করবো, দিচ্ছি-দেবো বলেই কাটিয়ে দিয়েছে। তাই একটা মুখ খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। এ বার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে) পেয়েছি।” এ দিন বেলপাহাড়ির সভায় দেবও বলেন, “অনেকে বলছে, টিএমসি আসলে টলিউড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। শুনে রাখো বস্, টাকা দিয়ে দেবকে কেনা যায় না। ভালবাসা দিয়ে মন জেতা যায়। দিদি সেটাই করেছে।”

Advertisement

সম্প্রতি তৃণমূলের তারকা প্রচারকে কটাক্ষ করে ট্যুইটারে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, “মমতার তারকা প্রচার দেখে মনে হচ্ছে টিএমসি মানে টলিউড ম্যানেজমেন্ট কংগ্রেস।”

এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরে মমতা তিনটি সভা করেন। বেলপাহাড়ি, মেদিনীপুর এবং খড়্গপুর, তিনটি সভাতেই হাজির ছিলেন দেব, রুদ্রনীল এবং রাজ। খড়্গপুরের সভায় ফুটবল তারকা ভাইচুং ভুটিয়াও ছিলেন। তিনটি সভাতেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার

মতো। বেলপাহাড়িতে তো হাজার তিরিশেকের জমায়েত হয়। তারকা প্রার্থী প্রসঙ্গে এ দিন বিজেপিকেও বেঁধেন মুখ্যমন্ত্রী। মেদিনীপুরে মমতা বলেন, “নিজেরা মুম্বই, দিল্লি থেকে লোক ধরে এনেছে। টলিউডকেও কেনার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। সিপিএম তো পারবেই না। যা ভালবাসা দিয়ে হয়নি, টাকা দিয়ে হবে না।” বাম আমলে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য কিছুই করা হয়নি অভিযোগ করে তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, “কখনও ওদের জন্য কাজ করেছিল? উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেনদের কোনও দিন সম্মান দিয়েছিল? ক্ষুদিরামকে পর্যন্ত অসম্মান করেছিল। এক বারও কি দেবকে, মুনমুনকে গিয়ে বলেছিল, ওদের হয়ে প্রার্থী হতে! আমি ওদের কথা ভাবি। তাই ভালবেসে এসেছে।”

লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রচারে টলিউডের বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই দেখা গিয়েছে। তিন তারকা প্রার্থী দেব, মুনমুন সেন এবং সন্ধ্যা রায় তো থাকছেনই। একের পর এক সভা করছেন তারকা সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তীও। এ ছাড়াও জেলায় জেলায় প্রচারে হিরণ, সোহম, মিমি, শুভশ্রী, রিয়া, রাইমার মতো তারকারা। তাঁদের দেখতে সভাগুলোয় ভিড় হচ্ছে যথেষ্ট। যা দেখে সিপিএম-সহ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, এই ভিড় কি মমতার টানে, নাকি তারকাদের দেখতে!

বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে চড়া গরমের মধ্যেই বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে ছিল গিজগিজে ভিড়। মঞ্চে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তখন তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছিলেন টলিউডের তারকারা। শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, হিরণ, রুদ্রনীল, ‘বাহা’ খ্যাত রনিতা দাসকে কাছ থেকে দেখার আনন্দে ঘণ্টা দুয়েকের বেশি সময় মেতেছিল বাঁকুড়া। পুলিশের হিসেব বলছে, স্টেডিয়ামে তখন অন্তত ৩০ হাজার দর্শক ছিল।

বিকেল প্রায় পাঁচটায় মমতা যখন মঞ্চে উঠলেন, তখন রোদ মরে এসেছে। মিনিট খানেক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তারকারা মঞ্চ ছাড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ভিড়ও পাতলা হতে শুরু করল। মমতা যখন মঞ্চ ছাড়ছেন, পুলিশের হিসেব জানাচ্ছে, সেই সময় সভায় ভিড় ছিল মেরেকেটে ১০ হাজার। কেন এমনটা হল তা নিয়ে শুক্রবারও দিনভর চলল জল্পনা। বাঁকুড়ার বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের বাম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়ার মতে, “মমতার আর জনপ্রিয়তা নেই। তাই তারকাদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারে আসছেন।” যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র দাবি, “শুধু ওই তারকাদের দেখতেই লোক এসেছিল, তা নয়। সবাই তৃণমূলের টানেই এসেছিল। অনেকে দূরদূরান্ত থেকেও এসেছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন